ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একজন ‘ক্ষণজন্মা’ নূরজাহান বেগম

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৬
একজন ‘ক্ষণজন্মা’ নূরজাহান বেগম সংগৃহীত

তারাশঙ্করের কবি নিতাইয়ের আক্ষেপ ছিলো, ‘জীবন এত ছোট কেনে?’ যদিও বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের গড় আয়ুর বাস্তবতায় ৯১ বছর অনেক বেশী। কিন্তু নূরজাহান বেগমের মতো মহীরুহদের জন্য এ বড় অল্প সময়।

মনে হয়, আরও কতো কী দেওয়ার ছিলো তার, জাতির আরও কতো কী পাওয়ার ছিলো!

জন্মেছিলেন ১৯২৫ সালের ০৪ জুন চাঁদপুরের চালিতাতলী গ্রামে। বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত ও সাহিত্যিক নূরজাহান বেগমের জীবনঘড়ি থেমে গেলো চলতি বছরের সোমবার (২৩ মে)। দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শেষ দিকে আইসিইউ-তে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখ‍া হয়। শেষমেষ পার্থিব মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমালেন অন্যভুবনে।

সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের আদরের মেয়ে নূরীর বেড়ে ওঠার শুরুই দুর্ঘটনা দিয়ে। গ্রামে থাকার সময় খালের পানিতে ডুবে প্রায় মরতেই বসেছিলেন। পরবর্তীতে সমাজের জন্যও দেখা দেন ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে। তিরিশের দশকে মুসলিম পরিবারের মেয়েদের পড়াশোনা করাটা তো একরকম দুর্ঘটনাই বটে। সে দুর্ঘটনায় তিনিই আবার বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন সমাজকে।

নূরীর শৈশব কাটে কলকাতায়। ১৯২৯ সালে সাড়ে তিন বছর বয়সে মা আর মামা ইয়াকুব আলী শেখের সঙ্গে তিনি কলকাতায় বাবার বাসায় চলে আসেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন বেগম রোকেয়ার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণি থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত তিনি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করে ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর আইএ ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। তার আইএ-তে পড়ার বিষয় ছিল দর্শন, ইতিহাস ও ভূগোল। এই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৬ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

লেখালেখির প্রতি বরাবরই ছিলো নূরীর ঝোঁক। আর হবেই বা না কেন! সেসময় সওগাত পত্রিকা অফিসে নিয়মিত সাহিত্য মজলিসে যোগ দিতেন- কাজী নজরুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, হবীবুল্লাহ বাহার, ইব্রাহীম খাঁ, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ। এই সাহিত্য মজলিসের নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন পরবর্তীকালের ‘বেগম’ সম্পাদক।

বেগম পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই। সেসময় নূরজাহান বেগম বিএ শ্রেণিতে পড়তেন। বাবা নাসিরুদ্দীন প্রতিষ্ঠিত বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল। প্রথম চার মাস সম্পাদক হিসেবে এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নূরজাহান বেগমের মতো যারা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়তেন, তারা সবাই মিলে বেগম’র জন্য কাজ করতেন। বেগমের শুরু থেকে নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।

বাংলা শিশুসাহিতের অন্যতম নক্ষত্র রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর ১৯৫০ সালে তারা বেগম পত্রিকাসহ বাংলাদেশে চলে আসেন। ঢাকায় এসে নারীদের ছবি আঁকতে ও লেখার জন্য উৎসাহ দিতেন নূরজাহান বেগম। প্রায় ৬৩ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে তার প্রতিষ্ঠিত বেগম পত্রিকা। নারী জাগরণ, নতুন লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য ও সৃজনশীলতায় নারীকে উৎসাহী করাই ছিলো মূল লক্ষ্য। দীর্ঘ এতো বছরের পরও বেগম’র উদ্দেশ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বরেণ্য এ সাহিত্যিক-সম্পাদক নারীর অবস্থার উন্নয়ন ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য জন্য পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার।

মহাজাগতিক নিয়মে না ফেরার দেশে তাকে যেতে দিতে না চাইলেও যেতে তো দিতেই হয়। ব্যক্তিজীবনে দুই মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যাওয়া এ মহাপ্রাণ বেঁচে থাকবেন তার কর্মে-আদর্শে। ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!

বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৬
এসএনএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।