ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আপনি চামড়াকে বেশি পুরু হতে দিতে পারেন না | আল পাচিনো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৬
আপনি চামড়াকে বেশি পুরু হতে দিতে পারেন না | আল পাচিনো

মার্কিন মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা আল পাচিনো। পুরো নাম আলফ্রেডো জেমস আল পাচিনো।

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার। ১৯৬৮ সালে টেলিভিশন সিরিজ এন.ওয়াই.পি.ডি-তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ছোট পর্দায় তার অভিষেক। এর পরের বছর ১৯৬৯ সালে ‘মি. নাটালি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আসন গড়তে শুরু করেন বড় পর্দায়। ‘গডফাদার’ ও ‘ডগ ডে আফটারনুন’ চলচ্চিত্রখ্যাত পাচিনোকে মার্কিন চলচ্চিত্র ইতিহাসের হাতেগোনা শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম বলে চিহ্নিত করা হয়।  

আল পাচিনোর এ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক একটি ইন্টারভিউ পোর্টালে। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য এটি ভাষান্তর করেছেন সানজিদা সামরিন।

জনাব পাচিনো, আপনি কী করে নিজের কৃতিত্বের ওজনকে রক্ষা করেন?
আমি জানি না। আপনি নিশ্চয়ই এভাবে চিন্তা করেন না। আপনি নিজের কাজের অংশগুলোকে কৃতিত্ব হিসেবে ভাবেন না। আপনি ভাবেন, একটি পেইন্টিং তৈরিতে আপনার ভূমিকা কী। আমি বলতে চাচ্ছি বা আপনিই কল্পনা করুন, একজন অভিনেতা বলছেন, ‍‘আমি আর বেশি দূর যেতে চাই না কারণ আমার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমার চেয়ে বেশি ভালো কাজ আমি করতে পারবো না, সম্ভবত আমার এখন এ জায়গা থেকে বিদায় নেওয়া উচিত’। আমরা যেটাকে বলি আত্মসন্তুষ্টির পর বিশ্রাম নেওয়া। আমি যে জন্য সব করছি! একটি কাজে আত্মসন্তুষ্টি পেয়ে গেলে অন্য কাজ শুরু করা যায়। কারণ, আপনি জানেন, আত্মসন্তুষ্টি অন্য পেশা নিতে একটি বড় নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু কিছু শক্ত কারণে আমি পেছনে ফিরে যেতে চাই ও সেই কাজগুলো করতে চাই।

আপনি কি নতুন কিছু করতে চেষ্টা করতে চান?
হ্যাঁ, যদি এমন কিছু খুঁজে পাই যেখানে আমি কন্ট্রিবিউট করতে পারি ও তার মধ্যে আমাকে খুঁজে পাই, তাহলে করবো। শেক্সপিয়ার যেমন প্রকৃতির প্রতিবিম্বের কথা বলেছেন। এমনভাবে ধারণ করো যেনো নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়। আমার অনুভূতি রয়েছে এমন কিছু করা হচ্ছে, নিজের মেধার চর্চার পথ তৈরি করা ও এটি চরিত্রের ভূমিকার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরিতে সাহায্য করে। আমি এমনটা করতেই চেষ্টা করবো। আমি ‘অবসর নেওয়া’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাচ্ছি না কারণ, একজন শিল্পীর জন্য এ শব্দটি অদ্ভুত।

শিল্পী ক্রিস্টো বলেন, শিল্পীরা অবসরে যান না, তারা কেবল মারা যান...
কিন্তু এমন অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা অবসরে যান। যেমন, ফিলিপ রথ। আমি তার বই ‘দ্য হাম্বলিংয়’র একটি সিনেমা করেছি। তিনি লেখা ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু তিনি এতে ভীষণ খুশি! এমনটাই তার অভিব্যক্তি। তিনি তো অবসরে গেছেন। ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারি, এটা একটা রুটিনে বাঁধা জীবন। স্ক্রিপ্ট লিখছেন, পড়ছেন, শিখছেন। বারবার একই প্রক্রিয়া। আবার পরিচালকরাও আপনাকে ব্যবহার করবে। ফলে আপনি অন্য কিছু করার পথ খুঁজবেন।

কিন্তু নিশ্চিতভাবে সব পরিচালকরাই আপনাকে চান...
দ্য গডফাদারের আগে, আমাকে কেউই চায়নি। কিন্তু ফ্রান্সিস আমাকে চাইতো। সে আমাকে চাইতো, কিন্তু আমি এটা বুঝতাম না। স্টুডিও আমাকে চাইতো না, কেউ চাইতো না- কেউ আমাকে চিনতো না। আমার ধারণা, যখন একজন পরিচালক আমার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন তখন নিজস্ব প্রবণতা থেকেই আমি পিছিয়ে যাওয়ার বদলে নির্ভর করে সামনের দিকে ঝুঁকেছি। অনেকটা, আপনি এমন একটি ঝুঁকির জন্য প্রস্তুত যা আপনি নিতে পারবেন, একটি চ্যালেঞ্জ। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আপনি পড়ে যাবেন ও উঠে দাঁড়িয়ে আবার চলতে শুরু করবেন।  

কেন?
যখন আপনি কাজটি দীর্ঘ সময় ধরে করবেন তখন নিজেকে খোলাখুলিভাবে উপস্থাপন করতে চাইবেন। আপনি কাজ বন্ধ করবেন না কারণ, ঝুঁকি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি আপনার চামড়াকে খুব বেশি পুরু হতে দিতে পারেন না। ব্রেখট যেমন মাত্র ২২ বছর বয়সে তার সেরা নাটক ইন দ্য জাঙ্গল অব সিটিজে লিখেছেন, পৃথিবীতে মানুষের চামড়া খুব পাতলা হয়। এরপর তিনি এটিকে পুরু থেকে পুরু হতে দেখেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বিভিন্নভাবে বিদ্ধ হয়ে সংবেদন ও অনুভূতিহীন হওয়া পর্যন্ত সময়কে দেখেছেন।  

আপনার এমন কোনো সিনেমা নিয়ে কি আপনার আক্ষেপ রয়েছে যাতে আপনার অনেক আশা ছিলো কিন্তু তা নিজস্ব সীমাবদ্ধতার সমীপে এসে আটকে গেছে?
আমি কোনোকিছু নিয়েই আক্ষেপ করি না। যদি এমন কিছু থাকে তবে আমি এটিকে আক্ষেপ নয়, বলবো ভুল। আমি ভুল সিনেমা বাছাই করেছি বা আমি চরিত্রটিকে অনুধাবন করতে পারিনি। কিন্তু আপনি যাই করুন না কেন তার সব আপনারই এক-একটি অংশ। আর এসব থেকে আপনি কিছু না কিছু পাবেন। আমি বলতে চাচ্ছি, এ ধরনের পরিস্থিতি বা অবস্থানে থাকার উত্তেজনা বা অনুভূতি স্মৃতির চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এগুলো জীবনকে সংবাদ দেয়। তাই আমি কোনো কিছু নিয়েই আক্ষেপ করি না।  

স্টার ওয়ার্স সিনেমাও কি নিচের দিকে বাঁক নেয়নি?
স্টার ওয়ার্স। হ্যাঁ, এটিই ছিলো আমার প্রথম বড় ভুল।  

আর টেরেন্স মালিকের স্ক্রিপ্ট?
হ্যাঁ, অনেকদিন আগে টেরি আমাকে একটি সিনেমায় নিতে চেয়েছিলেন, আমিও আগ্রহী ছিলাম। এটি আমার অনেকগুলো ভুলের মধ্যে অন্যতম ছিলো। বলা যায়, তারা ছিলো ভুলের জাদুঘর! সবগুলো স্ক্রিপ্টই আমি বাতিল করেছি!

আপনি কি বলবেন যে, আগের তুলনায় এখন অভিনয় করার জন্য আপনার ভিন্ন কোনো পদ্ধতি রয়েছে?
হ্যাঁ, আমি কল্পনা করতাম আমার ভিন্নপদ্ধতি রয়েছে। নয়তো আমি এতো দীর্ঘসময় ধরে চলতে পারতাম না। আমরা কেবল আমাদের চক্রের মধ্য দিয়ে চলি, যেভাবে আমরা বেঁচে আছি। আর আমার ধারণা, বয়স একটা ব্যাপার। আমরা আছি এবং আমরা নেই। যখনই হোক আমরা চলে যাই, সময়টা আমাদের কারোরই জানা নেই। সুতরাং আমরা একটি চক্রের মধ্যে চলি।  

আপনি কি আপনার জীবনচক্রকে উপভোগ করেন?
একটি গ্লাসের অর্ধেক পানি, অর্ধেক খালি। এটিকে আপনি কীভাবে দেখেন? এটি আমাদের সবার জন্যই সত্যি। কিছুদিন আমি সত্যিই উপভোগ করি আবার কিছুদিন করি না। আমি যদি পেইন্টার হতাম তাহলে কেউই বয়স সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করতো না। কারণ, আমি পেইন্ট করি! আমি শিল্পী! যে নারীর সঙ্গে আমি ছিলাম, তিনি আমাকে বলতেন- তুমি যাই করো না কেন তাদের বলো না, তুমি একজন শিল্পী। আমি বলেছিলাম- আমি জানি, আমি বলি না। আমি বিষয়টি বহু বছর এড়িয়ে গেছি। এবার আসল কথায় আসি, আমি মনে করি আমি একজন শিল্পী। আশা করি, আমি একজন শিল্পী। কিন্তু যদি আমি পেইন্টার হতাম তাহলে প্রশ্নটা ভিন্ন হতো।  

কিন্তু সব অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একই সমস্যা।
কারণ, চাক্ষুষ জিনিস ও ইমেজ। কারণ, ইমেজের সঙ্গে আমাদের সব কারবার। এমনকি আমরা যেসব চরিত্রে অভিনয় করি তাতেও ইমেজের ব্যাপার থাকে। ফলে এসব কারণেই আপনি শিল্পী একথা বলার ক্ষেত্রে একটা দাম্ভিকতা রয়েছে, সর্বোপরি আপনি একজন চিত্রতারকা। আবার এটি ভুল ও দাম্ভিকতা দু’টোই- আমি একজন চিত্রতারকা! তা আপনি কী বলতে চান?

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৬
এসএমএন/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।