ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কিলোমাঞ্জারোর তুষার | আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (পর্ব-৩)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৬
কিলোমাঞ্জারোর তুষার | আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (পর্ব-৩)

[১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারজয়ী আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তার বিখ্যাত ‘কিলোমাঞ্জারোর তুষার’ গল্পটি লিখেছিলেন ১৯৩৮ সালে। এটিকে বিশ্বের সর্বেকালের সেরা গল্পের তালিকায় বেশ ওপরের দিকেই ঠাঁই দেন সাহিত্যবোদ্ধারা।

গল্পটিতে ১৯৩০-এর দশকে হেমিংওয়ের লেখক-জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন প্রতিফলিত হয়েছে।

এতে তিনি মন্তব্য করেছেন, রাজনীতি, নারী, সুরা, অর্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমেরিকার লেখকদের নষ্ট করে দিচ্ছে। ধনী লোকজনরে সঙ্গে মাখামাখি তার লেখকসত্তার ক্ষতি করছে। এই বোধ স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে গল্পটিতে। ব্যাপকার্থে, গল্পটিকে একজন লেখকের হারানো প্রজন্মের স্মৃতিচারণের উদাহরণ হিসেবে নেওয়াই সঙ্গত। যাদের ছিলো বিশ্বযুদ্ধ ও স্পেনের যুদ্ধ-অভিজ্ঞতা, যেসব যুদ্ধ তাদের মনে নৈতিকতা ও দর্শন নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একের পর এক স্মৃতিচারণে গল্পের নায়ক স্মরণ করতে থাকে বুলগেরিয়া ও কনস্টান্টিনোপলের পর্ববতমালা এবং একই সঙ্গে প্যারিসের একাকিত্বের দুঃসহ অনুভূতি আর ভেতরটা হঠাৎ করেই শূন্য হয়ে ওঠা।
খাটে শুয়ে শুয়ে গল্পের নায়ক সর্তক হয়ে ওঠে, যখন তার অস্থায়ী তাঁবুর চারপাশে শকুন হাঁটতে দেখে। ছায়ার ভেতর একটি হায়নোর আনাগোনা টের পায়। জেগে ওঠার আগেই মরে যাবো এটা জেনেই সে ঘুমাতে যায় এবং স্বপ্ন দেখে- একটি উদ্ধার বিমান তাকে তুষারাবৃত কিলোমাঞ্জারোর চূড়ায় নিয়ে গেছে। গোটা আফ্রিকায় যেটি সবচেয়ে উঁচু পর্বত। তার স্ত্রীরও স্বপ্নদেখা ঘুম ভেঙে যায় হায়েনার বিদঘুটে শব্দে। তাঁবুর বাইরে হায়েনাটা কেঁদে ওঠে অদ্ভূতভাবে। সে কান্নাটা মানুষের মতো। ]

কিলোমাঞ্জারোর তুষার
মূল: আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
ভাষান্তর: মনজুর শামস

পর্ব-৩
এখন সন্ধ্যা। সে ঘুমাচ্ছে। সূর্যটা পাহাড়ের পেছনে চলে গেছে এবং সমতলের পুরোটা জুড়েই এখন ছায়া। তাঁবুর খুব কাছেপিঠেই ছোট ছোট জন্তু-জানোয়ার খাওয়া-দাওয়া সেরে নিচ্ছিলো। জেগে উঠে সে দেখতে পেলেঅ এগুলো চকিত চাউনিতে লেজ নাড়তে নাড়তে জঙ্গল থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। পাখিগুলো (শকুনগুলো) এখন আর মাটিতে অপেক্ষা করে নেই। একটি গাছে গিয়ে ঝুলে বসে গেছে। গাছটিতে এখন অনেক পাখি। এগুলোর ভারে গাছের ডালগুলো নুয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগত ভৃত্য বালকটি তার বিছানার পাশে বসে ছিল।
‘মেমসাহেব শিকারে গেছেন’, ভৃত্য বালকটি বললো। ‘বুয়ানার কি কিছু লাগবে?’
‘কিছুই লাগবে না। ’
নারী এক টুকরো মাংস শিকারে গেছে। যেহেতু সে জানে, হ্যারি এই খেলাটা দেখতে কত্ত ভালবাসে তাই সে অনেক দূরে চলে গেছে। যাতে হ্যারি তার শিকারকর্ম দেখতে না পায়। এই ছোট্ট সমতল আশ্রয়টিতে সে কোনো বিরক্তির কারণ ঘটিয়ে না ফেলে। তার লক্ষ্মীমন্ত স্ত্রীটি খুবই বিবেচক হ্যারি ভাবলো। কোনোকিছু সম্পর্কে সে যা-ই জেনে থাকুক না কেন, বা যা কিছুই সে পড়ে থাকুক না কেন, বা যা-কিছুই যে কখনো শুনে থাকুক না কেন সেই সবকিছু নিয়েই সে খুব গভীরভাবে ভাবে।

এটি তো আর ওই নারীর কোনো দোষ নয়, যে হ্যারি যখন তার কাছে গিয়েছিলো ততদিনে হ্যারি ফুরিয়ে গেছে! একজন নারী কী করে জানতে পারবে যে, আপনি যা বলছেন তার কোনো মানেই নেই; আপনি নিছক অভ্যাসবসত বলছেন এবং আরাম পাওয়ার জন্য বলছেন! হ্যারি যা বলে তাতে যখন আর কোনো মানে দাঁড় করায় না, তখন মেয়েদের সাথে বলা তার মিথ্যেগুলোই তাদের বলা সত্যগুলোর চেয়ে বেশি ফল দেয়।

সে যে মিথ্যে বলে তা ততো বড় কোনো ব্যাপার নয়। বলার মতো কোনো সত্য নেই বলেই সে মিথ্যে বলে। সে তার জীবনটা ভোগ করেছে। ভোগ করা হয়ে গেলে নতুন কারো কাছে গেছে। একই এলাকার অন্য সেরা জায়গায়, নতুন কোনো জায়গায়। সেই সঙ্গে কামিয়ে নিয়েছে টাকাও।

চিন্তা করতে থাকুন এবং তখন দেখবেন এর সবকিছুই চমৎকার। ভেতরটা ভালোয় সাজিয়ে নিন, তা হলে আর ওভাবে ভেঙে টুকরো টুকরো হবেন না। যেভাবে তারা প্রায় সবাই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেছেন। আপনি যখন দেখবেন কোনো একটি কাজ আর করতে পারছেন না তখন এমন একটি প্রবণতা তৈরি করুন যে, যে কাজটি আপনাকে করতে হবে তার জন্য আপনি কোনোকিছুকে পরোয়া করেন না। কিন্তু আপনি আপনার নিজের ভেতরে বলে রেখেছেন যে, এই মানুষদেরকে নিয়ে লিখবেন; লিখবেন খুব ধনী লোকদের সম্পর্কে; আপনি সত্যিই তাদের কেউ নন, কিন্তু তাদের দেশে একজন গুপ্তচর। আপনি গুপ্তচরবৃত্তি ছেড়ে দেবেন এবং একবার এ সম্পর্কে কেউ লিখলে সে জেনে যায়, কী সে লিখেছে। কিন্তু হ্যারি এটি কখনও করবে না। কারণ না লেখার প্রতিটি দিনে আরামের কারণে, যা সে ঘেন্না করে তা-ই হতে হয়েছে বলে তার সক্ষমতা কমে গেছে। এগুলো তার ইচ্ছেশক্তিকে কমিয়ে দিয়েছে, আর তাই শেষমেশ সে আর কোনো কাজই করছে না। যে লোকদের এখন সে চেনে তারা সবাই কম-বেশি সহনীয়, স্বস্তিকর হয়ে ওঠে যখন সে কাজ না করে অলস সময় কাটায়। আফ্রিকা হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে সে তার জীবনের ভালো সময়ে সবচেয়ে সুখে কাটিয়েছে। সুতরাং আবার শুরু করার জন্য সে এখানেই এসেছে। ভ্রমণ ও শিকারের জন্য তারা জায়গাটাকে গড়ে তুলেছে সবচেয়ে কম আরামদায়ক করে। এখানে কোনো কঠোরতা নেই। কিন্তু কোনো বিলাসিতাও নেই। সে ভেবেছিলো সেইভাবে ধাতস্থ হয়ে সে ফিরতে পারবে। কোনো না কোনোভাবে সে তার আত্মা থেকে মেদ ঝরিয়ে ফেলতে পারবে, ঠিক যেভাবে একজন যোদ্ধা পর্বতে কাজ করতে গেলে সেইভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে নেয়, যাতে শরীরের চর্বি পুড়িয়ে ফেলা যায়।

নারী এটি পছন্দ করেছিলো। সে বলেছেও, সে এটি পছন্দ করে। উত্তেজনাকর যে কোনোকিছুই সে ভালবাসে যা দৃশ্যপট বদলে দিতে থাকে। যেখানে আছে নতুন মানুষ এবং সবকিছুই আনন্দদায়ক। হ্যারি কাজ করার ইচ্ছেশক্তি ফিরে পাওয়ার মোহ অনুভব করতে পারলো। এখন ব্যাপারটা যদি এভাবেই মিটে গিয়ে থাকতো এবং সে জানতো এভাবেই তা শেষ হয়েছে, তা হলে সে কিছুতেই সেই সাপটির মতো হয়ে উঠতো না। পিঠ ভেঙে গেছে বলে যেটি নিজেকেই অনবরত ছোবল দিয়ে চলেছে। এটা ঐ নারীর দোষ নয়। সে না হলে অন্য কেউ হলেও একই রকম হতো। হ্যারি যদি একটি মিথ্যের জন্য বেঁচে থাকতে পারে, তা হলে এটিতেই তার মরে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। পাহাড় ছাড়িয়ে আরো দূর থেকে হ্যারি একটি গুলির শব্দ শুনতে পেল।
সে খুব ভালো গুলি ছোঁড়ে। সে মানে এই ভালো নারীটি, এই ধনী কুত্তিটি। তার দয়াময়ী দেখাশোনাকারী এবং তার মেধা ধ্বংসকারী। বুদ্ধু। সে তো তার নিজের মেধাকে নিজেই ধ্বংস করেছে। তাকে ভালো রেখেছে বলে কেন এই নারীকে দোষ দিতে হবে? সে তার মেধাকে নষ্ট করেছে এটিকে ব্যবহার না করে, নিজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। আর হ্যারি যাতে আস্থা রাখতো তা হচ্ছে, মদ গিলে এতটাই বুঁদ হয়ে থাকা, যা তার ইন্দ্রীয় উপলব্ধিকে ভোঁতা করে দিতো। আস্থা রাখতো আলসেমিতে, স্লথতায় এবং চালবাজিতে, গর্ব ও সংস্কারে এবং দরকারমতো যে কোনো উপায় অবলম্বন করাতে। তার এই মেধাটা কী ছিলো? পুরনো বইয়ের ক্যাটালগ? যেভাবেই হোক, তার মেধাটা কী ছিলো? এটি একটি মেধা ছিলো ঠিকই, কিন্তু এটিকে ব্যবহার করার বদলে সে এটি নিয়ে ব্যবসা ফেঁদেছে। এটি কখনও তা ছিলো না। যা সে করেছে। কিন্তু সব সময়ই তা-ই ছিলো, যা সে করতে পারত। এবং সে জীবিকার জন্য কলম বা পেন্সিলের বদলে অন্যকিছু বেছে নিয়েছিলো। এটাও খুব অদ্ভুত ব্যাপার নয় কি! সে যখন কোনো মেয়ের প্রেমে পড়তো, তখন আগের প্রেমিকার চেয়ে সেই মেয়েটার বেশি টাকা থাকতে হতো? কিন্তু সে যখন কোনো প্রেমে থাকতো না, সে যখন কেবলই মিথ্যে বলতো, যেমনটি এখন এই মেয়েটির সঙ্গে বলছে। যার আগের যেকোনো মেয়ের চেয়ে বেশি টাকা আছে, যে তার সব টাকা নিয়ে এসেছে। যার একজন স্বামী এবং বাচ্চাকাচ্চাও ছিলো। যে আগে প্রেমিক গ্রহণ করেছে, তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে এবং যে তাকে মনেপ্রাণে ভালবেসেছে একজন লেখক হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে, একজন সঙ্গী হিসেবে এবং গর্বিত অধিকার ফলানোর জন্য। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, হ্যারি যখন তাকে একদমই ভালোবাসতো না এবং মিথ্যে বলতো, সে যখন তাকে সত্যিই ভালবাসলো তার চাইতে নাকি তখন সে মেয়েটিকে তার বিত্তের বদলে আরো অনেক বেশিকিছু দিতে পারতো।

আমরা যা করি তার জন্য অবশ্যই আমাদের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। হ্যারি ভাবলো। আপনি যে জীবিকাই বেছে নেন না কেন, তার জন্য আপনার মেধা থাকতে হয়। সারা জীবন কোনো না কোনোভাবে সে তার জীবনীশক্তি বিকিয়ে দিয়েছে। আর যখন আপনার অনুরাগ অতটা জড়িত থাকবে না, তখন তো আপনি অর্থকেই বরং বেশি মূল্য দেবেন! ব্যাপারটি সে খুঁজে বের করেছে ঠিকই, কিন্তু সে তা কখনও লিখবে না, এমনকি এখনও না। না, সে তা লিখবে না, যদিও তা লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এখন নারীকে দেখা যাচ্ছে। খোলা জায়গা দিয়ে সে তাঁবুর দিকে হেঁটে আসছে। পরনে জধ্ফুর ট্রাউজার্স (শিকার বা ঘোড়ায় চড়ার ট্রাউজার্স, যা হাঁটুর ওপর থেকে ঢোলা ও হাঁটুর নিচ থেকে থাকে চিপা), আর হাতে রাইফেল। দুজন বালক একটি টমি গ্যাজল হরিণ কাঁধে ঝুলিয়ে তার পিছু পিছু আসছে। এখনও সে দেখতে বেশ খাসা। আর তার দেহসৌষ্ঠবও দারুণ আকর্ষণীয়। হ্যারি ভাবল।

বিছানার জন্য এখনও সে মহামূল্যবান এবং এ ব্যাপারে সে দারুণ মেধাবী। সে আহামরি সুন্দরী নয় ঠিকই, কিন্তু তার মুখখানি হ্যারির ভারি পছন্দ। সে প্রচুর পড়াশোনা করে, ঘোড়ায় চড়তে ও শিকার করতে পছন্দ করে। আর অবশ্যই সে খুব বেশি ড্রিঙ্ক করে। তার স্বামী যখন মারা যায়, তখনও সে তুলনামূলকভাবে কম বয়সী এক নারী। কিছুকাল সে তার বড় হয়ে ওঠা দুই সন্তানের জন্য ছিলো উৎসর্গীকৃত। সন্তানদের অবশ্য তাকে কোনো দরকার ছিলো না। তারা বরং তাকে আশপাশে, আস্তাবলে, বই পড়তে, বোতলের কাছে দেখলে বিব্রত বোধ করতো।

ডিনারের আগে সন্ধ্যায় সে পড়তে ভালোবাসতো এবং পড়ার সময় সে স্কচ ও সোডা পান করতো। ডিনারের আগে নাগাদ সে পাঁড়মাতাল হয়ে উঠতো এবং ডিনারে এক বোতল ওয়াইনের পর সাধারণত ঘুমানোর জন্য অনেক ড্রিঙ্ক করে নিতো।
এটি ছিলো তার প্রেমিকদের জোটার আগের কথা। প্রেমিকরা জুটে যাওয়ার পর সে অত ড্রিঙ্ক করতো না। কারণ ঘুমানোর জন্য তখন আর তার ড্রিঙ্ক করার দরকার ছিলো না। কিন্তু প্রেমিকরা তাকে বিরক্ত করতো। সে যাকে বিয়ে করেছিলো সে তাকে কখনও বিরক্ত করতো না। কিন্তু এই লোকেরা তাকে খুব জ্বালাতো।
এরপর তার দুই সন্তানের একজন বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলো। এই শোক কাটিয়ে ওঠার পর সে আর প্রেমিকদের সঙ্গ দিতে চাইতো না। আর খুব বেশি ড্রিঙ্ক করতো। যেহেতু অন্য এক জীবন গড়ার জন্য তার কোনো চেতনানাশক ছিল না। হঠাৎ করেই সে তার একাকিত্ব নিয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো। কিন্তু সে এমন কাউকে চাইছিলো যার কারণে সে তার নিজের সম্মান বজায় রাখতে পারে।

খুবই সাদামাটাভাবে তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিলো। হ্যারি যা লিখতো তা সে পছন্দ করতো। হ্যারি যেভাবে জীবনযাপন করতো, তে সে সবসময় ঈর্ষা বোধ করতো। ভাবতো, হ্যারি যা চায় ঠিক তা-ই সে করে। পায়ে পায়ে যেভাবে সে তাকে অর্জন করেছিলো এবং যে পথে শেষমেশ সে তার প্রেমে পড়েছিলো এর সবই ছিলো সম্পর্কটা এগিয়ে নেওয়ারই অংশ। যার মাধ্যমে সে এক নতুন জীবন গড়ে তুলেছিলো এবং হ্যারি তার পুরনো জীবনের অবশিষ্ট সবকিছু বিক্রি করে ফেলেছিলো।
হ্যারি এই সম্পর্ক-বাণিজ্যটা করেছিলো নিরাপত্তার জন্যই। আরাম-আয়েশের জন্যও। তা সে অস্বীকার করতে পারবে না; অন্য কোনো কারণ ছিলো কি? হ্যারি জানে না। তা ছাড়া সে এক চমৎকার নারীও ছিলো। হ্যারি যা চাইতো, তা-ই সে কিনে দিতো। অন্য সবার মতো খুব জলদিই হ্যারি তার সঙ্গে বিছানায় গেলো। হ্যাঁ, তার সঙ্গেই, কারণ সে ছিলো অনেক বেশি ধনী, খুবই উপভোগ্য এবং পুরোপুরি উপলব্ধিময়ী। আর যেহেতু এই নারী কোনোকিছুর কখনও কোনো মানে খুঁজতে যেতো না। আর এখন এই জীবন, যা এই নারী আবার গড়ে তুলেছে তা একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কে রূপ নিলো। কারণ দুই সপ্তাহ আগে যখন এক পাল ওয়াটারবাকের (এক ধরনের লম্বা চোখা শিংয়ের আফ্রিকান হরিণ) ছবি তুলতে গিয়ে হাঁটুতে কাঁটা বিঁধিয়েছিল তখন সে আয়োডিন ব্যবহার করেনি। হরিণগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। নাক দিয়ে বাতাস শুঁকতে শুঁকতে এদিক-সেদিক উঁকি মারছিলো। কানগুলো শব্দ শোনার জন্য চওড়া হয়ে ছড়িয়ে গিয়েছিলো। প্রথম শব্দটি শুনেই এগুলো জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিলো। সে ছবি তুলতে পারার আগেই তারাও তখন সঙ্গে সঙ্গে হরিণগুলোর পিছু নিয়েছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৬
এসএমএন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।