ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কবিতা

হেমলক সন্ধ্যার গান | জাহিদুর রহিম

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
হেমলক সন্ধ্যার গান | জাহিদুর রহিম ছবি: বাংলানিউজ

কিছুই রাখতে পারি না হাতে, মুঠো ভরে তুললেই দেখি জিয়ল মাছের মতো পার হয় অনুভব। নিরুপায় ছায়া হতে দাঁড়াই জীবনের নিবিড় ব্যস্ততম রৌদ্দুরে, নগ্ন নরম পা সইতে পারে না পিচের গলন

হেমলক সন্ধ্যার গান-১
কিছুই রাখতে পারি না হাতে, মুঠো ভরে তুললেই দেখি জিয়ল মাছের মতো পার হয় অনুভব। নিরুপায় ছায়া হতে দাঁড়াই জীবনের নিবিড় ব্যস্ততম রৌদ্দুরে, নগ্ন নরম পা সইতে পারে না পিচের গলন, দুঃসহ উত্তাপ হতে ক্রমাগত পা তুলি- তবু বেশি দূরে নয়; হাওয়ায় পা তুলে কে কবে পেরেছে পালাতে।

গাছের বাকলে কান পেতে বুঝেছি প্রেমের সংকেত এক বাষ্পীভূত শোক। জলভারী মেঘেরা উড়ে গেছে যেই পত্রহীন বৃক্ষের দেশে, যেখানে আমারও রয়েছে ছোট এক সন্ন্যাস কোণ। ঘুমের মাঝে অধিকার ছেড়ে নেমে আমি সিংহাসন হতে, নদীর পানিতে মুখ ধুতে গিয়ে দেখি কবেই ভেঙে গেছে স্মৃতির আয়না, কিছুই রাখতে পারি না হাতে।

হেমলক সন্ধ্যার গান-২ 
বিরহের ব্যথা গলে যাওয়া মোমের মতো সহনশীল, জ্বালাধরা আর বিকৃত নেশা- এ কথা বলে মোম আর পালকের ডানা নিয়ে উড়ে চলল ইকারুস তার পতন পূর্ণিমায়; অথচ সন্ধ্যার বাতাস গাঢ় গন্ধময়- বৃষ্টিহীন বর্ষার খোলসের মতো পলাতক, আর এই অদেখা ভুবনে আছে রোদহীন আলোর অপ্রচুর গাম্ভীর্যের আর্তি। দিকভোলা কোন অপরাধ না- কারণ দিকে দিকে বসেছে মরিচিকাময় জলসা, সমরূপ নিঃশ্বাসে কামুকী অধরের বিষাক্ত চুম্বন।  
আলস্যের মেদুরতাময় ভাত ঘুম হতে উঠে গাই আর গরিলার অপ্রকাশ আনন্দ দেখতে চাওয়া হবে ভুল-কারণ এই সন্ধ্যাসেই সব পূর্বাপর যোগসূত্র কাটিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ অপ্রভাত রাত্রি সন্ধ্যার সাথে না মিলিয়ে যায়।  

হেমলক সন্ধ্যার গান-৩ 
সুবের নাগরদোলা অপরূপ তামসী খাঁচা, লিয়া- তুমি জানো শব্দ এক অস্পর্শ উদ্ভূত আবেগ, আমাদের মাঝে ক্রিয়াশীল, সে তবু বেয়ারা- কোনো কথাই শুনবে না, যতক্ষণ না তুমি দাস হয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসো।  
যতবার উত্থান হয়- যতবার ফুলে ওঠে প্রেমে ভরা বুক, ততবার আমাদের চিঠি তীর বল্লম আর তলোয়ারের আঘাতে কেটে যায়; দূরত্বের নৈকট্য শুধু চিনিয়ে দেয় ঝুলে পড়া জিহ্বায় শেষ স্বাদ- এর চেয়ে ভালো দূরের সাঁতার; যে করে জলহীন কলসি ভুল করে শ্বাস নিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচে নিজে।

হেমলক সন্ধ্যার গান-৪ 
ঘরের পাশে জোনাকি আর আলো জ্বালে না, সময়তো শব্দে ঘেরা নিরাকার প্রপাত। প্রত্যহ ভিজে যাই- জড়িয়ে পড়ি এর শ্বেত অমাবস্যায়।
অমিত, তুমিও কি দেখনি ভুল শয্যা কীরকম সাক্ষী মানে কামনাকে এই মধ্যদিনে; এইতো মায়ার কানন- এইতো ধ্বংসের উপনয়ন।
তুমি বার বার পা রাখ বিষ পিঁপড়ার ঝাড়ে- যেন তোমার ভিতরে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির আগমন সৌভাগ্যে পিঁপড়েরা ছেড়েছে সংসার। এই খনে ঘর ছিল, ঘর আছে, ঘর থাকবে, তবু শূন্যে জোনাকিরা আর জ্বালবে না আলো এই নিঃসঙ্গ বিলীনতায়।  

হেমলক সন্ধ্যার গান-৫
ঘুমের শহরে এর বেশি নীরবতা আসবে না জেনেও বোকা ফড়িঙগুলো আতশি কাচের নিচে মেলে দেয় ডানা। প্রখর রৌদ্রের তাপ সংযোগ পুড়িয়ে ফেলতে পারে চিরন্তন অহংকার- এমন অপাপ উপলব্ধিহীনতায় বিহ্বল ঘাসের ঘনিষ্ট মায়া। যেন উড়তে ভুলে গেলেই মিটে যাবে তৃষ্ণায় ভুলে থাকা জলের সন্ধান; বস্তুত এই দয়াহীন ঘুমের শহরে যখন সব মৃতরূপ বাস্তব আর সময়হীন, উঠতি আবেগ বাড়ন্ত, তখন বোকা ফড়িঙদের এহেন অনাদর ভালোবাসার কতদূর স্পর্শ করতে পারে শহরের স্থির উল্লাস। বরং মাংসপোড়ার গন্ধ মনে করিয়ে দেয় তন্দ্রার আলস্য এক গভীর সুখেরবোধ।

যোগাযোগ

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।