ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কবি, কবিতা ও আড্ডার শহর ময়মনসিংহ

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
কবি, কবিতা ও আড্ডার শহর ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহকে বলা হয় কবি ও কবিতার শহর। সংস্কৃতির শহর। লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্য, মহুয়া, মলুয়া আর চন্দ্রাবতীর আখ্যানভূমি  ময়মনসিংহ।

এখানকার লোকসাহিত্য-গবেষক চন্দ্র কুমার দে সংগ্রহ করেছিলেন মহুয়া-মলুয়ার পালা। পরবর্তী সময়ে ড. দীনেশ চন্দ্র সেন এগুলোকে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন।

এটি প্রকাশের সময় চন্দ্র কুমার দে ছিলেন ময়মনসিংহে। তিনি ‘সৌরভ’ নামে একটি পত্রিকায় কাজ করতেন। শহরের আমলাপাড়া এলাকায় ছিলো তাঁর অফিস।

এরপর গত শতকের শেষ পাদে স্টেশন রোডে তাজমহল হোটেলকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডা। ৯০’র গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত এ আড্ডা অটুট ছিলো। কিন্তু এখন সেই আড্ডাটা আর নেই।

তাজমহলের আড্ডা ছাড়াও জিলা স্কুল মোড়ে অধুনালুপ্ত আজিজ প্রিন্টার্সে ঔপন্যাসিক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একদল কবি-সাহিত্যিক জমিয়ে আড্ডা দিতেন।

এছাড়াও অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী ও অধ্যাপক খগেশ কিরণ তালুকদারকে ঘিরে আড্ডা হতো।

পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহে অধ্যাপক যতীন সরকার, প্রখ্যাত সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলসহ কয়েকজন মিলে গড়ে তোলেন ‘মুক্ত বাতায়ন পাঠচক্র’।

১৯৭০-এর দশকের গোড়া থেকে ময়মনসিংহে নিয়মিতই লিটল ম্যাগ প্রকাশিত হতো। ৯০-এর দশক পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকে।

৮০’র দশকের গোড়ার দিকে লেখক তসলিমা নাসরিন গড়ে তোলেন ‘সকাল সাহিত্য পরিষদ’। একই সময়ে শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিকাল সাহিত্য পরিষদ’। এরপর কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডা ভেঙে যায়।

গড়ে ওঠে ‘ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ’। শুরুতে এ সংগঠনের সভাপতি হন কবি মোশাররফ করিম আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী আতাউল করিম। তিনি ওই সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন।

এ-সাহিত্য সংসদই ময়মনসিংহের একমাত্র সাহিত্য সংগঠন। বর্তমানে এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল ও কবি ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল।

আর সাহিত্যাঙ্গনের প্রকাশনার দায়িত্বে রয়েছেন কবি স্বাধীন চৌধুরী। সাহিত্য-সংস্কৃতিকেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

ময়মনসিংহের সাহিত্যাঙ্গনের রয়েছে সমৃদ্ধ অতীত, সক্রিয় বর্তমান আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এখানকার কবিরা সবকিছুতেই সরব ও সক্রিয়।

এখানে সজল কোরায়শী, আমজাদ দোলন, রুবিনা আজাদ ও জয়দেব সম্মিলিত প্রয়াসে টিকিয়ে রেখেছেন আবৃত্তিচর্চা।

ময়মনসিংহে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান হয়। প্রতিবছর বরীন্দ্র জয়ন্তীতে রবীন্দ্র পর্ষদ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল সংলগ্ন রবীন্দ্রবটমূলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আর ত্রিশালে জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠানের মঞ্চে কবি ও সাহিত্যিকরা কবিতা আবৃত্তি করেন। বিভিন্ন সংগঠনের থাকে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে তারাকান্দা সমৃদ্ধ সাহিত্যচর্চায়। উপজেলা পর্যায়ে এখানে রয়েছে অনুশীলন সাহিত্য সংসদ।

শহরের বাইরে একমাত্র এ উপজেলাতেই সাহিত্যচর্চা হয়। বাদবাকি উপজেলাসমূহে জোরালোভাবে কোনো সংগঠনের সাংগঠনিক ভিত নেই।

ময়মনসিংহের কবি ও সাহিত্যিকরা জানান, ১০ বছর হয়ে গেল এখানে সাহিত্য-সম্মেলন হয় না। আগে এখানে সাহিত্য-সম্মেলন হতো।

ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদই এ সম্মেলনের আয়োজন করতো। তবে সাহিত্য সংসদের প্রকাশনা ‘স্বরচিত’ অব্যাহত রয়েছে।

৩৫ বছর ধরে প্রতি শুক্রবার  ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কবি ও সাহিত্যিকরা বীক্ষণে মিলিত হন। পাঠচক্র প্রকল্প বীক্ষণে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন আলোচনায় মেতে ওঠেন তারা।

সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্পকলা সম্পর্কিত আলোচনা ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি হয়। ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ এখানে নিজস্ব ভবন করার চিন্তা-ভাবনা করলেও ভূমি-জটিলতার কারণে সেটি থেমে আছে।

তাজমহলের আড্ডা ভেঙে যাবার পর থেকে ময়মনসিংহের চেনামুখ-কবি শামসুল ফয়েজ স্টেশন রোডের সালাম বুক সেন্টারের সামনের একটি গলিতে নিয়মিত বসেন। তার নামে প্রায় এক যুগ আগে একটি গলির নামকরণ করা হয়েছে ‘ফয়েজ অঙ্গন। ’

ময়মনসিংহের কীর্তিমান কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী। এরা সবাই প্রয়াত।

এখানকার কবি সাহিত্যিকদের মনে হীরকদ্যুতিতে জ্বলজ্বল করছেন তাঁরা। ময়মনসিংহ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক থাকাকালীন একাধিকবার ময়মনসিংহ বিভাগের দাবি উচ্চারণ করেছিলেন অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী।  

এ বিষয়ে কবি স্বাধীন চৌধুরী বলেন, কবি সাহিত্যিকরা হলেন একটি সমাজের শ্বাশ্বত অংশ। চির ভাস্বর এই কবি-সাহিত্যিকদের স্মরণে রাখার জন্য তাঁদের নামে কিছু হতে পারে।

অধ্যাপক গোলাম সামদানি কোরায়শীর নামেও শহরের কোনো জায়গার নামকরণ করা হয়নি। এটা এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি  ১৩, ২০১৭
এমএএএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।