ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আধুনিক ছোটগল্পের অন্যতম জনক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭
আধুনিক ছোটগল্পের অন্যতম জনক গি দ্য মোপাসঁ

তার পুরো নাম হেনরি রেইনে আলবার্ট গি দ্য মোপাসঁ বা মোপাসাঁ। তাঁকে আধুনিক ছোটগল্পের অন্যতম জনক বলে মনে করা হয়। চাতুর্যপূর্ণ গল্পের প্লট তাঁর লেখার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য, যা ও' হেনরি এবং সমারসেট মমের মতো লেখককে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। ১২৪ বছর আগে ১৮৯৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এই প্রতিভাবান কথাসাহিত্যিক।  তার জন্ম ৫ আগস্ট ১৮৫০ সালে ফ্রান্সের উপকূলীয় শহর নরম্যান্ডিতে।

১৮৮০ সালে একটি কাব্যগ্রন্থ (De Ver) প্রকাশের মধ্যে দিয়ে তাঁর সাহিত্যজগতে পদার্পণ। মাত্র এক দশকের সংক্ষিপ্ত সময়ে তিনি তিনশ’ ছোট গল্প, ছয়টি উপন্যাস, বেশ কিছু কবিতা এবং তিনটি ভ্রমণকাহিনী লেখেন।

তার বিখ্যাত গল্প ‘লা পারুর’ বা ‘দ্য নেকলেস’।

১৮৬৯ সালে তিনি প্যারিসে আইন বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন, কিন্তু শীঘ্রই তাঁকে ফরাসি-প্রুশীয় যুদ্ধের কারণে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়। এরপর ১৮৭২ থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত তিনি সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে ফ্রান্সের নৌ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন।

স্বল্পভাষী লাজুক স্বভাবের ছিলেন। মায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকখানিই প্রভাব ফেলেছিল তার উপর। মা ভুগতেন দুরারোগ্য ব্যাধি ম্যালানকোলিয়ায়।

গুস্তাভ ফ্লবেয়ার, এমিল জোলা, আলফস দোঁদে-দের উত্তরসূরী হিসেবে তাঁর সাহিত্যজগতে পদার্পণ। প্রথম কাব্যগ্রন্থে খুব বেশি জনপ্রিয়তা পাননি। এসময় প্যারিস তরুণ সাহিত্যিকদল বের করে একটি সাহিত্যিক সঙ্কলন। নাম Less Sovress de Medan। এখানে মোপাসাঁর প্রথম বড় গল্প 'ব্যুল দ্য সুইফ' (Boule de Suif)- ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধের পটভূ মিতে একজন বেশ্যার কাহিনী।

১৮৮৩ সালে আরেকটি বিখ্যাত গল্প প্রকাশিত হয়, মাদমোয়াজেল ফিফি। এরপর প্রথম উপন্যাস Un-rie। উপন্যাসটি সরকারি রোষানলের শিকার হয়। ১৮৮৫ সালে রচনা করেন বিখ্যাত উপন্যাস "বেল আমি"। বলা হয়ে থাকে, ছোটগল্পকার হিসেবে যতটুকু পারদর্শী ছিলেন, উপন্যাসে তিনি ততটা ঋজুগতি ধরে রাখতে পারেননি।

মাত্র এক দশক সাহিত্যচর্চার সুযোগ পান মোপাসঁ, এই সংক্ষিপ্ত সময়ে তিনি তিনশ' ছোট গল্প, ছয়টি উপন্যাস, বেশ কিছু কবিতা এবং তিনটি ভ্রমণকাহিনী লেখেন। দুর্ভাগ্যবশত তারুণ্যের শুরুতেই তিনি সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হন, যা তাঁকে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। শেষে মারাত্মক মানসিক বৈকল্যের শিকার হয়ে ১৮৯২ সালের ২ জানুয়ারি কন্ঠনালী কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্যারিসের একটি প্রাইভেট অ্যাসাইলামে ভর্তি করা হয়, এবং সেখানেই পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯৩ সালের ৬ জুলাই, মাত্র ৪৩ বছর বয়সে, মৃত্যুবরণ করেন এই প্রতিভাবান সাহিত্যিক।

কাব্যচর্চা দিয়ে তাঁর সাহিত্য-জীবন শুরু হলেও মূলত গল্পকার হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতি ও আদর্শগত কোনো বিশ্বাসে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত না হয়ে তিনি তাঁর সাহিত্য-চর্চার জগৎ তৈরি করেন। তাঁর বস্তুনিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার তুলনা বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে খুব বেশি লক্ষ করা যায় না। অসাধারণ সংযম ও বিস্ময়কর জীবনবোধ তাঁর রচনাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিৎসে তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন, ‘আমি জানি না ইতিহাসের আর কোন শতাব্দী একই সঙ্গে এত সূক্ষ্ম এবং একই সঙ্গে কৌতূহলী মনোবিজ্ঞানীদের ধারণ করেছে কি না, যেমনটা করেছে সমসাময়িক কালের প্যারিস; তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন একজন তিনি -গি দ্য মোপাসঁ । ’

আজকের আধুনিক ছোটগল্পের আঙ্কিক ও বৈশিষ্ট্য তার হাত ধরেই সূচিত হয়েছে। এ কারণে সাহিত্যের বিশ্বমানচিত্রে তার নাম উজ্জ্বল হরফে লিপিবদ্ধ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।