ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা প্রতীকী ছবি

লজ্জিত ও অধোমুখ
নাফ কেন রক্তনদী?
পশুদের জিঘাংসায় ঘাতকের আগ্রাসী ক্ষুধায়।
কেন কাঁদছে সমুদ্র পাহাড়?

মানবতা ধর্ষিতা লাঞ্ছিতা,
        তপ্ত দীর্ণ আর্তনাদে
              আকাশও ক্রন্দনশীল।
দাউ দাউ কিসের আগুন?
জাতিসত্তা নির্মূলের, পৈশাচিক আক্রোশের,
           স্পর্ধা হয়ে উঠেছে অগ্নির জিভ-
কোনখানে সভ্যতার উৎকর্ষ বড়াই?
               কোথাও পাচ্ছি না খুঁজে
               সভ্যতার বেআব্রু অহং-
 রুগ্ন এক ওতপ্রোত নৈরাশায়
         ধুঁকছে আর লজ্জায় লুকোচ্ছে মুখ
                 মূল্যবোধ, পচা-গলা বিশ্বের বিবেক।


স্বাধীনতার জীবনছবি

স্বাধীনতা কোথায় বসতি করো কতোদূর কোন গ্রহচূড়ে?
-অনেক দূরত্বে থাকি অনেক উঁচুতে উষ্ণ মেঘস্তরে 
রক্তনদী পার হলে পেতে পারো ঠিকানা উদ্দিশ।

স্বাধীনতা তোমার কেমন রূপ চেহারা ও বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি?
-মৃত্যুর পেয়ালা যদি পান করে স্বচ্ছ হতে পারো
চিরঞ্জীব তিয়াসাকে বুকে গাঁথো রক্তস্রোতে ক্ষরণে মায়ায়
উপলব্ধি তখনই সম্ভব আমি কতো উচ্চ কতোটা গভীর।

স্বাধীনতা, কেন তুমি এতো বেশি তৃষাতুর ঊষর জটিল?
-চারিত্র্যে দৃঢ়তা চাই পতাকায় রক্তলাল চিহ্নফোঁটা চাই
নাহলে পিপাসা ক্ষুধা থেকে যায় অনিবৃত্ত আর্ত বিষাদিত

স্বাধীনতা কেন তুমি সহজে প্রাপ্য নও দূরে দূরে থাকো?
-রক্তের ফোঁটার ঋণ কোনোমতে সুলভ সস্তা যে নয়
তার মূল্য ভালো জানি, আত্মায় ধারণ করি প্রণম্যও সে
প্রাণের উৎসবে জাগে মৃত্যুর পরাস্ত ছবি, জীবনেরই
সে অর্জন, ত্যাগের প্রজ্ঞায় জ্বলে ভাঙে সে জিঞ্জির!
             

মাঝগাঙে একলা ফুটো নাও
ডর লাগে মরণের ডর
অনিচ্ছায় ছেড়ে যাবো প্রিয় বাড়িঘর,
একলা নাও মাঝগাঙে বৈঠা হাল কই
পৌঁছানো সম্ভব তীরে 
           এরকম আশা ভরসা দেখি সামান্যই-
ডর লাগে, স্বীকার করার মধ্যে 
            শরমের প্রশ্ন কেন ওঠে
প্রস্থানের পরেও কী আশ্চর্যরকম সত্য
                     ঠিকঠাকই চন্দ্র সূর্য 
                               স্বাভাবিক ওঠে! 

গন্ধমের আবিষ্ট পতনে

মরমে শরমে মরি, ওলো প্রিয়ে চন্দ্রাবলী সহচরী
বিষপাত্র কানায় কানায় ভরো আঁজলা পূর্ণ করো
দংশিয়ে ছলনাসূত্রে নীলবর্ণ বাগদত্তা হাতজোড়া ধরো
ব্রহ্মাস্ত্র তোমারই একা নিনাদিত, নাই কোনো তড়িঘড়ি
স্বপ্নে হোক স্মৃতিচর্চা গন্ধমের মগ্নচর্চা আলুথালু জড়াজড়ি
কূলভাঙা গাঙে ডোবে অধমের  নিরাশ্রিত ভাঙাফুটা তরী

মরমে শরমে মরি, তোমরা বলো ভূষণ লজ্জারই মিহি লতা
ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে দেহে-মনে সংক্রমণ জ্বোরো তিতা ব্যথা
এর চাইতে ভালো ছিল প্রত্যাখ্যানই আধো আবছা নীরবতা
কী কবো কাহিনিগল্প পরাস্ত পুথির সেই মর্মচেরা গাথা কল্পকথা
জীয়ন্ত মরণকষ্টে মুখ ফুটে বলা যায় না সে তথ্য বারতা

শরম ভরম সবই লুকোছাপা নিরজনে সন্তর্পণ নিঝুমে লুকাও
প্রবাহে ধুয়েছো পাপ এইক্ষণে শঙ্কামুক্ত গাঢ় নিদ্রা যাও

দ্বন্দ্বে ছন্দে দূরবর্তী

নিদ্রা আর জাগরণ একাকার
রাত্রি দিনও এক লপ্তে একাকার
কিন্তু কেন বিরহ-মিলন দুয়ে দূরবর্তী রয়?
বুঝে পাই না জেগে থাকে  অলক্ষ্য সংশয়
তাহলে প্রাপ্তির লোভ সত্য কিছু নয়?
জাগরূক ঝাউপাতা রাতচরা পাখির প্রণয়
সন্দেহের প্রবণতা জেগে থাকে এবং খোঁচায়
মিলনের পথ চেয়ে বিরহের বুক ভেঙে যায়
মিলন কেন যে এত বিরহকে বেহুদা ডরায়
বুঝি না সে কেন ছোটে অন্য দিকে ভিন্ন ঠিকানায়...

কেন স্বপ্নে ভাঙচুর

নদী বললে ছলোছল
অমৃত সে কলরোল
নদী কেন নির্বাসন
বংশীতান আউলা মন
নদী কেন চোখের উপমা
জলের ঘূর্ণনে জমা
কত শ্রান্তি কতটুকু ক্ষমা?
নদী বললে স্বপ্নাতুর ক্রোধের ফসিল
পরিত্যক্ত বাঁজা বালুচর
জলের অধ্যাসে কেন ভেসে যায়
গরিবের ভাঙাচুরা ঘর?

সপ্তসুরের আলো

ছন্দের সুগন্ধে গাঁথো বিনিসুতো মালা
আঁধার তোমার কণ্ঠে সে মালা পরাবো।
আলো থাক দূর
জোনাকি নক্ষত্র মিলে ঐকতানে
তৈরি করবে মগ্ন সাত সুর...

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।