ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘সুরের সুষমায় বাঁধা মানে না ভাষা’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
‘সুরের সুষমায় বাঁধা মানে না ভাষা’ জর্জিয়ার ফোক গানের দল শেভেনেবুরেবি। ছবি রাজীন চৌধুরী

আর্মি স্টেডিয়াম থেকে: মাত্র হামাগুড়ি দিতে শেখা শিশুর মুখের আধো বুলি যেমন মধু মাখা, তেমনি অন্য ভাষা-ভাষির মুখে ভাঙা ভাঙা বাংলাও এনে দেয় মধুর শ্রুতি। আর সেই সূচনায় করলেন জর্জিয়ার ফোক গানের দল শেভেনেবুরেবি।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্টের মঞ্চে উঠেই প্রাণের ভাষা বাংলায় দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তারা বলে উঠেন, ‘স্বাগতম ঢাকা। তোমরা কেমন আছ? আমরা তোমাদের ভালোবাসি।

মঞ্চে হাজির এই দলের অন্যতম সদস্য জ্যাজের বাংলায় কথা বলা এ সময় চমকসহ অনুরণন এনে দেয় সমস্ত দর্শক হৃদয়ে। সেসব হৃদয় আরও প্রকম্পিত করে মাটির সুরে দলটি গেয়ে ওঠে জর্জিয়ার নিজস্ব ভাষার বিভিন্ন গান। মঞ্চের রঙিন আলোয় বিদেশি গানগুলো দর্শকদের কাছে ছিল ঘোর লাগার মতোই। বাঙালি লোকগানের মতো সে গানেও দর্শক ডুব দিয়েছিলেন বুদ হয়ে।

সুরের সুষমায় ভাষা যেকোনো বাঁধা মানে না, সেই বিষয়টি যেন প্রতীয়মান হয় জর্জিয়ার এই দলটির অনবদ্য পরিবেশনাতে। গানের বিভিন্ন পর্যায়ে দর্শক-শ্রোতাদের হাততালি আর অভিবাদনের সুর ছিল তার বড় প্রমাণ। মঞ্চের গায়েনদের তালে তালে নেচে তাদের সঙ্গে তাল মেলান অনেকেই। অভিবাদন আর আতিথেয়তা জানান দু’হাত নেড়ে। বাঙালির উৎসাহ আর অভিবাদন কম ছিল না তাদের জন্য।

জর্জিয়ার বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নিজেদের মতোই বড্ড আপন করে বিদেশি গানগুলোকে আতিথেয়তা দেয় বাঙালি দর্শক শ্রোতারা। তাদের বিভিন্ন জনকে প্রশ্ন করলে জানান, নিজেদের দেশের গানগুলোর পাশাপাশি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পরিচয় হচ্ছে ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও তাদের লোকজ গানের সঙ্গে। এটি অবশ্যয় আমাদের জন্য একটি ভালো ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক।

পরিবেশনা শেষে বাংলানিউজের কথা হয় এই দলের অন্যতম সদস্য জ্যাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের লোকগানের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। এটি বোঝার জন্য কাউকে সংগীত-পারদর্শী হয় না, কেননা এই গান মাটি ও মানুষের কথা বলে। তাই এর সুর সহজেই আবিষ্ট করে শ্রোতাদের।

গানের দল ‘শেভেনেবুরেবি’র যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালে। নানা ধরনের লোকযন্ত্র বাজিয়ে ভিন্নধর্মী সংগীতায়োজন করে তারা জনপ্রিয়তা পায়। গাওয়ার পাশাপাশি জর্জিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকগান সংগ্রহ করে দলটি জর্জিয়ান লোকসংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে অবদান রাখছে। এশিয়া-ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বড় বড় কনসার্টেও গান করেছে তারা। দলের ছয় জন সদস্য জর্জিয়ার ছয়টি অঞ্চলের হলেও দেশ-বিদেশের মাটির গানের সুরে মন ভেজাচ্ছেন তারা।

আয়োজকরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের জন্য দর্শকদের প্রতিদিন এন্ট্রি পাস দেখাতে হবে। হেডফোন, চার্জার বা পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে আর্মি প্রবেশ করা যাবে না। এছাড়া রাত ১০টার পর অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাবে।

আয়োজকরা আরও জানান, উৎসব প্রাঙ্গণে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। তবে অনুষ্ঠান শেষে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে দর্শকদের জন্য পাঁচটি ভিন্ন রুটে বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন- বাংলাদেশের মালেক কাওয়াল, ফকির শাহাবুদ্দিন, ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র কামরুজ্জামান রাব্বি ও শফিকুল ইসলাম, পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ ও মালির হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সমাপনী দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের কাজল দেওয়ান ও চন্দনা মজুমদার এবং পাকিস্তানের ব্যান্ডদল ‘জুনুন’ ও রাশিয়ার ‘সাত্তুমা’।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।