ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কাজী আনোয়ার হোসেন নন, মাসুদ রানার লেখক শেখ আবদুল হাকিম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২০
কাজী আনোয়ার হোসেন নন, মাসুদ রানার লেখক শেখ আবদুল হাকিম কাজী আনোয়ার হোসেন (বামে) এবং শেখ আবদুল হাকিম (ডানে)।

ঢাকা: সেবা প্রকাশনীর পাঠকপ্রিয় স্পাই-থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র লেখক কে? এর উত্তরে সবাই এক বাক্যে বলবেন, ‘কাজী আনোয়ার হোসেন’। কিন্তু এ সিরিজের প্রথম ১১টি বইয়ের পরের ২৬০টি বইয়ের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন নন। এর লেখক হলেন শেখ আবদুল হাকিম। কিন্তু এর মধ্যে একটি বই বাদে কোনটিতেই কপিরাইট স্বত্ব নেই তার। একইভাবে সেবা প্রকাশনীর আরেক জনপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ ‘কুয়াশার’ও ৫০টি বই শেখ আবদুল হাকিমের লেখা হলেও, লেখক হিসেবে নাম রয়েছে কাজী আনোয়ার হোসেনের।

গত বছরের ২৯ জুলাই শেখ আব্দুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করেন।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই শেষে রোববার (১৪ জুন) বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

ফলে দাবি করা মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব পেতে যাচ্ছেন শেখ আবদুল হাকিম।

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রায়ে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে কপিরাইট বোর্ড বা বিজ্ঞ আদালত থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত আবেদনকারীর দাবি করা ও তালিকাভুক্ত বইগুলোর প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হলো। এছাড়া প্রতিপক্ষকে আবেদনকারীর কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা প্রকাশিত বইগুলোর সংস্করণ ও বিক্রিত কপির সংখ্যা এবং বিক্রয় মূল্যের হিসাব বিবরণী এ আদেশ জারির তারিখের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘শেখ আবদুল হাকিমের দাবি করা ২৬০টি মাসুদ রানার বইয়ের মধ্যে একটি এবং কুয়াশার ৫০টি বইয়ের মধ্যে ছয়টিতে লেখক হিসেবে তার নামে কপিরাইট করা আছে। বাকিগুলোর কপিরাইট করা নেই। তবে সেগুলো তার লেখা এটি তিনি প্রমাণ করেছেন। তবে কপিরাইট অন্তর্ভুক্তির কারণে তাকে প্রতিটি বইয়ের জন্য আলাদা করে আবেদন করতে হবে। এরপর প্রতিটি বইয়ের লেখক হিসেবে তার নাম যাওয়ার পাশাপাশি, কপিরাইটও তার হয়ে যাবে। ’

তিনি বলেন, ‘কাজী আনোয়ার হোসেন চাইলে অবশ্যই আমাদের এ রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারবেন। তা অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে। এখানে তিনি হেরে গেলে, হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন। ’

কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আবদুল হাকিম অভিযোগ করার পর অভিযোগকারী ও প্রতিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে ওই বছরের ১১ ও ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৪ নভেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে উভয়পক্ষ সপক্ষে নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। দাখিল করা অভিযোগের বিষয়ে প্রতিপক্ষ লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন। প্রতিপক্ষের লিখিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাদী পুনরায় সপক্ষে লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করেন। পরবর্তীতে অভিযোগকারীর দাখিল করা যুক্তির বিষয়ে প্রতিপক্ষ পুনরায় লিখিত যুক্তিতর্ক পেশ করেন।

বিষয়টি বেশ জটিল এবং দেশের প্রকাশনা শিল্পের ক্ষেত্রে লেখক ও প্রকাশকের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব বিবেচনা করে, এর সন্তোষজনক ও সুষ্ঠু সমাধানের উদ্দেশ্যে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে এদেশের বিখ্যাত ও প্রথিতযশা কয়েকজন লেখক ও প্রকাশক এবং সেবা প্রকাশনীর সাবেক ব্যবস্থাপকের লিখিত মতামত চাওয়া হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন লেখক বুলবুল চৌধুরী ও শওকত হোসেন, প্রখ্যাত শিল্পী হাসেম খান এবং সেবা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক ইসরাইল হোসেন খান। তাদের লিখিত মতামতের ওপর ভিত্তি করেই রোববার রায় দেওয়া হয়েছে।

মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের লেখক হিসেবে স্বীকৃতিতে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে শেখ আবদুল হাকিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি দারুণ খুশি। মাসুদ রানার ২৬০টি এবং কুয়াশার ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে আমি স্বীকৃতি পেয়েছি। এখন কপিরাইট আইন অনুযায়ী, আমি আমার প্রাপ্য রয়্যালটির টাকা চাই। আমার এক লড়াই শেষ হয়েছে, আরেক লড়াই শুরু হলো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২০
ডিএন/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।