ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘দেবী সুলতানা’য় মুগ্ধ যাত্রাপ্রেমীরা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২১
‘দেবী সুলতানা’য় মুগ্ধ যাত্রাপ্রেমীরা ছবি: বাদল

ঢাকা: করোনার ধকল কাটিয়ে রাজধানীর মঞ্চগুলোও ফিরতে শুরু করেছে আগের রূপে। যাত্রাপালা হবে খবরে তাই সন্ধ্যা থেকেই জমজমাট শিল্পকলা।

পালার নাম ‘দেবী সুলতানা’। শুরুতেই ইসলাম প্রচারের জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিরোধ তুঙ্গে। এরপর একে একে অন্য চরিত্রের আবির্ভাব মঞ্চে। শক্তিশালী সংলাপে টান টান উত্তেজনা। দর্শকও জমে যেতে শুরু করলেন গল্পে।

রোববার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হলো পালাকার প্রসাদ কৃষ্ণ ভট্টাচার্যের যাত্রাপালা ‘দেবী সুলতানা’।  পঞ্চগড়ের ‘দি লাইন অপেরা’ মঞ্চায়ন করে পালাটি।

করোনার কারণে টানা বন্ধের পর যাত্রাপালার এই আয়োজন মানুষকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে মঞ্চে। আর বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য যাত্রাশিল্প যখন বিলুপ্তির পথে, তখন ‘দেবী সুলতানা’র মতো যাত্রার আয়োজন আরও বেশি প্রয়োজন বলেই মত দর্শক ও গুণীজনদের।

‘দেবী সুলতানা’ যাত্রাটিতে দেখা যায়, তৎকালে বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ’র ইসলাম প্রচারের বিভিন্ন ঘটনার উপর নির্ভর করেই গল্প। এই গল্পের মুখ্য চরিত্র দেবী সুলতানা তৎকালীন হিন্দু-মুসলমান ধর্মের বিরোধের এক ঐতিহাসিক দলিল।

ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ হিন্দুদের উপর নানা ধরনের অত্যাচার করেন। কিন্তু পরবর্তীসময়ে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তিনি অনুভব করেন, ইসলাম যেহেতু শান্তির ধর্ম, সেহেতু অন্য ধর্মের উপর জোর করা ঠিক নয়। একইসঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যেসব ধর্মীয় গোঁড়ামি আছে- মুসলিম ছুঁয়ে দিলেই যে জাত চলে যায়, সেই দুইয়ের নিরিখেই এই পালা বলে জানান যাত্রাটির পরিচালক সেলিম রেজা।

প্রথাগত নিয়মে যাত্রা যেভাবে শুরু হয়, ‘দেবী সুলতানা’র শুরুটাতেও এর বিশেষ কোনো ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই বদলাতে থাকে দৃশ্যপট। মঞ্চে শাখা-প্রশাখা মেলতে থাকে গল্পের একেকটি দৃশ্য। একেবারেই নতুন বাঁকে, ভিন্ন আঙ্গিকে, নতুন রূপ। গল্প এগোতে থাকে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ আর সমসাময়িক জীবন নিয়ে। তাতে দর্শকের ঘোর লাগা মোহ, নানান অভিমত। পালা শেষ হয় ধর্মীয় বিরোধ বাদ দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার মেলবন্ধনে হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি দেবী সুলতানাকে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর কন্যার মর্যাদা দেওয়ার মধ্য দিয়ে।

পালা শেষে বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে বলেন, দেবী সুলতানা অত্যন্ত মানসম্পন্ন একটি পালা। এর মঞ্চায়নটাও ছিল ভালো। যারা অভিনয় করেছেন তারাও বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী। তাই বলা যায়, গল্প আর অভিনয়ের মিশেলে অত্যন্ত চমৎকার একটি উপস্থাপনা ছিল।

দর্শক সারির হাসনাত শাহীন বললেন, ছোটবেলা থেকেই যাত্রা দেখি। যখন দেশ থেকে যাত্রাপালা প্রায় উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা, তখন শিল্পকলার এই উৎসব শুধু আমাদের সংস্কৃতির জন্য নয়, যারা যাত্রাপালার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দেবী সুলতানা পালাটি এবারই প্রথম দেখলাম। এর কোরিওগ্রাফি, পোশাক, আলোকসজ্জা, সঙ্গীত এবং শিল্পীদের অভিনয় মুগ্ধ করার মতো। আর যাত্রাপালা আমাদের কাছ থেকে যে দূরে সরে যায়নি, এই পালার সমস্ত কলাকুশলী তারই প্রমাণ রেখে গেলেন। এই শিল্প পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবারও হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে।

শুধু দর্শক নয়, যাত্রাটিতে অভিনয়ে আনন্দ পান শিল্পীরাও। সেই কথাই বললেন পালাটির ‘হাজি মোল্লা শরফ’ চরিত্রে অভিনয় করা মহিবুল ইসলাম রুবেল। এই চরিত্রটিতে তিনি অভিনয় করেছেন শতাধিকবার। যাত্রার সঙ্গে আছেন প্রায় ৩২ বছর।

মহিবুল ইসলাম রুবেল বলেন, এই যাত্রাপালাটিতে অভিনয় করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এটি আমার প্রিয় একটি পালা। এই পালায় অভিনয় করে আমি এবং আমাদের দলের সদস্যরা ভীষণ আনন্দ পাই। দেশের বড় মাপের শিল্পী যারা আছেন, তারা সবাই এখানে অভিনয় করেছেন।

দর্শকের অভিমত, দলের প্রযোজনায় অনেক সৃজনশীলতা রয়েছে। প্রতিটি দৃশ্যের ভাব-ভাষা-ছন্দে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক। ঐতিহাসিক বিষয়গুলো অধুনা জীবনধারায় প্রবহমান হয়েছে স্পষ্ট প্রতীক হয়ে।  

পালাটিতে অভিনয় করেছেন মুর্শিদকুলি খাঁ চরিত্রে সেলিম রেজা, আলীবর্দী খান চরিত্রে কুতুব উদ্দিন, ধূর্জটি মঙ্গল চরিত্রে কবীর খান, রাজা উদয় নারায়ণ চরিত্রে মইজ উদ্দিন তালুকদার, হাজি মোল্লা শরফ চরিত্রে মহিবুল ইসলাম রুবেল, নবাব কন্যা জিন্নাতুন নেসা চরিত্রে শিল্পী রেজা এবং নাম ভূমিকায় দেবী সুলতানা চরিত্রে পূরবী দত্ত। গায়কের রূপ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন খোরশেদ আলম।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২১
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।