ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

৮ বছর পর মহাকালের ‘ঘুমনেই’র পুনঃমঞ্চায়ন উদ্বোধন

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২১
৮ বছর পর মহাকালের ‘ঘুমনেই’র পুনঃমঞ্চায়ন উদ্বোধন ‘ঘুমনেই’র একটি দৃশ্য

ঢাকা: দীর্ঘ ৮ বছর পর নাটক সরণিস্থ বাংলাদেশ মহিলা সমিতি ভবনের ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজনা নাসির উদ্দীন ইউসুফ রচিত এবং জন মার্টিন নির্দেশিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা ‘ঘুমনেই’।

রোববার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় নাটকটির পুনঃমঞ্চায়ন উদ্বোধন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন নির্দেশক ও ‘ঘুমনেই’ নাটকের নাট্যকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ড. মো. জাকেরুল আবেদীন এবং ড. মো. তাজুল ইসলাম। উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।

সন্ধ্যায় শিল্পী আফজাল হোসেনকৃত ‘ঘুমনেই’-এর পোস্টারের সামনে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অতিথিরা এ নাটকের পুনঃমঞ্চায়ন উদ্বোধন করেন। আয়োজন সঞ্চালনা করেন মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি মীর জাহিদ হাসান।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় এসময় রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমাদের বারবার মুক্তিযুদ্ধের কাছে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধে জয় পাওয়া মানে শুধু দেশ বা পতাকা পাওয়া নয়; একইসঙ্গে আমাদের সেই মূল্যবোধটা পাওয়া। এজন্যই মুক্তিযুদ্ধের কাছে আমাদের বারবার ফেরা উচিত। সেদিক থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে নাটক হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের নতুন নতুন দিক নিয়ে নাট্যকাররা লিখতে আগ্রহী হবেন এমনটাই প্রত্যাশা। যেন আমাদের সেই মূল্যবোধটা আবার ফিরে আসে।

নাটকের নাট্যকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, আমি মূলত লেখক নয়, নির্দেশক। তবে এটা লেখা হয়েছে। এই নাটকটি ১৯৮৩ সালে লেখা। একটা খারাপ সময় তখন, উত্তাল সময়। ’৭৫-এর পরে যে সময়টা আসে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর থেকে সেনা শাসন, স্বৈর শাসন, মৌলবাদী উত্থান, এরকম একটি সময়ে এটি লেখা। দেশের জন্য একটি ক্ষুদ্র অবদান আমার। তখনকার সময় এবং নিজেদের গল্প, স্মৃতি যা আছে, তাই তুলে ধরা হয়েছে এখানে।

উদ্বোধনী আয়োজন শেষে অনুষ্ঠিত হয় নাটকটির মঞ্চায়ন। এই নাটকটিতে মূলত তুলে ধরা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা। যারা যুদ্ধ করেছেন, যারা যুদ্ধ দেখেছেন এবং যারা যুদ্ধের কথা শুনেছেন- সবাই একটি অলিখিত প্রতিযোগিতায় যেন সামিল হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ বর্তমান কাল থেকে অতীত কালে স্থানান্তরিত হয়ে ক্রমাগত কেবল বিবর্ণ ইতিহাস যেন না হয়ে যায়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেই আমরা যেন ভুলে না যাই সেই সব উজ্জ্বল দিনের কথা, সাহসের কথামালা। কী অসীম সাহস নিয়ে যুদ্ধ করেছেন আমাদেরই দেশের মৃত্যু ভয়হীন মানুষেরা। সেসব দৃশ্য উপজীব্য হয়েছে এই নাটকটিতে।

এছাড়া এতে আরও ফুটে উঠেছে- মুক্তিযুদ্ধ কেবল বাঙালির জীবনে ঘটে যাওয়া আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বহমান জীবনের চেতনা। প্রতিনিয়ত এই চেতনা শাণিত করে আমাদের সুন্দর জীবন গড়ার সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ কখনই শেষ হয়ে যাওয়া কোনো যুদ্ধ নয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেই সব সাহসী যুদ্ধের কথা-কেবল স্মৃতিকথাও নয়। এই সব সত্যি ঘটনা আমাদের শক্তি যোগায় এবং স্মরণ করিয়ে দেয় আমরা কোনো রাজাকার আলবদরের উত্তরসূরি নই বরং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী সন্তান সবাই।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা ‘ঘুমনেই’ নাটকের নেপথ্য শিল্পীরা হলেন কাহিনী বিন্যাস-পরিকল্পনা-নির্দেশনায় জন মার্টিন, মঞ্চ পরিকল্পনায় খায়েরুজ্জাহান মিতু, মঞ্চ পরিকল্পনা নব-ভাবনা জন মার্টিন, পোশাক পরিকল্পনায় আনওয়ার ফারুক, সুর সংযোজন পার্থ সারথী রুদ্র, আলোক পরিকল্পনায় আমিরুল ইসলাম টিপু, আলোক পরিকল্পনা নব-ভাবনায় শংকর কুমার ধর ও নজরুল ইসলাম, কোরিওগ্রাফিতে এম. এ. আজাদ, কোরিওগ্রাফি নবভাবনায় আমিনুল আশরাফ, পোষ্টার ডিজাইন করেছেন শিল্পী আফজাল হোসেন, স্থিরচিত্র অমিত কুমার।  

নির্দেশনা সমন্বয়ক মো. শাহনেওয়াজ, সহকারী নির্দেশক আমিনুল আশরাফ, প্রযোজনা ব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলাম স্বপ্নীল, মঞ্চ অধিকর্তা আবদুর রহিম শুভ্র এবং প্রযোজনা অধিকর্তা মীর জাহিদ হাসান। এ নাটকের প্রযোজনা উপদেষ্টা ছিলেন নাট্যাচার্য সেলিম আল্ দীন।

নাটকটির কুশীলব মীর জাহিদ হাসান, মো. শাহনেওয়াজ, কবির আহমেদ, ফারুক আহমেদ সেন্টু, মনিরুল আলম কাজল, আবদুর রহিম শুভ্র, রিপন, ইকবাল চৌধুরী, আমিনুল আশরাফ, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার পলিন, কানিজ ফাতেমা লিসা, স্বপ্নিল, শাহনাজ পারভীন ঝর্ণা, নূর আকতার মায়া, সোহেল আহমেদ, মিজান শান্ত, রাকিব হাসান, নাবিল হাসান, ফয়সাল আহমেদ, মো. ইব্রাহিম মোল্লা, উইলিয়াম নিকসন গমেজ, অর্নব খান এবং পলি বিশ্বাস।

প্রসঙ্গত, এই নাটকের পরবর্তী মঞ্চায়ন আগামী ৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২১
এইচএমএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।