ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সৃষ্টির মাঝে বেঁচে থাকবেন কবি অমিতাভ পাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২১
সৃষ্টির মাঝে বেঁচে থাকবেন কবি অমিতাভ পাল ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: বাংলাদেশের আশির দশকের কবিতা যে ঋদ্ধি ও বৈচিত্র্যের জোগান দিয়েছে, এতে সুস্পষ্ট অবদান আছে কবি অমিতাভ পালের। ছোট গল্পকার হিসেবেও তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম।

অথচ এই মানুষটি তার জীবদ্দশায় সাহিত্যজগতে পাননি তার সঠিক প্রাপ্য।

কবি ও কথাসাহিত্যিক অমিতাভ পাল স্মরণে আয়োজিত অমিতাভ উৎসবে এমনটাই জানালেন বক্তারা।

শুক্রবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর পরিবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের ছাদ মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। কবির মৃত্যুতে শোক নয়-উৎসবের মধ্য দিয়েই তার রেখে যাওয়া সৃষ্টির প্রতি সম্মান দেখাতে এ আয়োজন করে অমিতাভ পাল অ্যান্ড গং।

আয়োজনের শুরুতেই অমিতাভ পাল স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন এবং নীরবতা পালন করা হয়। এরপর একে একে তাকে নিয়ে কথা বলেন বন্ধুজনরা।

এ সময় কাজল শাহনেওয়াজ বলেন, একজন সিনিয়রের সামনে একজন জুনিয়র যখন মারা যায়, তখন আসলে মানা যায় না। ওর কখনও মন খারাপ থাকত না। ভীষণ উচ্ছল ও প্রাণবন্ত মানুষ ছিল অমিতাভ পাল। যেমন সুন্দর কবিতা লিখত, তেমনি ভালো ক্রিকেট খেলত। ও এক সময় বস্তির জীবনও যাপন করেছে। শুধুমাত্র কবিতার জন্য নিজেকে বদলে ফেলেছে। ও ক্রমেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিয়েছে এবং তা শুধু কবিতার জন্য। আর সে সত্য কথাগুলো খুব স্পষ্ট করে বলে ফেলত।

কবি জুয়েল মাজহার

বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহার বলেন, অমিতাভ পালের সঙ্গে আমার পরিচয় তার জীবনের শেষের দিকে। আজকে অমিতাভ আমাদের সঙ্গে নেই সত্য, কিন্তু আজকে সে আমাদের সঙ্গে আছে অন্যভাবে। তার রচিত শব্দের মধ্যে দিয়ে।

কবি জুয়েল মাজহার বলেন, অমিতাভের কবিতা অনুবাদ করতে গিয়ে খেয়াল করেছি, তার কবিতার ভাবনা ছিল ইউনিভার্সাল। যখন তার কবিতা অনুবাদ করছিলাম, আমি যেন তার সঙ্গে অন্য ভাষায় কথা বলছিলাম। ভাষাকে ছাড়িয়ে সেটি আবেগ স্পর্শ করে।

এ সময় কবি ও কথাসাহিত্যিক অমিতাভ পালের সমগ্র লেখা এক মলাটে বন্দী এবং একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের বিষয়ে মতামত দেন জুয়েল মাজহার। একইসঙ্গে অমিতাভ পালকে একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।

কবি আহমেদ নকিব বলেন, অমিতাভ পাল তার কবিতা ও গল্পের শব্দগুলোর মধ্য দিয়ে সমাজ বদলের চেষ্টা করেছে। তিনি কোনো কিছুর সঙ্গে আপোষ করেননি কখনও।

কবি চঞ্চল আশরাফ বলেন, আমরাদের একটি সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে যে, আমরা স্মরণসভায় কবি বা লেখককে আবিস্কার করি, তার কবিতা ও লেখা পড়ি। জীবিত থাকতে তা করি না। আমি আমাদের সাহিত্যিকদের মধ্যে তার মতো আন্তরিকতা ও উষ্ণতা খুব কম দেখেছি। তিনি সরাসরি কথা বলতেন এবং কবিতাতেও তাই দেখেছি। শব্দের কসরত না করেও তিনি নগরজীবনের ক্রোধ, নিঃসঙ্গতা, বোধ তুলে ধরেছেন।  

টোকন ঠাকুর বলেন, অমিতাভ পাল হয়ে ওঠার কালে পত্রিকার সাময়িকীতে তার কোনো উপস্থিতি নেই। যে জায়গাগুলো বেজ ধরে ঢাকার সাহিত্য, সেখানে তিনি নেই। অথচ তার লেখার থেকে অনেক অগুরুত্বপূর্ণ লেখা সেগুলোতে স্থায় পায়। এমনকি বইমেলার পাঠকও তাকে কখনও পরিচিত লেখক হিসেবে পায়নি। কিন্তু সাহিত্যে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। সে বেঁচে থাকলে আরও কথা হতো। এখনও হবে, তবে তা তার রচনাবলির মাধ্যমে।

কবি গোলাম রব্বানী এবং আহমদ স্বপন মাহমুদ বলেন, একজন লেখক প্রকৃতির পুরস্কার। অমিতাভ পালও তাই ছিলেন। তিনি অভিজাত ঘরের সন্তান হয়েও সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। তার সাহচর্য বন্ধুজনকে ঋদ্ধ করেছে।

আয়োজনে অমিতাভ পালকে নিয়ে আরও কথা বলেন কবি ও চলচ্চিত্রকার রেজা ঘটক, মামুন খান প্রমুখ।

উৎসবে কবি অমিতাভ পালের কবিতা ও গল্পের ওপর আলোচনা, স্মৃতিচারণ ও তার প্রিয় গানের আয়োজনে মূর্ত হয়ে ওঠেন অমিতাভ পাল। আর অমিতাভ উৎসবে গান গেয়ে শোনান জনপ্রিয় ব্যান্ড চিৎকার, ভব অ্যান্ড কোং, পদ্ম ও তার দল, অতনু তিয়াশসহ অনেকেই। পাঠ করা হয় বিভিন্ন কবিতাও। পুরো আয়োজন সঞ্চালনা করেন কবি ও সাংবাদিক শিমুল সালাহ্উদ্দিন।  

উল্লেখ্য, অমিতাভ পালের জন্ম ১৯৬২ সালের ৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরে। তার বাবা আশুতোষ পাল ও মা শিউলী পাল। কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতক এই কবি সুইডেন থেকে পরিবেশসম্মত কৃষিতে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেন। এ পর্যন্ত অমিতাভ পালের পাঁচটি কবিতার বই ও কবিতাসমগ্রের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘রাতপঞ্জি’ নামের একটি গল্পের বই ও ‘একশ ফোঁটা বৃষ্টিবিন্দু’ নামের একটি গদ্যগ্রন্থ রয়েছে তার।

এর আগে ১৩ অক্টোবর মারা যান এই বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। সবশেষ তিনি একাত্তর টেলিভিশনের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২১
এইচএমএস/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।