ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

মাহফুজুল হক জগলুলের কবিতা

শিল্প-সাহিত্য ~ কবিতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২১
মাহফুজুল হক জগলুলের কবিতা

তার এমন একটি নিটোল মৃত্যু খুব দরকার

ডুবন্ত জাহাজের দিশেহারা যাত্রী যেমন
আকাঙ্ক্ষা করে একটি শান্ত প্রবালদ্বীপের আশ্রয়,
সে মৃত্যুকে ঠিক সেইভাবেই  আকাঙ্ক্ষা করেছিল।
গভীর রাতে নষ্ট রেলস্টেশনের অন্ধকার প্লাটফর্মে
সে অপেক্ষায় থেকেছে কোনো মাদকাসক্ত ছিনতাইকারীর,
টালমাটাল পায়ে যে তার বুক বা পেট এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেবে।


কিন্তু ছিনতাইকারীরা তাকে লক্ষ্য করেনি।
নগরের সবচেয়ে ভয়ানক পাড়াগুলোতে সে হেঁটে বেরিয়েছে
যেন কোনো নির্মম খুনি তাকে বেছে নেয়,
কিন্তু নগরের কোনো স্বভাবখুনি তাকে বেছে নেয়নি।
শক্তিমান মানুষদের সে রাগিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে
যেন তাদের চলতি পথে তারা তাকে সরিয়ে দেয়,
কিন্তু শক্তিমানেরা তার উস্কানি উপেক্ষা করেছে।
অথচ এক মায়াবী পূর্ণিমার রাতে
তার মৃত্যু এসেছে ঘুমের মতো নীরবে,
ফুলের ওপর থেকে যেমন শিশির গড়িয়ে পড়ে
ঠিক তেমন নিরবে।
এমন একটি নিটোল মৃত্যু তার খুব দরকার ছিল।


প্রার্থনা
(পাওলো কোয়েলহোর উপন্যাসের অনুপ্রেরণায়)

সে প্রার্থনা করছিল,
হে ঈশ্বর, তুমি আছো, কি নাই
আমি জানি না,
আমি বিশ্বাসী কিনা
আমি তাও জানি না,
তবু আমি তোমার কাছেই প্রার্থনা করছি।
প্রার্থনা করছি,
আমি যেন শুধুই আমাকে নিয়ে তৃপ্ত না হই,
কখনো আমার সঙ্গে পরম কাউকে পেতে যেন ভীত না হই,
আমি যেন দুঃখকে পাশে নিয়ে বসতে পারি,
আমি এমন কোনো গাঢ় ধূসর কক্ষে থাকতে চাই না
যেখানে দুঃখ প্রবেশ করতে পারে না।


আমার আত্মা থেকে তুমি জ্ঞানের তৃপ্তি সরিয়ে দাও,
আমি এখন জানি,
মানুষের জ্ঞান তোমার কাছে নিছক শিশুর পাগলামি।
আমি জ্ঞানের পাগলামি চাই না,
তুমি আমাকে হাত ধরে নিয়ে যাও তোমার ভালবাসার জগতে,
যেখানে চন্দ্র নেই, সূর্য নেই,
যেখানে বিন্দু বিন্দু তারা নেই আকাশে,
যেখানে পৃথিবীও নেই,
যেখানে গ্লাসভর্তি তরলের স্বাদ একদম ভিন্নতর,
আলতোভাবে আমার ওষ্ঠ যেখানে স্পর্শ করবে অমৃত,
যেখানে আমি হাঁটব কিন্তু পদক্ষেপ নেবো না,
যেখানে না তাকিয়েই আমি দেখবো শুদ্ধ সব দৃশ্যাবলি,
যেখানে আমি এমন একটি কবিতা লিখবো
যার শব্দ, কাগজ, কলম ও কালি হবো আমি নিজেই।
যেখানে স্বপ্ন ও সময় একই সুরে গান গা'বে,
মাতাল হাওয়ায় হাওয়ায় যেখানে নেচে উঠবে সমগ্র চরাচর,
যে হাওয়ায় আমি ইচ্ছেমতো উড়বো কিন্তু তোমাকে
একবারও বলব না আমাকে দুটো ডানা দাও।


পৃথিবী ও আমার শরীর

শিশিরভেজা শান্ত খালি পা দু'টি,
সুবিন্যস্ত ঘন ঘাসের নিচে ক্রমশ
ছড়িয়ে দিচ্ছে আমার বাড়ন্ত শেকড়।
মৃত্তিকার গলিত রস ও জল শুষে নিয়ে
সতেজ হয়ে উঠছে আমার সুঠাম কাণ্ড,
ডালপালা, প্রসারিত পাতার শিরা উপশিরা,
আর মাথার উপর সূর্যের দীঘল আলো ও তাপ
আমাকে বদলে দিতে তৈরি করছে নতুন নতুন স্নায়ুকোষ।
বানের উদ্বেল ঘোলা জল পাড় উপচে পাগলের মতো ধেয়ে এসে
উর্বরা পললভূমিতে আস্তে আস্তে নিমজ্জিত করছে আমার জঙ্ঘা,
এলোমেলো মাতাল হাওয়ার আঙুল
আমার চুলের গভীরে আদরের বিনুনি কাটছে,
প্রশান্ত নির্ভরতায় চোখ আমার বুজে আসছে পরম সুখে।
তুলোর মতো নরম মেঘের ছায়ারা
আমার শরীরটাকে প্রদক্ষিণ করছে গভীর মনযোগে।
প্রথম স্পর্শের মতো পাগল হাওয়ায় হাওয়ায়
থরথর করে করে কেঁপে উঠছে গাছের পাতা।
একটি ক্ষুদ্র গোলাকার নামহীন খয়েরি-লাল পোকা
নির্দ্বিধায় উড়ে এসে বসেছে আমার মধ্যমায় গোড়ায়।
মনে হচ্ছে যেন জ্বলজ্বলে আকিক পাথরের আংটি পড়েছি হাতে।
একটা অদ্ভুত সবুজ পথভোলা সুঁইচোরা
নিঃশঙ্কায় এসে বসেছে আমার ডান কাঁধের মাঝামাঝি।
নিজেকে এখন বৃক্ষ ভাবতে বেশ লাগছে।
এক সময় লাল হতে হতে সূর্য চলে গেলে
পাখিকেও অশেষ অনিচ্ছায় উড়ে যেতে হয়,
মেঘেদের ছায়া মিশে যেতে হয় অন্ধকারে,
তবু টের পাই,
মেঘেরা এখন নেমে আসছে আরো কাছাকাছি,
পাতার ফাঁকে জ্বলজ্বল করছে সুঁইচোরার সম্মোহিত দু'চোখ,
হলুদ রঙের আলোয় জ্বলজ্বল করছে আমার ঘরের জানালা,
ঘর এখন আমাকে ডাকছে, ডাকবেই,
অন্ধকার নেমে এলে ঘরকে ডাকতেই হয়।
কিন্তু ততক্ষণে আমার পায়ের নিচের
শেকড় ছড়িয়ে গেছে অনেক গভীরে,
মাতাল হাওয়া আরো মাতাল হয়েছে,
আমার শরীর এখন হয়ে উঠেছে পৃথিবীর শরীর।
প্রথম প্রহরে অনুরাগের বিন্দু বিন্দু  শিশির
ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার পায়ের নিচের ঘাস, আমার শরীর,
গাছের পাতা আর আমার ঘরের ছোট্ট চৌকোনা জলছাদ।
অবশেষে, বৃষ্টি হেসে হেসে আমাকে নিতে চাইছে দীর্ঘতর রিমান্ডে,
কোনো কঠিন প্রশ্নবাণে নয়,
বরং মায়াবী রিমান্ডে বৃষ্টি সারারাত শুধু তার নিজের গল্প শোনায়,
গল্পের পর গল্প, আর গল্প, ঝিমঝিম, রিমঝিম গল্প।
অকস্মাৎ মাস্তানের মতো কোত্থেকে জোছনা এসে
ছিনতাই করে নিচ্ছে আমার শরীর,
তন্নতন্ন করে তল্লাশি করছে আমাকে আপাদমস্তক।
ঘোরলাগা গৃহত্যাগী জোছনায় আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,
সময় ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে,
নিমগ্ন লজ্জায় পৃথিবীর দু'চোখ বুজে আসছে,
তার দ্রাঘিমা আর অক্ষরেখারা থরথর করে কেঁপে উঠছে।
সুদূর নক্ষত্রের আলোয় আলোয়
বিদেহী মাতাল গন্ধরাজ এখন,
মৈথুনরত পৃথিবীর নগ্ন শরীরে
ছড়িয়ে দিচ্ছে তীর্থের গুপ্ত সৌরভ।


পৃথিবীর আত্মা

দীর্ঘ নিস্তব্ধতার পর হৃদয় যখন জেগে ওঠে,
পৃথিবীর আত্মা তখন তাকে তার কন্ঠস্বর শোনায়।
পরম আদরে,
সে তার চব্বিশটি পাঁজর অস্থি উন্মুক্ত করে দেয়।
পর্বত শৃঙ্গের
নিস্তব্ধ গাত্রে গাত্রে বাতাসের প্রবল ঘর্ষণের
শব্দের মতো ধ্বনিত ফিসফিস কন্ঠে সে বলে,
ধ্যানমগ্ন শুদ্ধ কবি ও নগ্নপদ কৃষকের মতো,
তুমি কৃতজ্ঞ ও সৃষ্টিশীল হতে চেষ্টা করো।
যারা সর্বাবস্থায় সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ
ঈশ্বর তাদের হৃদয়ে বাস করেন।
তুমি চোখ বন্ধ করে তাকাও,
তোমার আমিত্ব ও ব্যক্তিত্বের মুখোশগুলে ছুড়ে ফেলে
পৃথিবীর বিন্যস্ত চিবুকে তোমার চোখ রাখতে চেষ্টা করো,
দেখবে, সুখের সংকেত ছড়িয়ে আছে তোমার চারপাশে,
তুমি সংকেতগুলো পড়তে চেষ্টা করো।
সমুদ্রের ঢেউ পড়তে চেষ্টা করো,
সূর্যের আলো পড়তে চেষ্টা করো,
চাঁদের পূর্ণিমা পড়তে চেষ্টা করো,
বাতাসের ছায়া পড়তে চেষ্টা করো,
এবং দিন ও রাত্রির হ্রাসবৃদ্ধির গণিতটা বুঝতে চেষ্টা করো।
তুমি কি  লক্ষ্য করেছো,
একটি ক্ষুদ্র বালুকণাকে তার মসৃণতর পৃষ্ঠদেশ পেতে
আর,
ঐ বিশাল স্তব্ধ জলরাশিকে বিস্ফোরিত ঝরনা হতে
কেন হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।
তুমি কি এখন তা বুঝতে পারছো?


শুধু তুমি একদিন সেটা লক্ষ্য করবে বলে
ওরা হাজার বছর তোমার জন্য অপেক্ষা করেছে,
তাই প্রকৃতির সম্মিলিত সকল ধ্বনি ও শব্দ মিলে
যে ঋজু ও গভীর বাক্যটি সৃষ্টি হয়,
একটিবার তুমি সেটি উচ্চারণ করতে চেষ্টা করো,
দেখবে তুমি পাহাড়ের ধ্যানমগ্নতা বুঝতে পারছো,
নদীর বিধৃত সুর, লয় ও ঝংকার বুঝতে পারছো,
বৃক্ষ ও প্লাবন ভূমিতে উদগমিত বীজের উত্তাপ বুঝতে পারছো,
তুমি, সূর্যালোক ও অঙ্কুরের সংশ্লেষণ বুঝতে পারছো,
আর, মেঘমালা ও মরুদ্যানের সম্প্রীতির সূত্র বুঝতে পারছো,
তুমি, আদিম সংকেত ও সৃষ্টির কথা বুঝতে পারছো।
এবং অবশেষে, তুমি দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাত রূপ ও অরূপকে বুঝতে পারছো।
মনে রেখো, অনাবিল সমুদ্র সৈকত বা উদার মরুভূমির বিস্তার, নির্মোহ নদী, নির্ঘুম পাহাড়, ঘন সবুজ বনভূমি,
কিংবা উন্মুক্ত ঝর্নাধারার নিঃস্বার্থ জলরাশি,
এরা কেউই একদম লোভী নয়।
এরা সংঘবদ্ধভাবে সেই অনাদিকাল থেকে
তোমাকে কোন নিঃশর্ত ভালোবাসা
আর নিখাঁদ সমর্পণের কথা শেখাতে চাচ্ছে
তুমি নিশ্চয়ই
এখন তা কিছুটা আঁচ করতে পারছো।

( Paulo Coelho এর Alchemist উপন্যাসের কয়েকটি লাইন পড়তে গিয়ে চট করে এই কবিতাটির ভ্রুণ আমার মাথায় জন্ম নেয়, সে কারণে কবিতাটি তার কাছে ঋণী )


অন্ধ বাস ড্রাইভার

এক অন্ধ বাস ড্রাইভার,
ডানে কর্কট বামে মকর ক্রান্তিরেখার ঠিক মাঝখান দিয়ে
বিষুবরেখা বরাবর সোজা পশ্চিম দিকে
বিরামহীন তার বাস চালিয়ে চলেছে।
তার মুখমণ্ডলে কোনো অভিব্যক্তি নেই,
তার মাংসপেশীতে প্রান্তরের কোনো উত্তেজনা নেই,
তার হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়েও বেশ কিছুটা
ধীর ও নিয়ন্ত্রিত,
অসহ্য রকম প্রশান্ত ও নিত্যকার গোরখোদকের
মতো নির্বিকার তার মুখচ্ছবি।
বাস যতো এগুচ্ছে,
তার গুচ্ছ গুচ্ছ লম্বা চুল
আস্তে আস্তে ধূসর থেকে শাদা হয়ে যাচ্ছে।
তার কপালে দীঘল বলিরেখার খাঁজগুলো
গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে,
ক্রমশ সামনের দিকে নুয়ে পড়ছে তার মেরুদণ্ড।
বাসে অনেক যাত্রী,
তারাও অধিকাংশ অন্ধ ও অবিচলিত ।
কেউ কেউ যারা অন্ধ নয়
তারাও কলমের কালি মেখে নিয়েছে তাদের দু’চোখে
যেনো সহযাত্রীরা কিছুতেই তাদের চক্ষুষ্মান না ভাবে।
এক যাত্রায় পৃথক ফল শাস্ত্রবিরুদ্ধ,
বুদ্ধিমানেরা কখনো শাস্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় না,
শাস্ত্র বদলে গেলে তখন তারা পক্ষ বদলায়,
অন্ধত্বই এ যাত্রার শুদ্ধতম শাস্ত্রাচার।
বাসভর্তি দলবদ্ধ সব অন্ধ যাত্রী নিয়ে
আদিম গুহার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা প্রকাণ্ড সরিসৃপের মতো
হঠাৎ নিঃশব্দে বাস এসে থামলো ঠিক আমার সামনে।
বাস স্ট্যান্ডে শুধু আমি একা দাঁড়িয়ে,
আমার হাতে  কোনো  লাগেজ নেই,
আমার মস্তিস্কের মধ্যে  কোনো  গন্তব্য নেই,
আমার শরীরের ভাষায় যাত্রার  কোনো  প্রস্তুতি নেই,
এতো অপ্রস্তুত তবু কেন আমি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি,
আমি ঠিক মনে করতে পারছি না।
ড্রাইভার আমার আপাত স্থবিরতায় একইসাথে বিস্মিত ও বিরক্ত।
অন্যদিকে একজন অন্ধ ড্রাইভার কী করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে
আমি খুব মনোযোগ দিয়ে সেটা বুঝতে চেষ্টা করছি।
শুধু ড্রাইভার একা নয়,
অন্ধকার সারি সারি গর্তের মতো জানালার ওপাশ থেকে
বাসের সব অন্ধরাও গভীর বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে
শুধুমাত্র আমার অবাঞ্ছিত খোলা চোখ দু'টোকে লক্ষ্য করে,
তাদের চোখে সীমাহীন অস্বস্তি আর শঙ্কা,
মনে হচ্ছে যাত্রাপথে চোখ খুলে রাখাটা এক ভয়াবহ পাপাচার।
ওদের কোটরাগত যমজ চোখগুলোতে আমার প্রতি এখন সুস্পষ্ট কুণ্ঠা ও চাপা ভীতি,
তারা তাদের অনাগত সুখদ গন্তব্যের সাফল্য-সম্ভার
চক্ষুষ্মান কারো সাথে ভাগাভাগি করতে ভয় পাচ্ছে,
আমার সংশয় ও বিলম্বে ওরা ক্রমশ অরক্ষিত বোধ করছে।
আমার এক পা মোচড় খাওয়া প্রকাণ্ড শেকড়ের মতো খামচে ধরেছে মাটি,
আর অন্য পা আলতো করে তুলেতে যাচ্ছি বাসের ধাতব পাদানিতে।
আমি এখনো বুঝতে পারছি না কোথায় যাবো,
তবে আমি টের পাচ্ছি,
সরিসৃপের তীক্ষ্ণধার নখরের মতো পা ফেলে
আমাকে ছেড়ে এখনই ধীরে ধীরে বাস আবার চলতে শুরু করবে,
আমার বরাদ্দ সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে,
শেষ মুহূর্তে আমার সামনে অভিলাষের সব চকচকে রত্নপাহাড় উঁকি দিচ্ছে,
তারপরও আমি পুনর্বার আমার গন্তব্য কোথায় এবং কেন
তা গভীরভাবে মনে করার চেষ্টা করছি।
এরই মাঝে হঠাৎ অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি,
আমার মাথার চুলগুলো এখন ওদের মতোই একটি একটি করে দ্রুত
শাদা হতে শুরু করেছে,
আমার মুখের চামড়া ক্রমশ ভয়ানকভাবে কুঁচকে যাচ্ছে,
আমার দৃষ্টি আস্তে আস্তে গভীর গন্তব্যহীন অন্ধকারের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে,
সর্বগ্রাসী এক মায়াবী নেশা আমার মস্তিস্ককে দ্রুত ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে ,
আমি প্রাণপণ আমার দু'চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করছি,
এবং ঘুমিয়ে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে চিৎকার করে বলতে চেষ্টা করছি,
চক্ষুষ্মান হওয়াটা  কোনো  অপরাধ নয়, বরং চোখ বুঁজে থাকাটাই মহাপাপ,
পথ যতো দীর্ঘ হোক তবু নিজের আলোয় আমি পথ খুঁজে নিতে চাই।
আমি বিড়বিড় করে আরও অনেককিছু বলতে চাচ্ছিলাম,
কিন্তু ওরা আমার কোনো  কথা শুনছে কিনা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না,
কেননা ততক্ষণে আমাকে ফেলে রেখে অন্ধ ও শঙ্কিত বাস
হন্তদন্ত হয়ে আবার খুব দ্রুত চলতে শুরু করেছে।


বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।