ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) ‘দ্য রানা প্লাজা এক্সপেরিয়েন্স: ইনসুরিং ওয়েলবিয়িং অ্যান্ড ট্রান্সফর্মিং দ্য আরএমজি ইন্ডাস্ট্রি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) আইবিএ’র প্রফেসর এম শফিউল্লাহ অডিটোরিয়ামে এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বইটি সম্পাদনা করেছেন ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ এ মোমেন ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার।
বইয়ের গবেষণা কার্যক্রমের সমন্বয় করেন আইবিএ’র সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ ও প্রভাষক ফাতেমাতুজ যাহরা সাকি।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় যারা নিহত হয়েছেন ও যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য এ বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে।
অধ্যাপক মোমেন বইটি সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। বইটিতে তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিহাস, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় অস্থিরতা, পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ও পরে নানা কাজের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এ গবেষণার জন্য ২৭টি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। বইটিতে ক্রেতা, বিদেশি ব্র্যান্ড, সাংবাদিক, শ্রমিক সংগঠন, পোশাককর্মী, সরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম, প্রত্যক্ষদর্শী, ফটোসাংবাদিক ও ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ৩৬ জন আহতের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। আইবিএ’র গবেষকরা ১০০টি কারখানা থেকে বিভিন্ন স্তরের ৫০০ জন কর্মীর ওপর জরিপ করে। জরিপ থেকে জানা যায়, ৯৩ শতাংশ শ্রমিক কমপক্ষে ৫ বছর শিল্পে কাজ করতে আগ্রহী। ৯১.২ শতাংশ কর্মী উল্লেখ করেন যে তারা সময়মতো বোনাস পান। ৯৪.৪ শতাংশ কর্মী তাদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশ শ্রমিক তাদের বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট। টয়লেট স্যানিটেশন, লাঞ্চ আওয়ার, ক্যান্টিন, বিশুদ্ধ পানীয় জল, পরিবহন সুবিধার মতো কর্মক্ষেত্রের সুবিধাগুলোর বিষয়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ কর্মীদের নিরপেক্ষ থেকে উচ্চ সন্তুষ্টি সম্পর্কে জানিয়েছেন। ৪ শতাংশ কর্মী কর্মক্ষেত্রে কোনো আঘাতের সম্মুখীন হননি। ৮৪.২ শতাংশ শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করেন। গড়ে ৭৫ শতাংশ কর্মী বেতন নিয়ে মাতৃত্ব ও অসুস্থতার ছুটি পান। ৬৯.৪ শতাংশ তাদের কর্মস্থল থেকে ফায়ার ড্রিল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে আলোচকদের প্যানেলে নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম আরএমজি শিল্পকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, সেই সময়টা আমরা সবাই সম্মিলতভাবে এক হয়ে কাজ করেছি। রাজনীতিবিদ, সরকার, উদ্যোক্তা, শ্রমিক, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের সবাই এক হয়ে রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনার সময় আমরা কাজ করেছি। সেই দুর্ঘটনার কারণে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়, আমি সেই চ্যালেঞ্জ জয় করার মাধ্যমে এখন বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে অন্যতম। আমাদের সামগ্রিক অগ্রগতি হচ্ছে, আমরা সেই অগ্রগতিকে আরও গবেষণার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে পোশাক শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান আরএমজি শিল্পের রূপান্তর ও শ্রমিকদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএ’র ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশ বাংলাদেশকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা এবং শ্রমিক ও সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা সামনে আরও জোরালোভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামসহ প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম, শ্রমিক সংগঠন, ক্রেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৩
আরবি