ঢাকা: সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব ও বিদুৎ সাশ্রয়ী এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদনে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে ওয়ালটন।
গ্রাহকদের জন্য নিশ্চিত করছে সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা।
গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে ‘ট্রেইনিং অব ট্রেইনার্স অন নিউ টেকনোলজি অব আর-২৯০ অ্যান্ড আর-৩২’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
২০ মে শুরু হয়ে কর্মশালাটি চলে ২৪ মে পর্যন্ত। কর্মশালায় পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করে ইলেকট্রনিক্স পণ্য সার্ভিসিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অধিদপ্তর ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ আয়োজনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালা শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে এইচপিএমপি স্টেজ-২ প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইলিয়াস মাহমুদের স্বাক্ষরিত সনদ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় সারাদেশ থেকে ওয়ালটনের কমপক্ষে ৫০ প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান ও সার্ভিস এক্সপার্ট অংশ নেন।
উদ্দেশ্য, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৫শ টেকনিশিয়ানকে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া। পাশাপাশি তাদের মধ্যে এসি সার্ভিসিংয়ের সময় কীভাবে পরিবেশ দূষণরোধ করা যায় এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো।
কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোবারাক হোসাইন সাজিদ, ওয়ালটনের রেসিডেন্সিয়াল ও কমার্শিয়াল এসির চিফ বিজনেস অফিসার (সিবিও) তানভীর রহমান, চিফ সাপ্লাই চেইন অফিসার মোহাম্মদ মহসীন সরদার, রেসিডেন্সিয়াল ও কমার্শিয়াল এসির ডেপুটি সিবিও সন্দীপ বিশ্বাস, রেসিডেন্সিয়াল ও কমার্শিয়াল এসির সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান আরিফুজ্জামান, রেসিডেন্সিয়াল ও কমার্শিয়াল এসির রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আর অ্যান্ড আই) বিভাগের প্রধান আরিফুল ইসলাম, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান আসিব-উল হক এবং প্রসেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান আসিফ আহমেদ শিশির।
এছাড়া ওয়ালটনের প্রসেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের উপপ্রধান মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ট্রেইনার মো. সুলাইমান এবং আবু সাইদ।
ওয়ালটনের রেসিডেন্সিয়াল ও কমার্শিয়াল এসির সিবিও তানভীর রহমান বলেন, বর্তমানে সারাবিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় পরিবেশ সুরক্ষা। পরিবেশ দূষণ কীভাবে কমিয়ে আনা যায় এ বিষয়ে ইউএনডিপি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে দীর্ঘদিন ওয়ালটন কাজ করছে। ওয়ালটন শুধু পণ্য উৎপাদনই করছে না, পরিবেশ নিয়েও যথেষ্ট সচেতন। এসি উৎপাদনে শতভাগ কমপ্লায়েন্স রক্ষা ও ইনভার্টার টেকনোলজি ব্যবহার করছে ওয়ালটন। এসিতে রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে আর-২২ এর পরিবর্তে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে আর-৩২ গ্যাস। যা পরিবেশকে রাখে নির্মল ও সুরক্ষিত। এছাড়া চলতি বছরেই এসি উৎপাদনে রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে যুক্ত হচ্ছে আর-২৯০ গ্যাস। যা পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিক রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
ওয়ালটনের রেসিডেন্সিয়াল ও কমার্শিয়াল এসির আর অ্যান্ড আই প্রধান আরিফুল ইসলাম জানান, ওয়ালটনই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ সিএফসি এবং হাইড্রো ফ্লুরো কার্বন (এইচএফসি) গ্যাসমুক্ত পরিবেশে পণ্য উৎপাদন করছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান স্বরূপ জাতীয় পরিবেশ পদক পেয়েছে ওয়ালটন।
সার্ভির্সিংয়ের ক্ষেত্রে আর-৩২ এবং আর-২৯০ গ্যাস বিষয়ে মাঠপর্যায়ের টেকনিশিয়ানদের মধ্যে গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্যেই এ কর্মশালার আয়োজন। পাশাপাশি টেকনিশিয়ানরা যাতে আর-২৯০ রেফ্রিজারেন্ট যুক্ত ওয়ালটন এসি স্থাপনে সতর্ক থাকে, পারদর্শী হয় ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে নিজে সচেতন হয় এবং গ্রাহকদের ভালো সার্ভিস দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহায়তায় এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশ ও দেশের বাইরে পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য সরবরাহ করে আসছে। এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ওয়ালটন।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোবারাক হোসাইন সাজিদ বলেন, এ কর্মশালায় সার্ভিস এক্সপার্টদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবে প্রয়োগ করে পরিবেশ সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারবে ওয়ালটন। বাংলাদেশে পরিবেশ সুরক্ষায় এইচএফসি ফেজ আউট প্রকল্পের আওতায় ওজন স্তরের ক্ষয়রোধে কাজ করছে ইউএনডিপি বাংলাদেশ। প্রজেক্টের অধীনে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে তার উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো বাংলাদেশের মাঠপর্যায়ের টেকনিশিয়ানরা পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর গ্যাসের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারছেন। পরিবেশ সুরক্ষায় এক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে ওয়ালটন।
জানা গেছে, মন্ট্রিল চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফ্রিজ ও এসির কম্প্রেসারে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী এইচএফসি গ্যাস ব্যবহার বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে একবিংশ শতাব্দী শেষে অন্তত শূন্য দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নরোধ করা সম্ভব হবে।
ইউএনডিপির সহযোগিতায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে বাৎসরিক প্রায় ২৩০ মেট্রিক টন এইচএফসি গ্যাসের নিঃসরণ রোধ করছে ওয়ালটন। এর মাধ্যমে বাৎসরিক প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে। এভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে ওয়ালটন তথা বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৩
এএটি