ঢাকা: ইউনিলিভার, যুক্তরাজ্য সরকার এবং ইওয়াই-এর নেতৃত্বাধীন ইমপ্যাক্ট এক্সেলেরেটর ‘ট্রান্সফর্ম’ জানুয়ারি (৭ জানুয়ারি) দুটি বাংলাদেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশী ফার্মার ও টেকনো প্লাস্টিক সল্যুশনের জন্য সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা করে অনুদান ঘোষণা করেছে। ৫০টিরও বেশি আবেদনকারীর মধ্য থেকে নির্বাচিত এ প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানোর জন্য অভিনব সমাধান দিয়েছে।
দেশী ফার্মার একটি অ্যাগ্রি-টেক প্ল্যাটফর্ম, যা ক্ষুদ্র কৃষকদের বাজারে প্রবেশে সহায়তা এবং খাদ্য অপচয় কমানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ প্ল্যাটফর্মটি অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড সমাধান দেওয়ার মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারীদের বাদ দিয়ে কৃষকদের সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে সংযুক্ত করে যা কৃষকদের আয় বাড়ায় এবং ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ এবং সন্ধানযোগ্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে।
বৃহত্তর পরিসরে জলবায়ু-বান্ধব কৃষির প্রচার এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগ বাড়াতে ট্রান্সফর্ম-এর এ সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশী ফার্মার ট্রান্সফর্মের সঙ্গে প্রথম বছরে তিন হাজার কৃষক এবং ২০ হাজার ভোক্তাকে উপকৃত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
টেকনো প্লাস্টিক সল্যুশন সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে প্লাস্টিক সংগ্রহের পরিকাঠামো বাড়ায় এবং এর সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও প্লাস্টিক সংগ্রহের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করে। ট্রান্সফর্মের সহায়তায়, এ প্রতিষ্ঠান কুয়াকাটায় একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করবে, যেখানে বিশেষ লক্ষ্য থাকবে ফেলে দেওয়া মাছ ধরার জাল এবং পিইটি বোতলগুলো সংগ্রহ করা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মাসে ১০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চ্যালেঞ্জ শীর্ষক একটি উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়। এর লক্ষ্য ছিল জলবায়ু সহনশীলতা নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করা এবং সহায়তা দেওয়া।
অনুদান তহবিলের পাশাপাশি, ট্রান্সফর্ম ব্যবসায়িক অন্তর্দৃষ্টি, বাস্তব অভিজ্ঞতা, রিসোর্স ও নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব দূরদর্শী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
এবারই প্রথম ইউনিলিভার, যুক্তরাজ্য সরকার ও ইওয়াই বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে এ কর্মসূচির জন্য উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করা এবং নির্বাচন করার জন্য একত্রে কাজ করেছে। এটি ট্রান্সফর্মের ভারতের ও পূর্ব আফ্রিকার সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলোর অনুরূপ।
ট্রান্সফর্ম, হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের দক্ষিণ এশিয়া প্রধান রবিরাজ দুরবাস বলেন, স্থানীয় ইমপ্যাক্ট এন্টারপ্রাইজগুলো তাদের এলাকাভিত্তিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি অনন্য অবস্থানে রয়েছে। তাই আমাদের ট্রান্সফর্ম-এর কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, আমরা সাজিদা ফাউন্ডেশন এবং ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট-এর সঙ্গে কাজ করে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে সেরা উদ্ভাবকদের খুঁজে বের করি, যাদের কাছে সাধারণত আমাদের পৌঁছানোর সুযোগ কম। আর্থিক সহায়তা, পরামর্শ ও সাপ্লাই চেইনে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে তাদের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও পরিবেশগত পরিবর্তন সাধন করতে পারি।
সাজিদা ফাউন্ডেশনের ইমপ্যাক্ট পার্টনার্স প্রধান সারাহ ইকবাল বলেন, বাংলাদেশে লক্ষণীয় পরিবর্তন আনতে ট্রান্সফর্ম ও ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে পেরে আমরা আনন্দিত। অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে তাদের ব্যবসা এবং এর প্রভাবকে প্রসারিত করে তা দেখার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছি।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনের জলবায়ু ও পরিবেশ উপদেষ্টা মারজান নূর বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে, আমরা জানি যে, শুধু সহায়তার মাধ্যমে জাতিসংঘের এসডিজি লক্ষ্যগুলো অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন এমন একটি বহুখাতভিত্তিক সহযোগিতা, যা আমাদের সম্পদ, নেটওয়ার্ক এবং দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, স্থানীয় বাস্তবতা সম্পর্কে সবচেয়ে ভালোভাবে অবগত স্থানীয় উদ্যোক্তাদের হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ চ্যালেঞ্জ আমাদের উভয় প্রচেষ্টার একটি উদাহরণ।
ইওয়াই ইন্ডিয়ার কনসালটিং পার্টনার প্রজ্ঞাল সিং বলেন, সামাজিক উদ্যোগগুলোতে কিছু সেরা ধারণা রয়েছে যা জাতিসংঘের এসডিজি লক্ষ্য পূরণের জন্য এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনার জন্য সহায়তা করতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, পরিবেশে তাদের প্রভাব বাড়াতে অর্থায়ন ও ব্যবসায়িক পরামর্শের সার্বিক এ সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশী ফার্মার ও টেকনো প্লাস্টিক সল্যুশনের জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত ট্রান্সফর্ম ঠিক তাই করছে। আমরা আশাবাদী যে তারা এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র কৃষকদের জীবিকা উন্নত করতে এবং সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।
ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের বাংলাদেশ ডিরেক্টর ইশরাত ওয়ারিস বলেন, জলবায়ু সহনশীলতার এজেন্ডা অনুসারে, ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনা উন্মোচনে ট্রান্সফর্মকে সহায়তা করতে পেরে গর্বিত।
ট্রান্সফর্ম ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলের ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ভূমিজ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। সবার জন্য স্বাস্থ্যকর পাবলিক টয়লেট এবং পরিচ্ছন্নতার সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য কাজ করা এ প্রতিষ্ঠানটি দিনে সাত হাজারেরও বেশি লোককে সেবা প্রদান করে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান বপ ইঙ্ক এর ‘রিফিল বাংলাদেশ’, যারা সিঙ্গেল-ইউজ স্যাশের কারণে সৃষ্ট প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা মোকাবিলায় একটি উল্লেখযোগ্য রিফিল স্টেশন মডেল তৈরি করে সরবরাহ করে।
বিশ্বব্যাপী, ট্রান্সফর্ম ১৭টি দেশের ১২৫টিরও বেশি প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করেছে এবং এর মাধ্যমে এক কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। ট্রান্সফর্ম সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, ভিজিট করুন: transform.global এ ওয়েবসাইটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৫
আরআইএস