ঢাকা: দিল আফরোজ সাইদা ‘সাইদাস কিচেন’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও শেফ। এছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একজন এসেসর।
নিয়মিত রেসিপি রাইটার হিসেবে কাজ করছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ম্যাগাজিনে। এছাড়াও রান্নার প্রোগ্রাম করছেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন মিডিয়াতে। দিল আফরোজ সাইদা অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে কালিনারি আর্টে ডিপ্লোমা করেছেন ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে। ইন্টার্নশিপ করেছেন প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁ হোটেলে। এছাড়া ইউএসএ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কেক ডেকোরেশানও ডেজার্টের ওপরে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধিনে কুকিং লেভেল-১ ও বেকিং লেভেল-৪ সম্পূর্ণ করেছেন। রান্না বিষয়ে নানা কথা হয়েছে তার সঙ্গে।
প্রশ্ন: রান্নার সঙ্গে সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি থাকলে সে সম্পর্কে জানতে চাই।
দিল আফরোজ সাইদা: প্রথম আমি রান্না শুরু করেছি যখন আমি ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি। তখন বই দেখে দেখে বিভিন্ন রান্না করার চেষ্টা করতাম। আবার টিভিতে কোনো রান্না দেখলেও সেটা খুব তাড়াতাড়ি ডাইরিতে লিখে রাখতাম। তখন বই দেখে একটা রান্না করছিলাম, গরুর মাংস রান্না করার পর সবাই যখন খাচ্ছিল তখন বলছিল তরকারিটা এত সাদা সাদা কেন মরিচ দাও নি? তখন আমি বললাম, মরিচের কথা তো লেখা ছিল না, লেখা ছিল লঙ্কা। তারপর থেকেই শুরু আমার বিভিন্ন জায়গায় রান্না শেখা।
প্রশ্ন: কোনটিকে নিজের বিশেষ রান্না মনে করেন এবং কেন?
দিল আফরোজ সাইদা: ঝাল রান্নার মাঝে মাংস, আর বিশেষ রান্নার মাঝে হচ্ছে, মিষ্টি জাতীয় রান্না। কারণ মিষ্টি জাতীয় রান্নায় একটা সৃজনশীল পরিবেশনার ব্যাপার থাকে, এছাড়া রান্নাটা কোনো কারণে যদি নষ্ট হয়ে যায় বা ভেঙে যায় সেটাকেও শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই সাজিয়ে পরিবেশন করা যায়। এজন্য আমার মনে হয় আমার স্পেশালিটিটা মিষ্টি বা কেক জাতীয় খাবারই।
প্রশ্ন: রন্ধনশিল্পী হিসেবে নিজে কী খেতে ভালোবাসেন? বাঙালি খাবার নাকি অন্য কোনো দেশের কুইজিন?
দিল আফরোজ সাইদা: আমি নিজেও সবসময় মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করি কিন্তু মিষ্টি জাতীয় খাবারের মজাটা ঠিকমতো পেতে হলে কিছু ঝাল জাতীয় খাবারও খেতে হয় সেজন্য আমি সেটা খাই মিষ্টি খাবারটাকে আরও ভালো লাগার জন্য। বাঙালি খাবারও পছন্দ করি আবার অন্য দেশের খাবারও পছন্দ করি। কারণ একই খাবার আমরা যদি প্রতিবেলায় খেতে থাকি কখনই সেটা ভালো প্রিয় খাবার থাকবে না। আমাদের প্রতি বেলায় ভালো লাগে না, বৈচিত্র্য আনার জন্য সব দেশের রান্নাই করি, খাই ও পছন্দ করি।
প্রশ্ন: স্বাদ ও সুস্থতা– এ দুটো বিষয় এক সঙ্গে ঠিক রাখতে গেলে আমাদের রোজকার রান্নাঘরে কোনো দিকটাতে বদল আনা দরকার বলে মনে করেন?
দিল আফরোজ সাইদা: স্বাদ ও অসুস্থতা দুইটাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ শুধু স্বাদ দেখলে হবে না, সুস্থতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমার কাছে মনে হয় আমাদের প্রতিদিনের খাবারে ব্যবহারের তেল অবশ্যই ভালো মানের হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: রান্নায় তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যকর নয়, এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু বাঙালির আবার তেল ছাড়া চলেও না। সেক্ষেত্রে কী করা যায়?
দিল আফরোজ সাইদা: অনেক সময় আমরা রান্নায় যেমন ভাজি ও তরকারিতে বেশি তেল ব্যবহার করে ফেলি, সে ক্ষেত্রে রান্না করার পর বাড়তি তেলটা বাদ দিয়ে পরিবেশন করা উচিত তাতে খাবারের স্বাদও ঠিক থাকবে, বাকি তেলটাও খাওয়া হচ্ছে না। তবে রান্না সরিষা তেল খেতে খাবার যেমন স্বাদ হয়, তেমনি স্বাস্থ্যকরও। কারণ সরিষার তেলে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগের জন্য উপকারী। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়। এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস চুলের বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে ও স্কিন ভালো রাখে। এটি উচ্চ তাপে রান্না করলেও ক্ষতিকর হয় না।
প্রশ্ন: আপনি রান্নায় কোন তেল বেশি ব্যবহার করেন এবং ব্যক্তিগত পছন্দ কী?
দিল আফরোজ সাইদা: আমি রান্নায় সব ধরনের তেলের ব্যবহার করি সেটা বিভিন্ন ধরনের রান্নার প্রয়োজনে, যেমন আমি সরিষার তেল ব্যবহার করি যেকোনো ধরনের শাক, ডাল ও ভর্তাতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাংস ও ছোট মাছ রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করি। স্বাদের দিক দিয়ে থেকে সরিষার তেলের আসলে তুলনাই হয় না। আগের দিনে তো আপনারা জানেন সবাই সরিষার তেলটাই ব্যবহার করা হতো। পরে সয়াবিন তেলের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে তো পুষ্টি নামেই সরিষার তেলের একটি ব্র্যান্ড আছে। সরিষার তেলের পুষ্টি গুণাগুণ যে শুধু রান্নার বেলাতে কাজে লাগে, তা কিন্তু নয়। ছোটবেলায় গায়ে সরিষার তেল মেখে স্নানে যাবার কথা মনে আছে না? ওভাবেও কিন্তু অনেক উপকার পাওয়া যায়। সরিষার তেল গায়ে মাখলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর চুল কালো করতেও তো সরিষার তেলের জুড়ি মেলা ভার।
প্রশ্ন: রান্না নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বা পরিকল্পনা কী?
দিল আফরোজ সাইদা: আমার নিজের একটা কিচেন স্টুডিও আছে যেটাতে আমি আমার কুকিং শো, কুকিং ক্লাস, রেসিপি শো ও ফুড স্টাইলিং করে থাকি, ভবিষ্যতে আমার ইচ্ছা এটা শুধু স্টুডিও না এই কাজগুলোর পাশাপাশি একটা বড় ইনস্টিটিউট আকারে রূপ দেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
আরআইএস