এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল সম্ভাবনাময় বাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে আরো উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে, একটি যুগান্তকারী ইভেন্ট হিসেবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪’। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ফ্ল্যাগশিপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড-এর আয়োজনে, এই দুই দিনের ইভেন্টে অংশ নিবেন বিভিন্ন দেশের স্টার্টআপ, এন্টারপ্রাইজ, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, এঞ্জেল ইনভেস্টর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, থিংক ট্যাংক এবং শিল্প বিশেষজ্ঞরা।

২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট অনুষ্ঠিত হয় এবং গত বছরের ব্যাপক সাফল্যের ধারাবাহিকতায়, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এই বছর আবারো এক বর্ণাঢ্য ইভেন্টের আয়োজন করতে যাচ্ছে। গত বছর সামিটে ৫০০০-এরও বেশি মানুষের উপস্থিতি, এই বছর ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪’-কে আরো বিশাল, আরো উন্নত এবং আরো ফলপ্রসূ করে তুলতে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

বাংলাদেশে গত দশকে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই শেষ পাঁচ থেকে ছয় বছরে এসেছে। বর্তমানে দেশে শহর ও গ্রামীণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ২,৫০০ সক্রিয় স্টার্টআপ। এই উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ: রাইড-শেয়ারিং স্টার্টআপ পাঠাও ৩ লক্ষ মোটরসাইকেল রাইডারের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষামূলক কনটেন্ট নিয়ে টেন মিনিট স্কুল অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মোট ৬.৭ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছে, যার মধ্যে এখনো প্রতি মাসে প্রায় ৩.২ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করছে। আই ফার্মার ১.১২ মিলিয়নেরও বেশি কৃষককে প্রায় ২.৪২ বিলিয়ন টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে, যা কৃষি উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে।  

এই অসাধারণ অগ্রগতি মূলত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' ভিশনের জন্য, যা গত ১৪ বছরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং নীতিমালা তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

 রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। এই সময়কালে মুদ্রাস্ফীতির চাপ, রপ্তানি ক্ষেত্রে মন্দা এবং অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্সেরও পতন দেখা যায়। তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম উল্লেখযোগ্য স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজনশীলতা প্রদর্শন করেছে, যা ক্রমশ অসীম সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

এ বছর সামিটে প্রধান খাতগুলোর সেশনে ফিনটেক, জলবায়ু, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, লজিস্টিকস ও মোবিলিটি, ইমপ্যাক্ট এবং আরএমজি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও থাকছে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ, স্টার্টআপ এবং ইকোসিস্টেম প্রদর্শনী, পিচিং ইভেন্ট, বিনিয়োগকারী ম্যাচমেকিং, শেখার সুযোগ এবং নীতি আলোচনা।

২০২৩ সালে বৈশ্বিক স্টার্টআপ ফান্ডিং ৩৮% হ্রাস পেয়েছে। তবে, বাংলাদেশ বিশেষভাবে বছরের শেষ ৩ মাসে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে, যা আগের ত্রৈমাসিকের তহবিলের তুলনায় ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবৃদ্ধিই বিনিয়োগকারীদের পুনরুজ্জীবিত আস্থা এবং বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোর অপার সম্ভাবনার প্রমাণস্বরূপ। আর্থিক সেবা, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল এবং শিক্ষা খাতগুলো উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ অর্জন করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৩-এ ১০০টিরও বেশি বৈশ্বিক এবং স্থানীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের সাথে ৬০০টিরও বেশি স্টার্টআপ যোগ দেয়। ১০০+ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বক্তা তাদের বিশেষজ্ঞ মতামত প্রকাশ করে তাদের চিন্তাভাবনা এবং লক্ষ্য সম্পর্কে জানান। ১০০০-এরও স্টার্টআপ সংস্থা ইভেন্টে অংশ নেয়। সেখান থেকে ৫০+ স্টার্টআপ সংস্থা বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের ব্যবসায়িক প্রস্তাবনা পেশ করার সুযোগ পায়। ৫০০০-এরও বেশি মানুষের উপস্থিতিতে, ইভেন্টটি সরকারের স্টার্টআপ উদ্যোগের প্রতি সমর্থনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক তৈরি করে, যার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় একটি স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি।

এবছর আবারো স্টার্টআপগুলো সামিটে অংশগ্রহণ করে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশের সাথে এক্সপোজারের সুযোগ পাবে। এই প্ল্যাটফর্মটি তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং সংগ্রহের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে। ফান্ডিং সংগ্রহের বাইরেও, সামিটে থাকবে অনেক কিছু শেখার সুযোগ।