ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

টম মুরসের সাক্ষাৎকার

কাউন্টি ক্রিকেট, ইংল্যান্ডের সংস্কৃতি, নেটে ব্রডের মুখোমুখি

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
কাউন্টি ক্রিকেট, ইংল্যান্ডের সংস্কৃতি, নেটে ব্রডের মুখোমুখি

সিলেট থেকে: তার নাম টম মুরস। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছেন এবারের বিপিএলে, তাকে তাই চিনে ফেলার কথা আপনার।

টমের বাবাকে চাইলে মনে করা আরও সহজ। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ- যে হারের পর খোলনলচে বদলে গেছে ইংলিশ ক্রিকেট, পিটার মুরস কোচ ছিলেন ওই দলের।

টম নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে নিয়মিতই খেলেন, ৬৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ইতোমধ্যে। কাউন্টির অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন, বলেছেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সংস্কৃতির কথা। টম নেটে বহুবার মুখোমুখি হয়েছেন কিংবদন্তি স্টুয়ার্ট ব্রডের, শুনিয়েছেন সেসব।  তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) মাহমুদুল হাসান বাপ্পি...

বাংলানিউজ: বাংলাদেশে প্রথম এলেন?

টম: নাহ, আগেও এসেছি। তবে এবার এখানে আসা, সিলেট স্ট্রাইকার্সের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া দারুণ ব্যাপার। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে এলাম, এর আগে ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলাম। বাংলাদেশের মানুষ দুর্দান্ত, সমর্থকরাও দারুণ।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশে কী লক্ষ্য নিয়ে এলেন?

টম: সবসময়ই আপনি দুনিয়াকে দেখাতে চাইবেন- কী করতে পারেন, আপনার সামর্থ্য কী। কিন্তু মূলত আপনি দলের জন্য খেলছেন। আমি পুরোপুরি টিম প্লেয়ার। দল যা চাইবে, সেটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি ব্যক্তিগত লক্ষ্যের চেয়ে। আমার জন্য, পুরোটাই দল; সেরাটা দিতে পারা...এরপর দল জিতলেই আমি খুশি।  

বাংলানিউজ: বিপিএলে আগেরবার উইল জ্যাকস এসেছিলেন, তিনি কিন্তু এখন জাতীয় দলে...

টম: আমি আসলে এতদূর ভাবতে চাই না। ব্যাপারটা একটা প্রসেসের ব্যাপার। ধারবাহিকতা দরকার হবে আপনার। নিজের কাজটুকু ঠিকঠাক করে যেতে চাই দলের জন্য। এরপর দেখা যাক...

বাংলানিউজ: ব্রডের সঙ্গে একই দলের হয়ে কাউন্টি খেলেন। নেটে নিশ্চয়ই তার ‍মুখোমুখি হয়েছেন, তার ওপর ব্রড আবার বাঁহাতিদের বিপক্ষে ভয়ঙ্কর...

টম: ব্রড আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। শুধু ক্রিকেটার হিসেবে চিন্তা করলে, আমার মতো একই পথ পেরিয়ে এসেছে সে। এরপর দারুণ কিছু করেছে, এখন ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা বোলারদের একজন হয়েছে। আমার আসার পথে তার অনেক সাহায্য আছে।  

আপনি যেমন বলেছেন, আমি বাঁহাতি। ব্রড এই ধরনের ব্যাটারদের বিপক্ষে ভয়ঙ্কর। তার সঙ্গে আমি টেকনিক্যাল বিষয়ে কথা বলি, সে জানায় কীভাবে আমাকে আউট করতে চেয়েছে। এসব টেকনিক্যাল বিষয়ে তার মতো বোলারের বিপক্ষে কাজ করতে পারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে। বাঁহাতি ব্যাটার হয়ে আপনি যখন ব্রডকে নেটে খেলবেন, তখন মনে হবে দুনিয়ার যে কাউকেই সহজে খেলতে পারবেন।

বাংলানিউজ: সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে আপনার বেশ উপস্থিতি আছে। টি-টেনে খেলেছেন, হান্ড্রেডেও। এসব আসলে ক্রিকেটে কীভাবে ইম্প্যাক্ট রাখে?

টম: টি-টেন বা হান্ড্রেড, যেকোনো ধরনের শর্টার ফরম্যাট ম্যাচের কথাই বলেন। এটা ব্যাটার হিসেবে আপনার পাওয়ার হিটিং ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। এ ধরনের ফরম্যাট টি-টোয়েন্টির চেয়েও বেশি দ্রুতগতির খেলা, সিদ্ধান্ত নেওয়ায় উন্নতি না করলে আপনি ভালো করতে পারবেন না। সবসময় চাপের মধ্যে থাকবেন। ব্যাটার হিসেবে শেষ অবধি আপনাকে চার-ছক্কাই মারতে হবে। আমার জন্য এটা দারুণ ব্যাপার এ ধরনের টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারা।  

বাংলানিউজ: এমনিতে ক্রিকেট তো আপনার রক্তেই...

টম: হ্যাঁ, আমার বাবা ইংল্যান্ডের হেড কোচ ছিলেন, এটা সম্ভবত জানেন। ক্রিকেট আসলে আমার পরিবারে, রক্তেই ছিল। বড় হওয়ার সময় একটা জিনিসই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি দেখেছি- ব্যাট আর বল। ওই সময়ই খেলাটার প্রেমে পড়ি। এরপর যখন বড় হয়েছি, ক্রিকেট দেখেছি অনেক। যখন বড় হয়েছি, নিজেকে ভাগ্যবান ভাবি যে পেশাদার ক্রিকেটার অবধি আসতে পেরেছি।

বাংলানিউজ: আপনার বাবার কথা বললেন, উনার জন্যই কি ক্রিকেটে আসা?

টম: না, উনি সবসময়ই বলতেন- তোমার পছন্দের পথ বেছে নাও। উনি আমাকে জোর করেননি ক্রিকেটার হওয়ার জন্য। তবে উনার পথ ধরে হাঁটছি, এটার জন্য তো খুশি হয়েছেনই। কিন্তু কখনো জোর করেননি। বাবা দারুণ মানুষ, আমাকে গাইড করেছেন যেটাই করতে চেয়েছি।

বাংলানিউজ: আপনার বাবা দুই দফায় হেড কোচ ছিলেন। উনার দর্শনটা ঠিক কেমন?

টম: উনি কোচিং ভালোবাসেন। আমার মতে পৃথিবীর সেরা কোচদের একজন। অনেক ক্রিকেটারকেই উন্নতিতে সাহায্য করেছেন। তরুণদের তুলে আনার ব্যাপারে উনি খুব ভালো, তাদের সেরাটা বের করে আনতে পারেন। আমিও তাদের একজন। বাবা ক্রিকেট ভালোবাসেন, এটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার।

বাংলানিউজ: শুনেছি উনি নাকি ডাটা আর নাম্বারে অবসেসড...

টম: এই কথাটা ঠিক না, উনি আসলে একবার বলেছিলেন, "উই হ্যাভ টু লুক এট ইট লেটার’, কেউ 'লেটারের' জায়গায় শুনেছে 'ডেটা'। এখানে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কোচ হিসেবে উনি পুরোপুরি ব্যতিক্রম। খেলোয়াড়দের ব্যাপারে খুবই আত্মবিশ্বাসী, ডাটা বা নাম্বারে একদমই না। দলকে জেতাতে চান, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখতে চান। ক্রিকেটারদের লড়াইয়ে দেখতে পছন্দ করেন। আপনার পরিসংখ্যান যেমনই হোক, ক্রিকেট পিচে আপনার ভালো দিন যেতেই পারে।

বাংলানিউজ: আপনার মনে আছে কি না, বাংলাদেশের কাছে হারের পরই কিন্তু আপনার বাবার চাকরি চলে গিয়েছিল!

টম: এটা কঠিন। এসব ব্যাপার আসলেই কঠিন। যখন আপনি হেড কোচ থাকবেন, জয়ের সঙ্গে হারটাকেও মেনে নিতে হবে। যদি এটা না পারেন- তাহলে ভুল খেলায় আছেন। সব চ্যাম্পিয়নরাই একসময়ই হারে। মাইকেল জর্ডান- পৃথিবীর সর্বকালের সেরা অ্যাথলেট। শত শত বার ব্যর্থ হয়েছেন। এটাই স্পোর্টসের বাস্তবতা।

বাংলানিউজ: কাউন্টিতে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা। ৬৪টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন, নটিংহ্যামশায়ারের অধিনায়কত্ব করেছেন। কাউন্টি ক্রিকেট আসলে কেমন?

টম: কাউন্টিতে খেলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে আপনাকে। কঠিন খেলা, কিন্তু উঠতি খেলোয়াড়দের জন্য দারুণ জায়গা। চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে...আপনি ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে দেখলেই বুঝতে পারবেন। সবাই কাউন্টি খেলেই উঠে এসেছে। এখন তারা দারুণ ক্রিকেট খেলছে।

বাংলানিউজ: আমি অন্তত ১০জন ক্রিকেটারের মুখে শুনেছি, তারা বলেছে কাউন্টি ক্রিকেট তাদেরকে বদলে দিয়েছে। কাউন্টিতে আসলে কি এমন আছে?

টম: যখন কোনো বিদেশি ক্রিকেটার সুযোগ পাবে, আমি বলবো আপনার শতভাগ সুযোগটা গ্রহণ করা উচিত। কোনো দ্বিধায় থাকার উপায় নেই। দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন ক্রিকেটের একটি ওখানে হয়। আপনার খেলা ভালো হতে বাধ্য। ওই ধরনের কন্ডিশনে আপনি বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে পারবেন। যদি ওখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, খেলায় উন্নতি আসবেই। সঙ্গে আপনি একটা নতুন জীবন দেখতে পাবেন কাউন্টিতে।

বাংলানিউজ: ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সংস্কৃতির ব্যাপারে অনেক বেশি শোনা যায়, আপনি তো দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় খেলেছেন। পার্থক্যটা আসলে কী?

টম: খুব বেশি নিশ্চিত না এই ব্যাপারে। আপনি যেমন বলেছেন, অনেক জায়গায় খেলেছি সত্যি, কিন্তু বাইরের সংস্কৃতির ব্যাপারে তেমন জানি না। কিন্তু এটা বলতে পারি- ইংল্যান্ড একটা জিনিস ভালো করে, আমরা যেভাবে খেলি, সেটার ব্যাপারে ইতিবাচক থাকি। আরেকটা ব্যাপার হলো স্বার্থহীনতা।

এখানে দলই সবকিছু, কেউ নিজের জন্য খেলে না। এটা কাউন্টিতে হোক অথবা আপনার গায়ে ইংল্যান্ডের জার্সি থাকুক। এটা ইংল্যান্ডের সংস্কৃতির ব্যাপারে খুব ভালো ব্যাপার। সামনে তাকাও, যদি দ্বিধায় থাকো তাহলে ইতিবাচক দিক সঙ্গে রাখো, নেতিবাচকতা দূরে সরিয়ে দাও। এটাই ইংল্যান্ডের সংস্কৃতি।

বাংলানিউজ: তিন ফরম্যাটেই ইংল্যান্ডের হাত ধরে রেভ্যুলেশন এসেছে। সর্বশেষ টেস্টে এলো। এর পেছনে কাউন্টি ক্রিকেটের কি একটা বড় ভূমিকা আছে?

টম: অনেক কিছুর কম্বিনেশন এই রেভ্যুলেশন। অনেক তরুণ ক্রিকেটার উঠে আসছে কাউন্টির মাধ্যমে। বেন স্টোকসের মতো একজন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সবাইকে দেখাচ্ছে কীভাবে তারা খেলতে চায়। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম তরুণদের নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেরাটা বের করছে। নিজের মতো করে করা, ইতিবাচক দিকে তাকানো। তাদের এসব ভাবনা কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়ছে।

সাধারণভাবেই ইংল্যান্ড ক্রিকেট ঠিক পথে চলছে। সবাই এখন ম্যাচ জেতাতে চায়। সব ব্যাটাররা চার-ছক্কা মারতে ভয় পায় না, বোলাররা উইকেট নেওয়া ছাড়া কিছু ভাবে না। তাদের এসব ভাবনা, দর্শন ইংল্যান্ডেই ছড়িয়ে পড়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।