ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে কলকাতার রূপকথার নায়ক রিংকু

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে কলকাতার রূপকথার নায়ক রিংকু

উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আলিগড় স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থিত ছোট্ট দুই রুমের কোয়ার্টার। সেই বাড়িরই ছেলে রিংকু সিং।

রিংকু কে, সেটা নিশ্চয়ই নতুন করে বলে দিতে হবে না। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে শেষ পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন তিনি। এরপর থেকেই বাঁহাতি এই ব্যাটারের বন্দনায় মুখরিত পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।

রিংকু যা করেছেন তা আইপিএল কেন, টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে তা কখনোই হয়নি। হয়তো কেউ কল্পনাও করেননি। শেষ বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতার দৃশ্য এখন অহরহই দেখা যায়। কিন্তু শেষ ওভারে টানা পাঁচ ছয় হাঁকানো-অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অভাবনীয়।  

২১ বলে ৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংসের মতো রিংকুর জীবনকাহিনীও ব্যতিক্রম। তার বাবা খানচন্দ্র বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসেন সিলিন্ডার গ্যাস। বড় ভাই অটোরিকশা চালক, আরেক ভাই কাজ করেন কোচিং সেন্টারে। সেই কোচিং সেন্টারেই ঝাড়ুদারের চাকরি মিলেছিল রিংকুর। পড়ালেখায় খুব একটা আগ্রহ না থাকায় ক্লাস নাইনে অকৃতকার্য হওয়ার পরই ছেড়ে দিয়েছেন তা। কিন্তু কখনো ঝাড়ুদার হতে চাননি। তার দু'চোখ ভরে ছিল কেবল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। বেশ ভালোভাবেই জানতেন ক্রিকেটেই লুকিয়ে আছে পরিবারের অভাব মেটানোর সুযোগ।

অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকার সময়ই ক্রিকেট থেকে যা উপার্জন, তার সবটুকুই পরিবারের ঋণ শোধে ব্যয় করতেন রিংকু, ‘মাসে ৬-৭ হাজার রুপি করে উপার্জন করতেন বাবা। বড় ভাইয়ের আয়ও অনেকটা তেমনই। আমার পরিবারটা কিছুটা বড়, পাঁচ ভাই-বোন। তাই ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়া ছাড়া আমার কোনো বিকল্প ছিল না। জীবনে প্রচুর কষ্ট করেছি। ইশ্বর হয়তো সেই কষ্টের দিনগুলোরই ফল দিচ্ছেন। ’

পরিবারের অভাব দূর করতে অন্য কাজ খোঁজা শুরু করেছিলেন রিংকু, ‘আমার ভাই আমাকে একটি জায়গায় নিয়ে গেল, যেখানে শুধু ঝাড়ু ও ধোঁয়ামোছা করতে হবে। বাড়ি ফিরে আমি মাকে বলি, সেই জায়গায় আর কখনোই যাব না। আমাকে কেবল ক্রিকেট চেষ্টা করতে দাও। দেখি ভাগ্যে কী লেখা আছে। ’

দিল্লির এক টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল জিতেছিলেন রিংকু। তারপর থেকে পরিবারও তার ওপর বিশ্বাস রাখতে শুরু করে। সেই মোটরসাইকেল এখন ডেলিভারির কাজে ব্যবহার করেন রিংকুর বাবা।

রিংকুর ভাগ্য বদলে যায় ২০১৭ সালে আইপিএলে। ১০ লাখ রুপি দিয়ে তাকে দলে ভেড়ায় পাঞ্জাব কিংস। কিন্তু পরের বছর এর ৮ গুণ মূল্যে বাঁহাতি এই ব্যাটারকে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। সেই টাকাও পরিবারের পেছনে ব্যয় করেন রিংকু, ‘ভেবেছিলাম ২০ লাখই পাব। তবে ৮০ লাখ রুপিতে আমাকে নেওয়া হয়েছে। আইপিএলে দল পেয়ে প্রথম যে জিনিসটা মাথায় এসেছিল তা হলো, এটা দিয়ে বড় ভাইয়ের বিয়েতে কিছু সাহায্য করতে পারব এবং বোনের বিয়ের জন্য কিছু অর্থও জমিয়ে রাখব। আর বাকিটা দিয়ে একটি ভালো বাড়িতে থাকব। ’

আইপিএলে ২০১৮ সাল থেকে কলকাতার সঙ্গে আছেন রিংকু কিন্তু খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। বড় বড় শট খেলার সামর্থ্য তিনি দেখিয়েছেন বাকি ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোতে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিল না। গত আসর থেকে অবশ্য একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন নিয়মিত। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে ২১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করার সময় নিজের ঝলক দেখান রিংকু। শেষ ওভারে ২১ রান দরকার ছিল কলকাতার। প্রথম তিন বলে এক চার ও দুই ছক্কা হাঁকিয়ে দূরত্বটা কমিয়ে আনেন রিংকু। কিন্তু সেই ম্যাচ দুই রানে হারে কলকাতা। শেষ তিন বলে রিংকুসহ আরও এক ব্যাটারকে তুলে নিয়ে ম্যাচের আলো কেড়ে নেন মার্কাস স্টইনিস।

সেদিনের চেয়ে গতকাল লক্ষ্যটা আরও কঠিন ছিল রিংকুর কাছে। ক্ষণিকের জন্য ফ্ল্যাশব্যাকেও চলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু না এবার আর পুনরাবৃত্তি হয়নি। নায়ক হয়েই ম্যাচটা শেষ করে এলেন। আর তাতে শাহরুক খানের মতো তারকা আবেগে ভাসবেন না তা কী করে হয়। ম্যাচের পর ‘পাঠান’ সিনেমার পোস্টারে শাহরুখ নিজের মুখ সরিয়ে বসিয়ে দিলেন রিংকুর মুখ। টুইটারে সেই ছবি পোস্ট করে কিং খান ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ঝুমে জো রিংকু!! আমার বেবি রিংকু, নীতিশ, ভেঙ্কটেশ তোমরা সত্যিই সুন্দর। মনে রেখো আর বিশ্বাস রাখ- সেটাই সব। শুভেচ্ছা কেকেআরকে। ’

স্বপ্ন হয়তো সবাই দেখেন। কিন্তু রিংকুরা বারবার ধাক্কা খেয়েও তা পূরণে কখনো পিছপা হন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
এএউইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।