বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশি আম্পায়ার— এমনটা স্বপ্নই মনে হতো। তবে আসন্ন ভারত বিশ্বকাপে সেটি বাস্তবে রূপান্তরিত করতে যাচ্ছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত।
পথটা সহজ ছিল না শরফুদ্দৌলার জন্য। পিঠের ইনজুরির কারণে ক্রিকেটার হিসেবে পরিচয়টা থমকে যায় ২০০১ সালে। এরপর বিসিবি ক্রিকেট অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিলেও ২০০৭ সালে সেই চাকরি ছেড়ে আম্পায়ার হিসেবে পদচারণা শুরু হয় তার। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত ৯ টেস্ট, ৫৪ ওয়ানডে ও ৪৩ টি-টোয়েন্টিতে আম্পায়ারিং করেছেন তিনি। চলার পথে সমালোচনা ছিল তার অন্যতম সঙ্গী। তবে সেসব তাকে মোটা চামড়ার মানুষে পরিণত করেছে।
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আম্পায়ারদের জীবন নিয়ে শরফুদ্দৌলা বলেন, 'বেশির ভাগ সময়ই আমাদের অযথা সমালোচনা করা হয়... তাই আমাদের চামড়ার শক্ত রাখতে হয়, নিজেকে সেভাবেই গড়েছি আমি। সবসময়ই শান্ত-শিষ্ট স্বভাব বজায় রেখেছি, জানতাম যে আমারও সময় আসবে। '
বাংলাদেশে আম্পায়ারিং শব্দটি বিতর্কের অপর নাম বললে ভুল হবে না। ২০১৭ সালে এক ঘরোয়া ম্যাচে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের অভিযোগ এনে ইচ্ছে করেই ওয়াইড ও নো-বলে অতিরিক্ত ৯২ রান খরচ করেন সুজন মাহমুদ নামের এক বোলার। পরে তাকে ১০ বছর নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া গত জুলাইয়ে আম্পায়ারদের প্রশ্নবিদ্ধ করে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হন ভারতীয় নারী দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর।
বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে আবেগকে বাস্তবে রূপ দিতে সময় লাগে না। তেমন দেশে আম্পায়ারিং করা সহজ কাজ নয় বলে মনে করেন শরফুদ্দৌলা।
৪৬ বছর বয়সী এই আম্পায়ার বলেন, 'আমাদের ওপর প্রচুর চাপ থাকে। সবাই ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবে। কেউ আমাদের নিয়ে মাথা ঘামায় না। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের অযথাই সমালোচনা করা হয়ে। যদি সেটা না করে আমাদের পুরস্কৃত করা হয় যেটা প্রাপ্য, তাহলে সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও একইভাবে ক্রিকেটারদের বদলে দেবে। '
বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ার সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত শরফুদ্দৌলা, 'আমার মনে হয়, যখনই আপনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেটা সম্মান বয়ে আনে। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়ে আমারও একই অনুভূতি হচ্ছে। আশা করি এটাই শেষ নয়, তবে অনেক কিছুর শুরু বলা যায়। '
শরফুদ্দৌলা বিশ্বাস করেন, তার কীর্তি বাকিদের জন্য দরজা খুলে দেবে। তিনি বলেন, '২০০০ সাল থেকে আমরা টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরু করি। একটা ধারণা ছিল যে, আম্পায়ার আসবে দেশের বাইরে থেকে এবং আমরা তাদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করব। সেটা বদলে গেছে। আমাদের এখন ভালো মানের আন্তর্জাতিক আম্পায়ার আছে। আশা করি, আরও অনেকেই আসবে এবং তারা শুধু বিশ্বকাপ নয়, অন্যান্য টুর্নামেন্টেও দায়িত্ব পালন করবে। '
'ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে এলিট ও ম্যাচ আম্পায়ারদের অংশ হতে পেরে সৌভাগ্যবান ও সম্মানিত বোধ করছি আমি। '
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩
এএইচএস