ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বিষণ্নতার স্মৃতি ফিরে দেখা হয়নি মরগানের

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, ধর্মশালা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৩
বিষণ্নতার স্মৃতি ফিরে দেখা হয়নি মরগানের

প্রশ্নটা করতে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষাই করতে হলো। দুই দেশ মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক সাংবাদিক ভিড় জমিয়েছেন।

ওয়েন মরগান কিছু বলবেন বলে কথা। ১৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখটা আসার আগে অবধি তিনিই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক। মরগানের পরিচয় অবশ্য বদলে গেছে বেশ ক’দিন হলো।  

ব্যাট-বল ছেড়ে তিনি এখন ব্যস্ত মাইক্রোফোন হাতে। তবুও যারা তারকা, তাদের আলো বোধ হয় কখনো কমে না। ড্রেসিংরুমের পথটা ধরে কয়েকশ গজ দূরত্বের গ্যালারিতে আসতে আসতে তাকে ছবি তোলার আবদার মেটাতে হলো কয়েকবার।  

কথাবার্তা শেষ করে মাঠের মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মরগান, ওখানেও একই রকম দৃশ্য। সম্ভবত তার দেশের এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এর ফাঁকেই বারবার ছবির জন্য পোজ দিতে হচ্ছিল তাকে। পুলিশ, ক্যাটারিং সার্ভিসের কেউ অথবা নিরাপত্তারক্ষী; প্রায় সবার জন্যই মরগান এখনও আরাধ্য।

তাকে কী প্রশ্ন করা যায়? ভাবতে ভাবতে হাজির হলাম ধর্মশালার গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে। বহু চেষ্টার পর প্রশ্নটা যখন করা শুরু করেছি, মরগান তখনও বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতেই। প্রশ্নগুলোও তেমনই।  

এরপর মুখে হাসি এনে মরগানের কাছে জানতে চাওয়াবাংলাদেশ আর ইংল্যান্ড যখন মুখোমুখি হবে, তাও বিশ্বকাপে। তখন তো স্বাভাবিকভাবেই ২০১৫ বিশ্বকাপ চলে আসে। আপনি তখন অধিনায়কও। ওই হার খোলনচলে বদলে দিয়েছিল ইংল্যান্ডের ক্রিকেটকে। আপনি কি পরে ওই ম্যাচের হাইলাইটস দেখেছেন?

মরগান তো বটেই, প্রশ্ন শুনে হাসতে শুরু করেন ইংলিশ সাংবাদিকরাও। উত্তরে মরগান বললেন, ‘আমি এমনিতে কখনো হাইলাইটস দেখি না। কিন্তু নাসের হুসেইন সবসময়ই এটা মনে করিয়ে দেয়। নিজের আর মনে করার প্রয়োজন পড়ে না আমার!’

নাসের হুসেইনকে নিয়ে আপনি হয়তো একটু দ্বিধায়ই পড়তে পারেন। যারা চেনেন, তাদের কাছে ‘বোকা, বোকা’ মনে হতে পারে কথাটা। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে নাসিরের তো আর অভাব নেই, ক্রিকেটেও। তবে অ্যাডিলেডের ওই ম্যাচ প্রসঙ্গে কোন নাসের- নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। তার বারবার মনে করিয়ে না দেওয়ারও তো কারণও নেই!

এমনিতে নিজের দেশ হারার বিষাদ হয়তো তারও আছে। কিন্তু ওই ম্যাচটাতে নাসের ছিলেন ধারভাষ্যকারের ‘নিরপেক্ষ’ দায়িত্বে। তার চেয়েও বড় কথা- ওই মুহূর্তটা হয়তো মাইক হাতের অল্প কিছু ‘আইকনিকের’ একটা। নাসের হুসেইনের বলা ‘বাংলাদেশ টাইগার্স হ্যাভ নকড দ্য ইংল্যান্ড লায়ন্স আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ’ লাইনটি কেবল আইসিসির পেজ থেকেই দেখা অথবা শোনা হয়েছে কয়েক মিলিয়ন বার।  

ওই হারটা নিয়ে ইংল্যান্ডের এক সাংবাদিকের সঙ্গেও আলাপ হচ্ছিল। আসলে তিনিই এনেছেন প্রসঙ্গটি। অ্যাডিলেডের ওই ম্যাচটা নাকি ইংল্যান্ডে ভীষণ ‘ফেমাস’; এই শব্দের সোজা বাংলা করা কঠিন, হেরে যাওয়া ম্যাচ তো আর জনপ্রিয় নয়। তবে সম্ভবত বহুল আলোচিত অর্থেই কথাটা বলেছেন তিনি।  

হাইলাইটস না দেখলেও পুরোনো ওই ম্যাচের স্মৃতিচারণের সঙ্গে সহজ স্বীকারেক্তিও দিয়েছেন মরগান, ‘হ্যাঁ, ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ। ওদের সঙ্গে খেলা সহজ নয়। ২০১৫ সালে সম্ভবত ওদের পেস বোলিংয়ে অভিজ্ঞতা একটু বেশি ছিল। এবার তা নেই, তবে প্রতিভা দিয়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া যায়। ওরা ভালো দল। অ্যাডিলেইডে ওই ম্যাচে ওরা আমাদের চেয়ে ভালো দল ছিল। ’

এমনিতে আট বছর পর এখন প্রেক্ষাপট একদমই আলাদা। ইংল্যান্ড দুনিয়ার সবচেয়ে ভীতি ছড়ানো দল। মরগানের ছড়িয়ে দেওয়া আগ্রাসী ক্রিকেটের মন্ত্র এখন সব ফরম্যাটেই খেলে ইংল্যান্ড। প্রভাব রাখে পৃথিবীর নানা প্রান্তেও।  

গ্রুপ পর্বে বাদ পড়ার ক্ষত থেকে একটা দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন মরগান। বন্ধুর থেকে মধুর পথের কতটুকু পেছালে কতটুকু এগোতে হয়সেটি ভালোই জানেন তিনি। তার কাছে তাই প্রশ্ন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কীভাবে বড় ট্রফির খোঁজে নামতে পারে?

‘এটা বড় এক চ্যালেঞ্জ। প্রতিভা ওদের যথেষ্টই আছে। তবে সেই প্রতিভা কীভাবে ব্যবহার আর শাণিত করা যায়, এটির ওপরই নির্ভর করে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে কতটা লড়াই করতে পারবে। ভবিষ্যতে তারা কোন পথে এগোবে, সেটি ঠিক করে, ভবিষ্যতে দলের চেহারা কেমন হবে, সেটায় প্রাধান্য ও গুরুত্ব দিয়ে, সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এটা হয়তো তাদের জন্য উপযুক্ত আর তাদের পক্ষে কাজ করতে পারে। ’

এখন যখন দুই দল মুখোমুখি-ফাড়াকটা হয়তো আগের চেয়েও বেশি। তবুও এই বিশ্বকাপ যদি ভিন্ন গল্প লিখতে পারে, ক্ষতি কী। মরগান অবশ্য এই লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখেন। ধর্মশালার কন্ডিশন নাকি তাদেরই বেশি ‘স্যুট’ করবে।  

অ্যাডিলেডের ওই রাতটার পর পদ্মা-মেঘনা-যমুনার সঙ্গে টেমস নদীতেও অনেক জল বয়ে গেছে অচেনা পথে। তবে ওই এক ম্যাচ বদলে দিয়েছে ইংল্যান্ডকেএমন বললেও বোধ হয় কমই বলা হয়ে যায়। আসলে তো বদলে দিয়েছে ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের চেনা পথটাকেও।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।