পৃথিবীতে মুরগী দিয়ে যে এত রকমের তরকারি হতে পারে- ভারতে না আসলে বোঝা মুশকিল। এই রে! লিখতে গেলেই এখন একটা সমস্যা খুব হচ্ছে, দুনিয়া দেখার পরিধি এতই ছোট যে এখন কোনো কিছুতে সবকিছু টেনে আনলে বেশিই সরলীকরণ হয়ে যায়।
যাই হোক, পুনেতে আসার পর একটা স্বস্তি পাওয়া গেছে। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ভারতে আসার পর থেকেই একটু উসখুস ছিল। এমনিতে অনেক ধরনের খাবার- বেশির ভাগই নতুন। স্বাদও মন্দ না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো ভালো।
কিন্তু খেয়ে ঠিক তৃপ্তি মিলছিল না। পুনেতে আসার ফ্লাইট ছিল ভোর তিনটার দিকে। আগের দিন ম্যাচ কাভার করে ফ্লাইটে চড়া, তারপর এসে হোটেলে চেক ইন করতে করতে ভোর হয়ে গিয়েছিল। প্রায় সারারাতই তাই জেগে থাকতে হয়েছে।
ওই ক্লান্তি নিয়ে পরের প্রায় পুরোটা দিনই ঘুমিয়ে কেটেছে। ভারতে আসার পর থেকে জ্বর-ঠাণ্ডা লেগেই আছে। ক্রিকেটারদের বারবার বলা ‘কন্ডিশন’ কথাটা এতদিন খুব ক্লিশে মনে হতো, আশা করি ভবিষ্যতে আর হবে না। এত দ্রুত সবকিছু বদলে যাচ্ছে, ‘কন্ডিশন’ বোঝা আসলেই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
পুনেতে আসার দিন রাতেই এক অটোরিকশায় চেপে বসলাম। ভদ্রলোকের কাছে যাওয়ার জন্য ঠিকঠাক জায়গা বলা মুশকিল। শহরটা যেদিকে, ওদিকেই নিয়ে গেলে হয়। দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি লাগানো ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন, আমরা আসলে খেতে চাচ্ছি। হালাল খাবার পেলেই ভালো।
তিনি এরপর নিজে থেকেই বললেন, ‘তাহলে ক্যাম্পে চলুন...’। ক্যাম্প দেখার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশেও আছে। মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্পের পাশে দু বছর পড়াশোনা করেছি। ওখানে কয়েকবার যাওয়াও হয়েছে। মনের মধ্যে একটু অস্বস্তি, তবুও কী আর করার।
অটোটা গিয়ে যেখানে থামলো, ভীষণ স্বস্তি পাওয়ার মতো ব্যাপার। এমনিতেই মেস জীবনে মুরগী নিত্যসঙ্গী। এরপর ভারতে এসে এত বেশি মুরগী খেতে হয়েছে- যত স্বাদই হোক না কেন, আর ভালো লাগে না। এখানকার লোকজন মাছও প্রায় খানই না।
পুনেতে এসেই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি খাবারের সঙ্গে মিল আছে, এমন কিছু পাওয়া গেলো। পেটে ভীষণ ক্ষুদা, মনে বোধ হয় আরও বেশি। কিন্তু সময় খুব বেরসিক ব্যাপার কখনো কখনো। ভারতের খাবারের ক্ষেত্রে আরেকটা ব্যাপার ভালো- সবসময়ই তৈরি খাবারটা দেওয়া হয়।
বেশির ভাগ সময়ই রান্না করে দেয়, কখনো কখনো গরম করে। কিন্তু এতে একটা বড় সমস্যাও আছে- খাবারটা প্লেট অবধি আসতে অনেক সময় লাগে। তবুও কুরাইশ কাবিলি হোটেলে ওই অপেক্ষা পরে করতেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। খাবার হিসাবে ‘বিফ কিমা ফ্রাই’ আর ‘বিফ লাহোরি’ নামের দুই খাবার আসার জন্য আরও দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও বোধ হয় খুব বেশি ক্ষতি হতো না।
পুনে হলো মহারাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এখানকার একজন লোক অবশ্য বহু আগেই ভারতের রাজধানীর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়েও বসেছিলেন- জহর লাল নেহরু। তার নামে একটা রাস্তা, জাদুঘর, আর্ট গ্যালারি বা সেমিনার হল; সবই তাই এখানে আছে।
এই শহরের একটা ডাকনামও আছে- এটা নাকি ভারতের অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ। কয়েকদিন আগে যে করোনা নিয়ে তোলপাড় হলো, বাংলাদেশে ভারতের একটা কোম্পানি থেকে টিকা গিয়েছিল। নামটা কী মনে আছে? সেরাম ইন্সিটিউট। ওই কোম্পানিরও ‘ঘর’ এই পুনে।
এত কিছু জেনে সম্ভবত স্মৃতি আরেকটু সমৃদ্ধ হলো। কিন্তু মনের স্বস্তি যে মিললো- পুনেকে তো এজন্যও ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে!
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ