সাকিব আল হাসান দৌড়াচ্ছেন, তার পাশে অনেকগুলো উদ্বেগের চোখ। ঠিকঠাক আছে তো সব? ইনজুরি তাকে ছিটকে দিয়েছিল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে।
সাকিবের তাই সম্ভবত সব ঠিকঠাকও। কিন্তু বাংলাদেশ দলের জন্য যে তা না, সাকিবই বোধ হয় সবচেয়ে ভালো জানেন সেটি। বহু স্বপ্ন আর আশার কথা শুনিয়ে আসা দলের লাইনচূত্য ট্রেনের অবস্থা। উদ্ধারকারী কাউকে খুঁজে বেড়িয়েই এখন স্বপ্নের ফানুস উড়ানো।
অথচ উদ্ধারকারী কারো আসার পথেও যে অনেক বড় বাধা- নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্রিকেটের কথিত ‘চোকার্স’ এই বিশ্বকাপেই নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছে। কিন্তু যদি জানার পরিধি এটুকুতেই আটকে রাখেন- বড় ভুলই হয়ে যাবে তাহলে।
ওই ম্যাচটা বাদ দিয়ে তারা আরও যে তিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলেছে, সবার বিপক্ষেই জিতেছে আর সংগ্রহ ছাড়িয়ে গেছে তিনশ রান; এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছিল ৪২৮ রান। যে ওয়াংখেড়েতে বাংলাদেশের পথ খুঁজে পাওয়ার লড়াই, ওখানেই ইংল্যান্ডকে রীতিমতো দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে আগে ব্যাট করা দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশ অধিনায়ক তাই প্রসঙ্গ আসতেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘দোয়া করেন টসটা যেন জিতি। ’ টস জিতলে কী করবেন, সেটিও কি আলাদা করে বলতে হবে? গত চার বছরে রান তাড়া করতে গিয়ে প্রোটিয়ারা দশবারই হেরেছে; ওই পরিসংখ্যানে চোখ রেখে সাকিবরা ব্যাটটাই বেছে নেবেন অবধারিতভাবে।
এমনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপ পরিসংখ্যানটা খুব একটা মন্দ নয়- চার ম্যাচ খেলে সমান-সমান জয় দুই দলের। তাদেরই মাঠে সিরিজ হারানোর সুখস্মৃতিও খুব বেশি পুরোনো নেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটাও তাই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ‘অনেক বড়’ বলছেন এইডেন মার্করাম।
যেকোনো দিনে যেকাউকে হারিয়ে দিতে পারে, এমন ভাবনা তার। কিন্তু ওই লড়াইয়ে বাংলাদেশের হয়ে থাকছেন না তাসকিন আহমেদ। গত কয়েক বছরে এগিয়ে যাওয়া পেস বোলিং ইউনিটের নেতাই তিনি। ভারত ম্যাচের পর কাঁধের চোটে তাকে পাওয়া হচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও। যদিও সাকিবের আশা, পরের চার ম্যাচের জন্য সুস্থ থাকবেন তিনি।
সুস্থ থাকাও এখন অবশ্য ক্রিকেটারদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। মুম্বাইয়ে চার মাস বৃষ্টির পর এখন তীব্র গরম। তার চেয়েও বেশি হিউমিডিটি। তাতে অস্বস্তি ‘গরমে খেলে অভ্যস্ত’ বাংলাদেশ বা দক্ষিণ আফ্রিকা দু দলের জন্যই।
এমনিতে বাংলাদেশ দলের জন্য অস্বস্তির শেষ নেই। মিরাজকে উপরে খেলাতে গিয়ে সব উলোট-পালোট, দেশের ক্রিকেটে এখন আলোচনায় বেশ। ব্যাটিং-অর্ডারে তাকে উপরে খেলাতে গিয়ে পরে আসছেন মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
সাকিব অবশ্য এ সমালোচনার উল্টো পিঠটাই দেখিয়েছেন, ‘বিশেষজ্ঞ ব্যাটাররা নিচের দিকে ব্যাট করছে আমারও মনে হয়েছে একটু বেশি নিচে ব্যাট করছে। তবে উল্টাভাবে দেখলে যদি তারা ওপরে খেলে কোনো গ্যারান্টি কি আছে তারা রান করবে? রান না করলে কী মনে হবে? তারা আগের জায়গাতেই ভালো ছিল? আসলে এগুলো খুবই কঠিন এবং ট্রিকি। ’
সাকিবের সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলেছে, কিছু হয়তো পাওয়া যায়নি। তবুও সাকিব বড় স্বপ্ন দেখাতে চেয়েছেন বারবার। বাংলাদেশের জন্য কঠিন পথেও দেখিয়েছেন আশার আলো। একটু নিজেরা ও অন্যরা সাহায্য করলেই দারুণ কিছু হবে, বলেছেন এমন। নিজেদের কাজটা কি ঠিকঠাক করতে পারবে বাংলাদেশ? ওয়াংখেড়েতে উত্তরটা ইতিবাচক হওয়া এজন্যই বেশি জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ