নাজমুল হোসেন শান্ত এক দফায় ব্যাটিং শেষ করে গেছেন আগেই। আরেকবার নেটে এগিয়ে আসতেই সাদমান ইসলাম বললেন, ‘আমারটাতে আয়’।
‘দোস্ত আমারটাতে আয় তুই, আমার শেষ’ বলে শান্তকে ডাকলেন তিনি। নেতাকে সম্মান জানানোর প্রয়াস কি না কে জানে। মুমিনুল হক মাঝের নেটে তখনও চুপচাপ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আরেকটি চক্র শুরু হওয়ার আগে তার স্মৃতিতে হয়তো পুরোনো অনেক কিছু ঘোরাফেরা করছে পালা করে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ১৯ ম্যাচে বাংলাদেশ যে একটি মাত্র ম্যাচ জিতেছে, সেটি মুমিনুলের নেতৃত্বেই।
তখন টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে একটা পরিকল্পনার ছাপও আবছা আবছা দেখা মিলছিল ক্রিকেটে। পেসাররা উন্নতি করছিলেন, দল দেখেও মনে হতো গোছানো; মুমিনুল একটা বড় সাফল্যও পেয়েছিলেন- মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশ হারিয়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সেটিই কিউইদের তাদের মাঠে প্রথম হারানো।
এখন যখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকবার টেস্টে মুখোমুখি বাংলাদেশ, শুরু হচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আরও একটি চক্র; তখন মুমিনুলের পথ বদলে গেছে। অধিনায়কত্বের ভার সরিয়ে এখন তিনি শুধুই একজন ক্রিকেটার; বড়জোর ‘অভিজ্ঞ’ ব্যাটার। আক্ষেপ, অভিযোগ আর আফসোসে ওই অধিনায়কত্বের শেষ সময়টুকুও হয়তো তার মানসপটে ভেসে ওঠে।
মুমিনুলকে বদলে দেশের ক্রিকেট আদতে কতটুকু পথ খুঁজে পেয়েছে? টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্র শুরু হওয়ার আগে ওই প্রশ্নটা করা হলে উত্তর নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নেই, টেস্ট নিয়ে তার অনাগ্রহও এখন ‘ওপেন সিক্রেট’।
তার বদলে যাকে নেতা হিসেবে এতদিন ধরে তৈরি করেছে বিসিবি, সেই লিটন দাস বোর্ডকে ‘না’ বলে দিয়েছেন সিরিজের একটি টেস্ট খেলতেও। পারিবারিক কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটিতে তিনি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তামিম ইকবালের ওপেনার হিসেবে খেলার কথা, কিন্তু তিনি আদৌ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন কি না- এ নিয়েও সংশয় কাটেনি এখনও।
অথচ নিউজিল্যান্ডের কথা চিন্তা করুন- কয়েকজন ক্রিকেটার গত ছয় মাসে হয়তো দুই সপ্তাহও দেশে কাটাননি। বহু দূরের বাংলাদেশ-ভারত ঘুরে ঘুরে সময় কাটছে তাদের। বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেও পুরো শক্তি নিয়েই বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে চলে এসেছে তারা।
বাংলাদেশ সেখানে উল্টো পথে। অধিনায়কত্বের অভিষেক হতে যাওয়া শান্ত সংবাদ সম্মেলনে এলেন। পরের সিরিজে তিনি নেতৃত্বের কাছাকাছিও থাকবেন কি না জানেন না। তবুও তার কাছে জানতে চাওয়া, টেস্ট নিয়ে সবমিলিয়েই কি বাংলাদেশ বেখেয়ালি?
শান্ত একটু দ্বিধায় ভুগে জবাব দিলেন এভাবে, ‘সিরিয়াসনেসের ঘাটতি নেই আসলে। খেলোয়াড়রা তো আছে। সবাই চাইছে কীভাবে ভালো করা যায়... হ্যাঁ অধিনায়কের বিষয়ে যেটা বললেন, সে যদি লম্বা সময় ধরে থাকে, তাহলে সুবিধা হবে। আশা করি বোর্ডও যাকেই দেবে, লম্বা সময়ের জন্য দেবে। ’
‘আমার মনে হয় না খেলোয়াড়রা সেটা নিয়ে বাড়তি চিন্তা করছে। ক্রিকেটাররা যদি পারফর্ম করে, তাহলে দল ভালো একটা অবস্থানে যাবে। যে অধিনায়ক হবে, সে তার দায়িত্ব পালন করবে। যে যার ভূমিকা, সেটা পালন করলে দল ভালো অবস্থানে যেতে পারবে। ’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি ২৩টি করে জয় ভারত ও ইংল্যান্ডের। সবচেয়ে কম একটি জিতেছে বাংলাদেশ। শেষদিক থেকে যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার জয় সাতটি করে। এখন যখন আরেকটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্র শুরু হচ্ছে, বাংলাদেশের তখন আশা কী?
শান্ত বললেন, ‘১৪টা ম্যাচ খেলব আমরা। এই দুই বছরে আমাদের টেস্টগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দেশের মাটিতে যে খেলাগুলো হবে, সেগুলো আমাদের জিততে হবে। সে ম্যাচগুলো আমরা কীভাবে জিততে পারি, সেটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ’
‘বাইরে গিয়ে কীভাবে লড়াই করতে পারি, আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, সেটা দেখতে হবে। সে লক্ষ্যটা আমাদের সবার ভেতরে আছে। আমি বিশ্বাস করি দেশের মাটিতে জেতার মতো দল আমাদের আছে। আস্তে আস্তে নিয়মিত ম্যাচ জেতার অভ্যাসটা গড়তে হবে। ’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আরও একটি চক্র শুরুর আগে বাংলাদেশ আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে? প্রশ্নটা করা হয়েছিল শিরোনামে। হতাশা ও সম্ভাবনার কোথাও- উত্তর হতে পারে এমন। সাকিব আল হাসান-লিটন দাসের দায়বদ্ধতা নিয়ে হতাশা ঘিরে ধরতে পারে।
সম্ভাবনা দেখাতে পারেন শাহাদাৎ হোসেন দীপু, মাহমুদুল হাসান জয় বা জাকির হাসানরা। মাটি কামড়ে থেকে খেলা, উইকেটে টিকে থাকা বা বড় কিছু করার তাড়না যদি তাদের থাকে; নাজমুল হোসেন শান্ত তাদের নেতৃত্ব দিতে পারেন চাইলে। তাতে খুব বেশি টেস্ট না জেতা যাক- উন্নতির তাড়না দেখেও আশা বুকে ধারণ করতে পারবেন এ দেশের সমর্থকরা বা টেস্ট ক্রিকেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম