গত ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর হঠাৎ করেই অধিনায়কত্ব ছাড়েন বিরাট কোহলি। কয়েক সপ্তাহ পর তাকে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
কোহলির নেতৃত্ব ছাড়ার পুরো সময়টায় ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। ওই সময় তার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন অনেকে। কিন্তু ভারতের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক নিজে দাবি করছেন, কোহলির নেতৃত্ব হারানো কিংবা ছাড়ার ব্যাপারে তার কোনো ভূমিকা ছিল না।
পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো 'দাদাগিরি আনলিমিটেড সিজন টেন'-এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সৌরভ গাঙ্গুলী। তিনি বলেন, 'কোহলিকে নেতৃত্ব থেকে আমি সরাইনি। আমি আগেও এ কথা বলেছি। সে (কোহলি) টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়তে চেয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব করার যেহেতু আগ্রহ নেই, তাই ভালো হয় যদি সাদা বলের দুই ফরম্যাটের নেতৃত্বই ছেড়ে দাও। সাদা ও লাল বলে আলাদা অধিনায়ক থাকুক। '
কোহলি নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়ক করা হয় রোহিত শর্মাকে। যার নেতৃত্বে গত টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছে ভারত। বিধ্বংসী এই ওপেনারের অধিনায়ক হওয়ার পেছনে গাঙ্গুলীর ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হয়। এতদিনে তা মেনেও নিলেন তিনি, 'আমি রোহিতকে (সাদা বলের ক্রিকেটে) অধিনায়ক হওয়ার জন্য কিছুটা চাপ দিয়েছিলাম। কারণ সে তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্ব দিতে রাজি ছিল না। তাই এটাতে (রোহিতের অধিনায়ক হওয়ার পেছনে) আমার কিছুটা ভূমিকা হয়তো ছিল। তবে প্রশাসনে কে আছে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খেলোয়াড়রা যারা মাঠে ভালো করে। বাইরের কেউ খুব বেশি কিছু করতে পারে না। আমাকে বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটের ভালোর জন্য, এটা তারই ছোট একটা অংশ মাত্র। '
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ভারতের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয় কোহলিকে। তার নেতৃত্বে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে খেলে ভারত। যেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে ১৮০ রানে হারে তারা। এরপর ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারে ভারতীয় দল। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর এই ফরম্যাটের দায়িত্ব ছাড়েন কোহলি। এরপর তাকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে টেস্ট থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। তার নেতৃত্বে ৬৮ টেস্টের মধ্যে ৪০টিতেই জয় পায় ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজ হারের পর টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছাড়েন কোহলি। পরে তিন ফরম্যাটের দায়িত্ব দেওয়া হয় রোহিতকেই। নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন কোহলি। যেখানে কোহলি লিখেছিলেন, ‘গত সাত বছর ধরে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য দেখিয়ে দলকে একটা সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই সময়ে শতভাগ সততার সঙ্গে কাজটা করেছি এবং চেষ্টার কমতি রাখিনি। একটা পর্যায়ে এসে থামতেই হয় এবং টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে আমার কাছেও এটা থেমে যাওয়ার সময়। ’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই যাত্রাপথে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। কিন্তু কোনোদিন চেষ্টা বা বিশ্বাসের কমতি ছিল না। বরাবর নিজের ১২০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যদি সেটা না পারি, তা হলে আমি জানি এটা সঠিক কাজ নয়। আমি মনের দিক থেকে পুরোপুরি পরিষ্কার এবং দলের প্রতি আমি অসৎ হতে পারব না। '
তিন ফরম্যাটের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)-কে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন কোহলি। সেই সঙ্গে স্মরণ করেছিলেন সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী এবং বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির অবদানের কথাও।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২৩
এমএইচএম