জশ হ্যাজেলউডের অফ স্টাম্প ছত্রখান করে দিয়ে ভো দৌড় দিলেন শামার জোসেফ। তাকে আর পায় কে! সব সতীর্থরাই ছুটে যাচ্ছেন তার দিকে।
অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর কত সমালোচনাই না শুনতে হয়েছে ক্যারিবিয়ানদের। অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে তো পাত্তাই পায়নি সফরকারীরা। তবে আলোচিত ছিলেন শামার জোসেফ। মাসখানেক যার পরিচিতি ছিল খুব সীমিত। ব্যাট হাতে ৩৬ রানের পর ৫ উইকেটে নিয়ে আগমনী বার্তা দেন ডানহাতি এই পেসার। সামনে আনেন জীবন-যুদ্ধের গল্প। দ্বিতীয় টেস্টে যা সেটাই বা যুদ্ধের থেকে কম কীসে! দ্বিতীয় ইনিংসে একাই শিকার করলেন ৭ উইকেট।
অথচ গতকাল মিচেল স্টার্কের ইয়র্কারে পায়ে চোট পাওয়ার পর ভেবেছিলেন আজ বোলিং করতে পারবেন না। কিন্তু চিকিৎসক তাকে ফিট করে তোলেন। এরপর জোসেফ ঠিক নিজের কাজটা করেন সুনিপুণভাবে। একপ্রান্তে যখন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথ, তখন আরেক প্রান্তে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান জোসেফ।
২ উইকেটে উইকেটে ৬০ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ২১৬ রানের লক্ষ্য থেকে ১৫৬ রান দূরে ছিল তারা। তবে আগের তিন দিনে যেভাবে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে এই টেস্ট তাতে অস্ট্রেলিয়ার জন্য পথটা সহজ ছিল না। তবুও স্মিথ ও ক্যামেরন গ্রিনের জুটি ভালোই সম্ভাবনা। কিন্তু দিনের ১২তম ওভারে গ্রিনকে (৪২) বোল্ড করে ৭১ রানের এই জুটি ভাঙেন জোসেফ। পরের বলে উড়িয়ে দেন ট্রাভিস হেডের স্টাম্পও। বাঁহাতি এই ব্যাটার আগের ইনিংসেও মেরেছেন গোল্ডেন ডাক। তৃতীয় অজি ব্যাটার হিসেবে একই টেস্টের দুই গোল্ডেন ডাক মারার লজার কীর্তি গড়লেন তিনি।
নতুন আসা ব্যাটার মিচেল মার্শও বেশিক্ষণ টেকেননি। জোসেফের অতিরিক্ত বাউন্সের ডেলিভারি ঠেকিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল তার ব্যাটে লেগে চলে যায় সেকেন্ড স্লিপে থাকা আলিক আথানেজের হাতে। যদিও তিনি ধরতে পারেননি। তবে পাশে থাকা জাস্টিন গ্রিভস বল মাটিতে ফেলতে দেননি। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে অ্যালেক্স ক্যারিও ২ রানের বেশি করতে পারেননি।
জোসেফের আগুনে ঝরা বোলিং দেখে স্টার্ককে নিয়ে দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন স্মিথ। ৩০ বলে ৩৫ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন তারা। কিন্তু আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ত্রাতা হয়ে আসেন জোসেফ। ১৪ বলে ৪ চারে ২১ রান স্টার্ককে কেভিন সিনক্লেয়ারের ক্যাচে পরিণত করেন এই পেসার। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকেও তুলে নেন তিনি।
একের পর এক সঙ্গীর আসা-যাওয়া দেখলেও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন স্মিথ। শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন জশ হ্যাজেলউড আসেন তখনো জয় থেকে ২৫ রান দূরে তারা। এই জুটিতে আসে ১৬ রান আসার পর পথ হারান হ্যাজেলউড। জোসেফের নিজের স্টাম্প বাঁচিয়ে রাখতে পারেননি। অন্যদিকে ৯১ রানে অপরাজিত থাকা স্মিথকে পরিণত হয় ট্র্যাজিক হিরোতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৩১১
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ২৮৯/৯ (ডিক্লেয়ার)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ১৯৩ (ম্যাকেঞ্জি ৪১, অ্যাথানেজ ৩৫; হ্যাজেলউড ৩/২৩, লায়ন ৩/৪২)
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ২০৭ (স্মিথ ৯১*, গ্রিন ৪২, স্টার্ক ২১; শামার জোসেফ ৭/৬৮)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা: শামার জোসেফ
বাংলাদেশ সময়: :১৩৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৪
এএইচএস