ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাক্ষাৎকারে নাজিবউল্লাহ জাদরান

‘আমাদের দেশের মানুষ চার-ছক্কা দেখলে খুশি হয়’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, সিলেট থেকে  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
‘আমাদের দেশের মানুষ চার-ছক্কা দেখলে খুশি হয়’

এক যুগের বেশি সময়ের ক্যারিয়ার। লম্বা সময় ড্রেসিংরুমে থেকেই দেখেছেন আফগানিস্তান ক্রিকেটের উত্থান।

নাজিবউল্লাহ জাদরান এবার বিপিএলে এসেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলতে। শেষের দিকে ব্যাটিংয়ে দলটির বড় ভরসাও তিনি।  

আফগানিস্তানের হয়ে ৯২ ওয়ানডে ও ১০০ টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটার পরিচিত তার পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য। তার নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আফগানিস্তানের উত্থান, বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স— এমন অনেক কিছু নিয়ে বাংলানিউজকে সিলেটে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নাজিবউল্লাহ...

বাংলানিউজ : বাংলাদেশে সময় কেমন কাটছে?

নাজিবউল্লাহ : এখন অবধি কিছু ব্যাপারে খুশি। কিন্তু কখনও কখনও অবশ্য বিরক্তিও লাগছে। কারণ আমি ঝাল পছন্দ করি না। এখানে অনেক বেশি ঝাল সবকিছুতে। যদিও আমি কিছু অ্যারাবিক রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করেছি এখন ভালোই উপভোগ করছি বিপিএল।  

বাংলানিউজ : এখানকার মানুষদের সমর্থনও তো বেশ ভালো?

নাজিবউল্লাহ : আমি বিপিএলে অনেকবারই খেলেছি। ভালোই উপভোগ করি। সমর্থকরা আমাদের দলকে সমর্থন করে। তারা বিশেষত আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের বেশ পছন্দ করে। তারা আমাকেও সমর্থন দিচ্ছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।  

বাংলানিউজ : আপনার ক্যারিয়ারে আসি, আপনি তো বেশ অল্প বয়সেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন...

নাজিবউল্লাহ : শুরুতে আমি অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ছিলাম, তারপর অনূর্ধ্ব-১৭তে খেলেছি, এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে সরাসরি জাতীয় দলে খেলেছি। ২০১১ সালে সুযোগ পেয়েছিলাম, ১৩ বছর হয়ে গেছে। এখনও খেলছি। ২০১৪ সালে যখন জাতীয় দলে আসি, এরপর থেকে আর বাদ পড়িনি। আমি আর নবিই এখন এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। যদি ফিট থাকি তাহলে আরও কয়েক বছর খেলতে চাই। দেখা যাক পারি কি না!
 
বাংলানিউজ : এক যুগ ধরে জাতীয় দলে খেলছেন। যখন শুরু করেন, তখন আফগানিস্তান কেবল শীর্ষ পর্যায়ে আসছে। আর এবার প্রায় বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলে ফেলেছিল...

নাজিবউল্লাহ : আমরা এটার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। এই বিশ্বকাপে বিশ্বাস নিয়েই গিয়েছিলাম ভালো কিছু করার। আমাদের লক্ষ্যও ছিল সেমিফাইনালে যাবো; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা হেরে গেছি। কিন্তু আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি।  

আমাদের স্কিল ও সক্ষমতা পুরো দুনিয়াকে দেখিয়েছি; এটা বুঝিয়েছি দুনিয়ার যেকোনো দলকে হারাতে পারি। এখন দেখা যাক, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসছে; চেষ্টা করবো ওখানেও ভালো কিছু করে দেখানোর।  

বাংলানিউজ : বাংলাদেশের বিপক্ষে না হারলেই তো সেমিফাইনালে যেতেন। ওই হারটা কি আপনাদের জন্য কিছুটা বিস্ময়কর ছিল?

নাজিবউল্লাহ : সত্যি বলতে আমরা ওইদিন খুব হতাশ ছিলাম। কিন্তু এটা খেলারই অংশ। যখন কোনোদিন ভালো খেলি, তাহলে জিতবো। যদি ভালো না খেলি, হেরে যাবো। ওইদিন বাংলাদেশ ভালো খেলেছে, তাই তারা জিতেছে।  

বাংলানিউজ : আপনাদের অধিনায়ক হাশমতউল্লাহর ভূমিকা কেমন ছিল?

নাজিবউল্লাহ : উনি সবাইকেই সাহস যোগায়, শুধু আমাকে না। গত এক দেড় বছর ধরে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, পারফর্ম করছে; দলও ভালো করছে। রশিদও আছে, ও টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক। দুজনেই খুব ভালো অধিনায়ক। আমার মনে হয় ২০২৩ বিশ্বকাপে হাশমত খুব ভালো খেলেছে। তারা সবাইকে সমর্থন দিয়েছে।  

বাংলানিউজ : আপনার শুরুর বছরগুলোতে, যখন আফগানিস্তান বড় নাম ছিল না ক্রিকেটে। ওখান থেকে এই উত্থানের কারণ কী মনে হয়? 

নাজিবউল্লাহ : আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়রা ভালো করতে চাইতো, তারা সেটা ছড়িয়ে দিয়েছে। আমরাও চেয়েছি ভালো ক্রিকেট খেলতে। আমরা ড্রেসিংরুমে তরুণদের সমর্থন দিয়েছি; তারা আমাদের কাছে শিখেছে। আমরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। পাঁচ ছয় বছর ধরে আমাদের দল খুব ভালো করছে।  

ফিটনেস নিয়ে বিশেষত অনেক কাজ করেছি; আগে আমাদের ফিটনেস এত ভালো ছিল না। এখন যদি আপনি আমাদের ছেলেদের দেখেন, তারা খুব ফিট। এজন্য আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। সবার নিজের একটা রুলস আছে। এজন্যই আমাদের দল দিন দিন ভালো হচ্ছে।  

বাংলানিউজ : আফগানিস্তানে এখন অনেক টি-টোয়েন্টি তারকা। আপনিও তাদের একজন। এটার রহস্যটা কী?

নাজিবউল্লাহ: আমাদের দেশের মানুষ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা পছন্দ করে। তারা চার-ছক্কা দেখলে খুশি হয়। এটা নিয়ে আমরা বিশেষ পরিশ্রম করেছি। আমাদের দেশের মানুষদের প্রতিভা আছে, একই সঙ্গে আমাদের শক্তিও অনেক। এজন্য আমরা শর্ট ফরম্যাট পছন্দ করি। সিঙ্গেলস বা ডটের চেয়ে বাউন্ডারি পছন্দ করি বেশি। টি-টোয়েন্টিতে এজন্যই ভালো করছি।  

বাংলানিউজ : আপনি কি শুরু থেকেই এভাবে মেরে খেলতেন?

নাজিবউল্লাহ : একদম শুরু থেকেই আমি হিটার। যখন আমি অনূর্ধ্ব-১৫ বা -১৯ এও খেলি তখনও বড় শট খেলতে পছন্দ করতাম। তখন আমি বিশেষ করে হিটই করতাম, যখন অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে জাতীয় দলে এলাম; বড় হিট করতাম, সিঙ্গেলস বা ডাবলস নিতাম না তেমন। আমি বাউন্ডারি মারা পছন্দ করি, এ নিয়েই কাজ করি বেশি।  

বাংলানিউজ : আফগানিস্তান তো স্পিনারদের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। আপনি কি এখন পাওয়ার হিটিংয়ের ট্রেন্ডটা ছড়িয়ে দিতে চান পরের প্রজন্মের কাছে?

নাজিবউল্লাহ : হ্যাঁ, আপনি জানেন আমাদের খুব ভালো স্পিনার আছে। তবে যদি বিশ্বকাপেও আমাদের ব্যাটারদের দেখেন, বেশ ভালো খেলছে। আমরা ২৮০ রান তাড়া করেছি, ৩০০ করেছি। এটার মানে হচ্ছে আমাদের ব্যাটাররা ভালো খেলছে। এজন্যই আমরা ভালো করছি। ইন শা আল্লাহ চেষ্টা করবো আরও ভালো করার।  

বাংলাদেশ সময় : ১৮২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪
এমএইচবি/এএইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।