ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

আগ্রহ, রোমাঞ্চের বিপিএল ফাইনালে কুমিল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী বরিশাল

মাহমুদুল হাসান বাপ্পী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
আগ্রহ, রোমাঞ্চের বিপিএল ফাইনালে কুমিল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী বরিশাল

মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের হাতে একটা খাতা। তিনি বসে পড়লেন একাডেমি মাঠের একটি পিচের সামনে গিয়ে।

এরপর একে একে তাকে ঘিরে ধরলেন ক্রিকেটাররাও। তাতে সময়ের সঙ্গে কেবল জটলাই বাড়লো। মিনিট দশেকের ওই ঘিরে থাকায় হয়তো পরিকল্পনা আঁটা হলো আরও একবার বিপিএল শিরোপাটা নিজেদের করে নেওয়ারও।

এই ট্রফিটা তো সবচেয়ে ভালো চেনা তাদেরই। এর আগে যতবারই ফাইনালে পৌঁছেছে, প্রতিবারই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স স্বাদ পেয়েছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ারই; এর সবগুলোতেই ছিলেন সালাউদ্দিন। পঞ্চম ফাইনালের আগেরদিন তার দলের ব্যস্ততা ছিল মাঠ ও মাঠের বাইরেও। আরেকদিকে প্রতিপক্ষ ফরচুন বরিশালের সময় কেটেছে বিশ্রামে।

আগেরদিন ম্যাচ খেলার ধকলের পর পরদিন তাদের আনুষ্ঠানিকতা বলতে ছিল কেবল ফটোসেশন। অধিনায়করা থাকবেন বলা হলেও শেষ অবধি লিটন দাস ও তামিম ইকবালের কেউই থাকেননি ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলায়। সেখানে বরিশালের প্রতিনিধি হয়ে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, কুমিল্লার জাকের আলি অনিক। এর পেছনের কারণ হিসেবে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ভাষ্য, ম্যাচের আগেরদিন ভ্রমণ ক্লান্তিতে ফেলতে চাননি অধিনায়ককে।

সকালে আহসান মঞ্জিলে ট্রফি সেশনে অংশ নেওয়ার পর রাতে জাতীয় দলের জার্সি উন্মোচনেও ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বেড়ে উঠা খুলনায় হলেও জন্মস্থান বরিশাল। এখনও তার আত্মীয়-স্বজন আছেন ওখানে। এবার ফরচুন বরিশালকে ফাইনালে নিয়ে গেছেন মিরাজ। আগে দুবার ফাইনাল খেললেও শেষ অবধি শিরোপা ছুয়ে দেখা হয়নি তার।  

এবার শিরোপা ছোঁয়ার প্রত্যয় ছিল তার কণ্ঠে, ‘আমি কখনো ট্রফি জিতিনি বিপিএলে। যদি এবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, এটাই আমার জন্য প্রথম চ্যাম্পিয়ন হবো। এর আগে দুবার ফাইনাল খেলেছি, এটা নিয়ে তিনবার খেলব। ফাইনালে জিততে পারিনি, কিন্তু আশা করবো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য এবং সবাই চায় চ্যাম্পিয়ন হতে। কুমিল্লা ওরাও চায় চ্যাম্পিয়ন হতে, আমরাও চাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। ’

বিপিএলের পথটা অবশ্য বেশ বন্ধুরই ছিল বরিশালের জন্য। দেশি তারকাদের মেলা বসানো দল নিয়ে শুরুতে ছিল কিছু অনিশ্চয়তা। ক্যারিয়ার সায়াহ্নে চলে আসা ক্রিকেটাররা কি পারফর্ম করতে পারবেন? প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতে হারায় শঙ্কা বেড়েছিল আরও।

কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে ততই তাদের শক্তি বেড়েছে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ফিট হয়ে মাঝপথে ফিরে দলের জন্য হয়ে গেছেন দুর্দান্ত এক সংযুক্তি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মেয়ার্সও প্রায় প্রতিদিনই পারফর্ম করছেন দলের হয়ে। এর সঙ্গে কখনও তামিম ইকবাল, কখনো মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অভিজ্ঞতা ত্রাতা হয়েছে বরিশালের জন্য।

যদিও প্লে অফেও তাদের জায়গা হয় এলিমেনটরে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে সহজ জয়ের পর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দলটি হারায় রংপুর রাইডার্সকেও। এখন তারা ফাইনালে। যেখানে তাদের ভরসা দেশি পারফরমাররা।

প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও। কিন্তু এরপর যত সময় গড়িয়েছে, ততই শক্তিশালী হয়েছে কুমিল্লা। প্রতিবারই যেটি তাদের জন্য রীতি। তবে মোটা অঙ্কের অর্থে নিয়ে আসা তাওহীদ হৃদয় ছিলেন দলটির বড় ভরসা হয়ে; নতুন নেতৃত্বে আসা লিটন দাসও হাঁটতে পেরেছেন কুমিল্লার পুরোনো ফরমুলায়।  

বরিশালের তামিমের সঙ্গে সেরা রান সংগ্রাহকের দৌড়ে থাকা হৃদয় নিজেদের ব্যক্তিগত লড়াইয়ের মীমাংসা করার সুযোগও পাচ্ছেন ফাইনালে। হৃদয়ের রান এখন ৪৪৭, তামিমের ৪৫৩। তবে দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন বিদেশিরা।  

আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন, মঈন আলি ও জনাথন চার্লসের যে কেউই ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার শক্তি রাখেন। তারা ভালো চেনেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পরিবেশ কিংবা ফাইনালটা। এটি যে শক্তির জায়গা, ম্যাচের আগের দিন ওই কথা বলেছেন কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও।  

‘ফাইনালের জন্য তো সবাই রোমাঞ্চিত থাকেই। আমাদের দলের বাড়তি সুবিধাটা হচ্ছে, বেশিরভাগ খেলোয়াড়েরই ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তারা চাপের মুহূর্তগুলো ভালোভাবে সামলানোর সক্ষমতা রাখে। যারা বিদেশি খেলোয়াড়, তাদেরও অনেক ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কুমিল্লার দেশিদেরও ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ফাইনাল ম্যাচে নার্ভের একটা বিষয় থাকে। এখানে এই বিষয়টা বাড়তি সুবিধা দিতে পারে। ’

বরিশালের সঙ্গে কুমিল্লার শিরোপা লড়াই ঘিরে সমর্থকদের আগ্রহও তুঙ্গে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে আলোচনার স্রোত এসে লেগেছে মিরপুরের টিকিট কাউন্টারগুলোতে। কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন দিয়ে টিকিটের প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সমর্থকরা।  

কিন্তু তবুও টিকিট না পেয়ে তাদের হতাশা প্রকাশেও ছিল অসহিষ্ণতা। সেটিকে সামলাতে গিয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়েছে। দর্শকরা ক্ষোভে মিরপুর স্টেডিয়ামের গেট ভাঙার চেষ্টা করেছেন। আগ্রহ স্পষ্ট হয়েছে সেখানেই।  

একদিকে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের শিরোপা ছুয়ার অশেষ অপেক্ষার ইতি হবে কি না এমন প্রশ্ন। আরেকদিকে কুমিল্লার জন্য সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার লড়াই। শেষ অবধি জয় হবে কার? উত্তর জানা যাবে কাল। তবে বিসিবি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাসই হয়তো ফেলতে পারে, বিপিএলটা শেষ হচ্ছে অন্তত মাঠের ক্রিকেটের আলোচনা দিয়ে!

বাংলাদেশ সময় : ২২৩৮ ঘণ্টা, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
এমএইচবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।