চট্টগ্রাম থেকে: হাসান মাহমুদের বলটা পার করলো স্লিপ ফিল্ডারকে। এরপর এক বলের পেছনে ছুটলেন পাঁচজন।
ফলো-অনের সুযোগ পেয়েও সেটি করায়নি শ্রীলঙ্কা। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে উইকেট বিলিয়েছে তারাও। ১৫ উইকেট হারানোর দিন শেষে অবশ্য স্বস্তিতেই আছে লঙ্কানরা। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে ম্যাচের প্রায় পুরোটাই হেলে আছে তাদের দিকে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৭৮ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। সুযোগ থাকতেও তাদের ফলো-অন করায়নি শ্রীলঙ্কা।
নিজেরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১০২ রান করেছে লঙ্কানরা। ৫০ বলে ৩৯ রান করে ম্যাথিউস ও ১৭ বলে ৩ রান করে অপরাজিত আছেন প্রভাথ জয়াসুরিয়া। বাংলাদেশের চেয়ে এখন ৪৫৫ রানে এগিয়ে আছে লঙ্কানরা।
সামনে অনেক বড় রান। এর মধ্যে দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলেই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের শুরুটা করেন জাকির হাসান ও তাইজুল ইসলাম। তাদের দুজন প্রথম ঘণ্টাটা কাটিয়ে দেন দারুণভাবে।
আরও একবার ব্যাট হাতে উজ্জ্বল নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাইজুল। প্রথম ঘণ্টায় উইকেট না হারানোর স্বস্তি নিয়ে ভালো সেশনের আশাই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু হঠাৎই ঘটেছে ছন্দপতন। পরের ঘণ্টায় তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছে তারা।
শুরুটা হয় জাকিরকে দিয়ে। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সাজঘরের পথে ফিরেছেন তিনি। জয়ের মতো জাকিরও আউট হয়েছেন ভেতরে ঢোকা বলে। ৮ চারে ১০৪ বল খেলে ৫৪ রান করেছেন জাকির।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ফেরেন ১১ বলে ১ রান করে। প্রবাথ জয়াসুরিয়ার বলে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে কাজটা ঠিকঠাকই করেছেন তাইজুল ইসলাম। কিন্তু প্রথম সেশন টিকতে পারেননি তিনি।
৬১ বল খেলে ২২ রান করে বিশ্ব ফার্নান্দোর বলেই বোল্ড হয়ে যান তিনি। বাংলাদেশের হয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যান সাকিব আল হাসান ও মুমিনুল হক। কিন্তু বিরতি থেকে ফিরেও খুব একটা ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের। শুরুটা হয় সাকিব আল হাসানকে দিয়ে।
শুরুতে তাকে কয়েকটি বাউন্সার দিয়ে হুট করে ইনসুইঙ্গার ছাড়েন আসিথা ফার্নান্দো, এলবিডব্লিউ হন সাকিব। পরে রিভিউ নিলেও আম্পায়রস কলে সাজঘরে ফিরতে হয় ২৩ বলে ১৫ রান করা এই ব্যাটারকে। লিটন দাস উইকেটে এসে তিন বলের বেশি থাকতে পারেননি।
দ্বিতীয় বলে দারুণ একটি চার হাঁকান। কিন্তু পরের বলই তার ব্যাট ছুয়ে চলে যায় কুশল মেন্ডিসের গ্লাভসে। এক ওভারেই দুই উইকেট হারানোর পর একপ্রান্ত আগলে থাকা মুমিনুলের সঙ্গী হন শাহাদাৎ হোসেন দীপু। এই ব্যাটারের ক্যাচ মিস হলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি।
৩৬ বলে ৮ রান করার পর তিনি ক্যাচ দেন দ্বিতীয় স্লিপে, দারুণভাবে সেটি ধরেন কামিন্দু মেন্ডিস। মেহেদী হাসান মিরাজও হয়ে যান এলবিডব্লিউ। স্বাগতিকদের শেষ ভরসা হয়ে বেঁচে ছিলেন মুমিনুল। আসিথ ফার্নান্দোর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে নবম ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
৮৪ বলে ৩৩ রান করে আউট হন মুমিনুল। এরপর বাংলাদেশের অলআউট হওয়া ছিল কেবলই সময়ের ব্যাপার। সেটি খুব একটা দীর্ঘও হয়নি। তার বিদায়ের পর তিন রান যোগ হয়েছে স্কোরবোর্ডে। শ্রীলঙ্কার হয়ে চার উইকেট নেন আসিথা ফার্নান্দো। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন বিশ্ব ফার্নান্দো, লাহিরু কুমারা ও প্রবাথ জয়াসুরিয়া।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য সুবিধা করতে পারেনি শ্রীলঙ্কাও। যদিও তাদের রানটা এখন পৌঁছে গেছে নিরাপদ দূরত্বে। মূলত অভিষিক্ত হাসান মাহমুদের বলে ধরাশায়ী হয়েছেন লঙ্কান ব্যাটাররা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ৫ বলে ৪ রান করা দিমুথ করুণারত্নেকে বোল্ড করেন তিনি। পরের উইকেটটি অবশ্য নেন আরেক পেসার খালেদ আহমেদ। ২ বলে ২ রান করা কুশল মেন্ডিসকে বোল্ড করেন খালেদ।
১৫ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ছোট একটি জুটি গড়েন নিশান মাদুশকা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তাদের ওই ৪৫ রানের জুটি ভাঙেন হাসান। এর আগে অবশ্য ক্যাচ ছাড়েন শাহাদাৎ হোসেন দীপু। তবে ৪৫ বলে ৩৪ রান করা মাদুশকার ক্যাচ এক্সট্রা কাভারে নিতে ভুল করেননি মেহেদী হাসান মিরাজ।
পরের ওভারে হাসান এলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন দিনেশ চান্দিমাল। আগের ম্যাচের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি ও এবার প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। তাদের দুজনকেও আউট করেছেন হাসান ও খালেদ।
৭ বলে ১ রান করে হাসানের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেন ধনঞ্জয়া। ১৭ বলে ৯ রান করে খালেদের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন কামিন্দু। দিনের বাকি সময়টা জয়সুরিয়াকে নিয়ে পার করে দিয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।
বাংলাদেশ সময় : ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৪
এমএইচবি/এএইচএস