ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

উইকেট নিয়ে প্রশ্ন দর্শকদেরও

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
উইকেট নিয়ে প্রশ্ন দর্শকদেরও ছবি:শোয়েব মিথুন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিপিএলের সর্বশেষ তিন ম্যাচে আগে ব্যাট করা দলের স্কোর যথাক্রমে ৮৯, ১০৯ ও ৯২। টি-টোয়েন্টিকে ধুম-ধাড়াক্কা ক্রিকেট বলা হলেও এ ম্যাচের স্কোরগুলো দেখে তা মানার উপায় নেই।

এমন না যে, ব্যাটসম্যানদের চূড়ান্ত ব্যর্থতায় স্কোরবোর্ডের এই হাল। উইকেটের আচরণের ফলেই স্বভাবজাত ব্যাটিং করতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা।

ফলে দর্শকরা বঞ্চিত হচ্ছেন চার-ছক্কার বিনোদন থেকে। এ নিয়ে দর্শকদের মনেও কাজ করছে হতাশা, বিরক্তি।

‘অফিসের কাজ শেষ করে তড়িঘড়ি করে বিপিএলের ম্যাচ দেখতে এলাম। মাঠে ঢুকে তো দেখতে পাচ্ছি টেস্ট ম্যাচ! টেস্টেরও আলাদা একটা ব্যাপার থাকে। রান না হলেও উইকেট হাতে থাকলে পরের দিন ব্যাটিং দেখার সুযোগ থাকে। টি-টোয়েন্টিতে তো আর সেটা নেই। বিপিএলে শুধু কি বোলারদের পারফরম্যান্স দেখতে এসেছি?’ বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) রাতে ঢাকা-চিটাগং ম্যাচ দেখতে আসা মহিউদ্দিন নামের এক ক্রিকেটভক্ত বিপিএলে রান না ওঠায় এভাবেই বিরক্তি প্রকাশ  করেন এই প্রতিবেদকের কাছে।

আরও অনেক দর্শকের প্রশ্ন-উইকেটে কেন রান হচ্ছে না! এদিন দুপুরের ম্যাচে রান হয়েছে ১০৯। এ রানেও মুশফিকুর রহিমের সিলেটকে ৬ রানে হারায় সাকিব আল হাসানের রংপুর। এতে দর্শকদের কাছেও ব্যাপারটি স্পষ্ট- উইকেটের বাজে আচরণের কারণেই রান পাচ্ছেন না তাদের প্রিয় ব্যাটসম্যানরা।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে উইকেট নিয়ে কথা বলেন রংপুর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, মাঠে বেশি ম্যাচ হওয়ার ফলে উইকেট ভালো আচরণ করছে না। সিলেটের ক্রিকেটার রবি বোপারা বলেন, এখানকার উইকেটে স্পিন খেলাই শুধু কঠিন নয়; পেস বল খেলাও কঠিন। বল মুভ করছে, পাশাপাশি অনেক মন্থর উইকেট।

শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের কিউরেটর গামীনি ডি সিলভা সরাসরি উইকেট নিয়ে কথা না বললেও হতাশার সুরে জানান, পৃথিবীর কোনো মাঠেই এতো বেশি খেলা হয় না।

শুধু উইকেট নয়; আউটফিল্ডের অবস্থাও স্বাভাবিক নেই। সবুজ ঘাসগুলো হলদেটে রং ধারণ করেছে। ঘাসের পুরো আস্তরণ ভেদ করে ঘাসের গোড়া থেকে বালুর কণা বের হচ্ছে বছরজুড়ে এ মাঠকে ম্যাচের জন্য ব্যবহার করায়।

এ বছর সবচেয়ে বেশি খেলা হয়েছে এ মিরপুরে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের সবগুলো ম্যাচ ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের বেশিরভাগ ম্যাচই হয়েছে এখানে। হয়েছে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পও। ঘরোয়া ক্রিকেট- প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ (দুই মৌসুম), বিসিএল-এমনকি সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের উদ্বোধনী ম্যাচও আয়োজন করা হয়েছে এ মাঠে। সবমিলে কোনোরকম বিশ্রাম দেয়া হয়নি ভেন্যুটিকে।

নানা কারণে বিপিএলে ছুটির দিনগুলো ছাড়া দেখা যাচ্ছে না গ্যালারিভর্তি দর্শক। এতে ক্রিকেটকে নিয়ে যারা মৌসুমি ব্যবসা করেন তাদের ব্যবসাতেও মন্দা যাচ্ছে। স্টেডিয়ামের ভেতর খাবারের বেচা-বিক্রি তেমনটা হচ্ছে না। বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, খাবারের স্টল নিতে একেকজন ব্যবসায়ীকে বিসিবিতে জমা দিতে হয়েছে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা।

মাঠের খেলাকে পুঁজি করে মাঠের বাইরে যারা দর্শকের গালে, হাতে রং-তুলির আঁচড় দিয়ে থাকেন, তাদেরও ব্যবসা হচ্ছে না। মানিকগঞ্জ থেকে আসা ট্যাটু-পতাকা আঁকানো তৌহিদ সরকার বলেন, বিপিএলে ছুটির দিন ছাড়া দর্শক হবে না। প্রতিদিনই দুটি খেলা। মানুষ কয়দিন আসবে মাঠে? ছয়টা বিভাগেই যদি খেলা হতো তাহলে সবখানেই দর্শক হতো। এবার শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে খেলা। চট্টগ্রামে প্রথমদিকে দর্শক হবে। তবে ওখানে যদি অনেক বেশি ম্যাচ হয় পরবর্তীতে দেখবেন ওখানকার দর্শকরাও খেলা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ব্যাপারটা এরকমই। সাত বছর যাবৎ এ কাজ করছি। তাই দর্শকদের ব্যাপারটা ঠিকই ধরতে পারছি; বিসিবি পারছে না।  

বিপিএলের আগের আসরগুলো হয়েছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায়। এবার ভেন্যু না বাড়িয়ে উল্টো কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। সিদ্ধান্ত যে বাস্তবিক ছিল না সেটা নিশ্চয়ই টের পাচ্ছেন তারাও!

এ পর্যন্ত মিরপুরে বিপিএলের ১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) রয়েছে আরও দুটি ম্যাচ। এরপর ৩০ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হবে ৮টি ম্যাচ। ফাইনালসহ টুর্নামেন্টের বাকি ১৬ টি ম্যাচ  হবে মিরপুরে। এতো ধকল সইতে পারবে তো ‘ক্লান্ত’  শের-ই-বাংলা!

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, ২৭ নভেম্বর ২০১৫
এসকে/এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।