ঢাকা: ক্রিকেটের মাঠে পাকিস্তান-ভারতের ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। এ দুই ক্রিকেট শক্তির ম্যাচ মানেই মাঠে দর্শক উপচে পড়া গ্যালারি কিংবা টেলিভিশনের সামনে ক্রিকেট ভক্তদের বাড়তি আগ্রহ নিয়ে খেলা দেখা।
এতে প্রমাণিত যে, বৈরী সম্পর্কের এ দু’দেশের ক্রিকেট মাঠে যেমন উত্তেজনা তৈরি করে তেমনি করে এর বাইরেও। হোক সেটা টেস্ট, ওয়ানডে কী টি-টোয়েন্টি।
তবে উদ্বেগের বিষয় হল- প্রায় এক দশক ধরে এ দুই দেশের মধ্যে কোনো টেস্ট খেলা না হওয়া। যদিও এশিয়া কাপ, আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে মাঠে তাদের লড়াই নিয়মিত দেখছেন দর্শকরা।
ফলে পুরো বিশ্বের দর্শক মহল বঞ্চিত হচ্ছেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী দু’দেশের লড়াই উপভোগ থেকে। পাক-ভারত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির মতো দেশ দু’টোর মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ দেখতেও অধীর আগ্রহ তাদের।
এদিকে পাক-ভারত টেস্ট সিরিজ না হওয়ার কারণ হিসেবে মূলত উভয় দেশের কূটনৈতিক টানা-পোড়নকেই দেখছেন অনেকে।
ক্রিকেট বিশ্বে বাড়তি উন্মাদনা সৃষ্টিকারী এ দুই দেশের টেস্ট লড়াই সব শেষ মাঠে গড়িয়েছিল আজ থেকে আট বছর আগে।
২০০৭ সালের ডিসেম্বরে তিন ম্যাচ সিরিজের টেস্ট খেলতে ভারত সফরে এসেছিল পাকিস্তান। ওই সময় সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে ১-০ তে সিরিজ জিতে স্বাগতিক ভারত।
দিল্লির ফিরাজ শাহ কোটলায় সিরিজের প্রথম টেস্ট ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল স্বাগতিকরা। এরপর কলকাতার ইডেন গার্ডেনে দ্বিতীয় ও চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি ড্র হয়।
এরমধ্যে অবাক করার বিষয় হলো, টেস্ট ক্রিকেটে পাক-ভারত লড়াই এর আগেও দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ ছিল। চলমান অচলাবস্থার আগে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছর দুই দেশের মধ্যে কোনো টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়নি।
লম্বা বিরতির পর ১৯৯৯ সালে টিম পাকিস্তান ভারত সফরে গেলে দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্ট ১-১ এ ড্র হয়। প্রথমটিতে পাকিস্তান ১২ রানে জিতলেও পরেরটিতে ভারত ২১২ রানের বড় ব্যবধানে জিতে যায়।
এর আগে পাক-ভারত লড়াইয়ের অচলাবস্থা ছিল আরও লম্বা। সেই সময়টির স্থিতিকাল ছিল ১৭ বছর! ১৯৬১-৭৮ সাল পর্যন্ত দুই দেশের জমজমাট মাঠের লড়াই দেখতে পারেননি পুরো বিশ্বের দর্শকরা।
আর এই কারণটিও যে পুরো রাজনৈতিক ছিল- তা হয়তো অনেকে জেনেও থাকবেন।
ষাটের দশকে টেস্ট সিরিজ খেলতে ভারত ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যেতে চাইলেও ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের কারণেই তা বাতিল হয়। উবে যায় ভবিষ্যত সফরের সম্ভাবনাও।
এরপর দু’টি দেশের মধ্যে টেস্ট সিরিজ মাঠে গড়ানো নিয়ে উভয় দেশের ক্রিকেট বোর্ড বিভিন্ন আলোচনায় বসে। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ডামাডোলে ফের তা পিছিয়ে যায়।
ঐতিহাসিক শত্রুতা এই দু’দেশের ক্রিকেটকে এমন বাজে ভাবে প্রভাবিত করেছে যে, ১৯৫২ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছরে ‘বৈরী’ সম্পর্কের মধ্যে টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হয় মাত্র ১৫টি।
একাত্তরের পর ১৯৭৫ সালে পূর্ণাঙ্গ টেস্ট সিরিজের লক্ষ্যে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডে আবার আলোচনা হয়। কিন্তু তখনও ভারতে অব্যাহত রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাতে সমর্থন দেয়নি ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআই।
এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এমন অবস্থায় মুখ থুবরে পড়ে দু’দশের ক্রিকেট সিরিজ।
পরের বছর ১৯৭৬ সালে আবারও দুই দেশের মধ্যকার টেস্ট সিরিজ মাঠে গড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দেয়। সে সময় ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, সিরিজ খেলতে ভারত ক্রিকেট দল ওই বছরই পাকিস্তান সফরে যাবে। কিন্তু এ সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা।
তবে সমস্যার সমাধান উঁকি দেয় ১৯৭৭ সালে; যখন সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পতন হয়।
আর তার পতনের পরই ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটের আকশে নতুন সূর্যের উদয় হয়। দর্শকদের আশার পালেও জোর হাওয়া লাগে।
নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে ১৯৭৮ সালে পাক-ভারত ক্রিকেট বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া-২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর তিন ম্যাচ সিরিজের টেস্ট খেলতে পাকিস্তান সফরে যাবে ভারতীয় ক্রিকেট দল।
আর এতে অবসান হয় দীর্ঘ ১৭ বছরের ‘টেস্ট অচলাবস্থা’র। বিশ্বের ক্রিকেট পাগল দর্শকদের মধ্যেও ফিরে আসে উন্মাদনা। প্রাণ ফিরে পায় এশীয় তথা বিশ্ব ক্রিকেট।
ঠিক এভাবেই আবার অনতি বিলম্বে সব ধরনের রাজনৈতিক টানা-পোড়নের অবসান ঘটিয়ে শিগগির ফের মাঠে গড়াবে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাক-ভারত টেস্ট সিরিজ; সেই সঙ্গে উন্মাদনায় মাতবেন ভক্তরা। এমনটিই প্রত্যাশা ক্রিকেট বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
এইচএল/এমএ