ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

জাদুকর মুস্তাফিজে অভিভূত আইপিএল

হুসাইন আজাদ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
জাদুকর মুস্তাফিজে অভিভূত আইপিএল ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ধারাভাষ্যে তখন ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার (সানি) ও পাকিস্তানের রমিজ রাজা। মুস্তাফিজের ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভার শেষ হতে রমিজ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন, ‘ম্যাজিকাল স্পেল সানি?’ তার চেয়ে আরও বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে গাভাস্কার জবাব দিলেন, ‘টোটালি!’ কিন্তু সানির একশব্দের উত্তরে যেন খুশি হতে পারলেন না রমিজ।

এবার নিজে আরও জোর গলায় বলে উঠলেন, ‘অবিশ্বাস্য, অবাস্তবিক!’ (আনবিলিভেবল, আনরিয়েল)।
 
শনিবার (২৩ এপ্রিল) আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার খেলা চলাকালে টাইগার মুস্তাফিজের চারটি ওভারের প্রতিটি বলের প্রশংসা করতে এভাবেই যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল সবার মধ্যে।
 
টসে জেতার পর বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সানরাইজার্সের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। প্রথম পাঁচটি ওভার তিনি করান ভুবনেশ্বর কুমার, বারিন্দর স্রান ও দীপক হুডাকে নিয়ে। কিন্তু সবাই যে মুস্তাফিজের বোলিং দেখার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায়।
 
ষষ্ঠ ওভারে এলেন তিনি আক্রমণে। সেই ‘অপেক্ষা’র অবসান হওয়ায় কিনা ক্রিকইনফো তাদের ধারাভাষ্যে মুস্তাফিজের আগমনের জানান দিলো, ‘এই তো এসেছেন দ্য ফিজ’ (হেয়ার ইজ দ্য ফিজ) বলে।
 
দ্য ফিজের আগমনে তার ভক্তকূল এমন উচ্ছ্বাস দেখালেও ‘মুস্তাফিজ জুজু’ ভর করছিলো যেন পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যানদের ওপর। যে জুজুতে রান আউট হয়ে বিদায় নিতে হলো দারুণ ব্যাট করতে থাকা মনন বোহরাকে। মুস্তাফিজ বোলিংয়ে আসার আগে যে বোহরার সংগ্রহ ছিল ১৮ বলে ২৫, সেই তিনি দ্য ফিজের প্রথম চার বল বুঝতেই পারেননি। পঞ্চম বল কোনো মতে ব্যাটে লাগিয়েই দিলেন দৌঁড়, অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যান ফেরত পাঠালেও ফিরতে পারলেন না তিনি, রান আউট হয়ে পথ ধরলেন সাজঘরের।
 
মুস্তাফিজ প্রথম ওভার মেডেন নেওয়ার পর সানরাইজার্সের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে উচ্ছ্বাস, ‘বন্ধুরা, মুস্তাফিজের বোলিং দেখাটা সত্যিই আনন্দের! মেডেন দিয়ে শুরু, জিনিয়াস!’
 
তবে, ‘এক ঝলক’ দেখিয়ে অধিনায়ক ওয়ার্নার যেন তার ‘রত্ন’কে কয়েক ওভারের জন্য আবার লুকিয়ে রাখলেন। কিন্তু তাতে যে তর সইছিলো না ধারাভাষ্যকারদের। বারবার তারা খুঁজছিলেন ‘দ্য ফিজকে’।
 
সেই খোঁজাখুঁজি থামাতে ১৪তম ওভারের শুরুতে ক্রিকইনফো জানান দিলো, ‘আপনাদের প্রশ্নের উত্তর নিন, এই যে আবার আক্রমণে মুস্তাফিজ’। একের পর এক কাটার-স্লোয়ারে মুস্তাফিজ প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ঘোরের মধ্যে ফেলতে থাকলেন। এই ঘোর কাটতে পারলেন না দুরন্ত ব্যাটিং করতে থাকা শন মার্শ। তৃতীয় ডেলিভারিতে মায়াবী এক অফ-কাটারে তাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মুস্তাফিজুর। ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্যে বলা হচ্ছিল, ‘জাদুকরের আবার সেই ডেলিভারি! পুরো বোকা হয়ে গেলেন শন মার্শ!’ এই জাদুমাখা দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজ দিলেন মাত্র ১ রান।
 
এরপর ১৬তম ওভারও সেরা অস্ত্রকে দিয়ে করালেন অধিনায়ক। মাত্র ২ রান খরচার এই ওভারের প্রতিটি বল কেমন ছিল তার বর্ণনা দেয় যেন শেষ ডেলিভারিতে ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্য, ‘ব্যাটসম্যান চেষ্টা করলেন পয়েন্টে পাঠাতে। কিন্তু রেজাল্ট? আবারও পরাজিত!’
 
মুস্তাফিজকে নিয়ে ধারাভাষ্যকারদের এই প্রশংসা বাণীতে ঢুকে পড়লেন ক্রিকইনফোর শরিফ তমাল নামে এক পাঠক, ‘আগামী আইপিএলের নিলামে দ্য ফিজকে নিয়ে দরাদরিটা কেমন হবে? এই বছরতো ১ কোটি ৪০ লাখ! মনে হচ্ছে সানরাইজার্স যেন তাকে ফ্রি পেয়েছে...!’
 
শেষ ওভারে বল করতে এলেন মুস্তাফিজ। তার আগে কিংসদের সংগ্রহ ১৩৭। তখন ক্রিকইনফোতে বলা হচ্ছিল, ‘কিংসরা ১৫০ পার হবে তো, কিন্তু আক্রমণে যে দ্য ফিজ!’ সত্যিই ১৫০ পার হতে পারেনি কিংসরা। দ্য ফিজ শেষ ওভারে দিলেন মাত্র ৬ রান, তুলে নিলেন নাইকের উইকেট।
 
তার এই কৃপণতায় বেশ ‘আক্ষেপ’ করে এক পাঠক বলছিলেন, ‘পাঞ্জাব ১৬ ওভারে ১৩৪ করেছে, যেটা খুবই ভালো স্কোর, কিন্তু মুস্তাফিজের ৪ ওভারে ওরা রান করতে পারেনি। এই চার ওভার যদি ভুবনেশ্বর, স্রানের মতো কেউ করতো, তবে কিংসরা ১৭০ পার হতে পারতো!’
 
সেই ‘আক্ষেপ’ আক্ষেপই থেকে গেছে। মুস্তাফিজের কৃপণতায় পাঞ্জাবের সংগ্রহ ১৪৩ রানে বাধা পড়লে সানরাইজার্সের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৪। আর তা ছুঁতে কোনোই বেগ পেতে হয়নি ওয়ার্নার-শিখর ধাওয়ান-ইয়ন মরগানদের। ১৩ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় মুস্তাফিজদের দল। ‘ম্যাজিকাল স্পেল’ করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মুস্তাফিজুর।
 
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থাপক রমিজ রাজা যখন বিজয়ী দলের অধিনায়ক ওয়ার্নারকে বারবার তার ব্যাটিং ভালো করার কথা জিজ্ঞেস করছিলেন, তিনি কেবল ঘুরে-ফিরে মুস্তাফিজের প্রশংসায় চলে যাচ্ছিলেন, ‘বোলাররা এই ভিত গড়ে দিয়েছে বলেই ম্যাচটা জেতা এতো সহজ হয়েছে। মুস্তাফিজুর রহমান স্পেশাল ট্যালেন্ট। বাংলাদেশের উচিত তার কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে নেওয়া। তার বলের গতি বদল ও নিক্ষেপটা ব্রিলিয়ান্ট। ’
 
ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার নিতে মুস্তাফিজকে যখন রমিজ রাজা ডাকছিলেন, তখন কেবল বলছিলেন, ‘স্পেশাল ওয়ান, স্পেশাল ট্যালেন্ট...!’ পুরস্কার নিয়ে মুস্তাফিজ মাইক্রোফোনে বাংলায় সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন, ‘থ্যাংক ইউ’ জানালেন ইংরেজিতেও। এইসময় তার ভাষা সমস্যা নিয়ে কোনো কথা হলো না, বরং দারুণ উচ্ছ্বাসে ওয়ার্নার-রমিজরা বলছিলেন, বোলিংই হোক মুস্তাফিজের ভাষা।
 
কেবল মাঠেই মুস্তাফিজ প্রশংসায় ভাসছিলেন না, টি-টোয়েন্টির মতো ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটে ৪ ওভার অর্থাৎ ২৪ বল করে ১৭ ডটে মাত্র ৯ রান খরচে ২ উইকেট তুলে নেওয়ায় তার ওপর আবিষ্ট হয়ে তা প্রকাশ করছিলেন বিভিন্ন প্রান্তের ক্রিকেট দর্শকরাও। যেমনটি ক্রিকইনফোর পাঠক শেফাত বলছিলেন, ‘আইপিএলকে ধন্যবাদ। ফিজির বোলিং দেখার সুযোগ করে দেওয়ায়। তার বোলিং দেখাটা সত্যিই আনন্দের। কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বক্রিকেটে এক প্রতিভার আগমন!’
 
বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
এইচএ/
**
মুস্তাফিজের সঙ্গে বল করতে পারা দারুণ ব্যাপার: ভুবনেশ্বর
**‘মিডিয়াম ফাস্ট স্লো অফ স্পিনার লেগ কাটার বোলার’ মুস্তাফিজুর!
**মুস্তাফিজের জন্য গুগলে বাংলা শিখছেন ওয়ার্নার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।