ঢাকা: ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দিন দিন উন্নতির দিকে ধাবিত হলেও টেস্টে এদেশের অবস্থা এখনও নাজুক। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর ৯৩ টেস্টে বাংলাদেশর জয় মাত্র ৭টিতে!
টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে ২০১২-১৩ মৌসুম থেকে নিয়মিতই মাঠে গড়িয়ে আসছে প্রথম শ্রেণীর ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক চারদিনের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল)।
চার দিনের লংগার ভার্সনের এই ম্যাচগুলো খেললে যেটা হয় সেটা হলো টেস্টের জন্য একটি অনুশীলন হয়ে যায়, তৈরী হয়ে যায় টেস্টের মেজাজও। কেননা চার দিনের এই ফরম্যাটে লম্বা ইনিংসের লক্ষে ব্যাটসম্যানেরা উইকেটে থাকার চেষ্টা করেন। যেখানে দেখে শুনে বল ছেড়ে দেয়ার অভ্যাসটিও তারা রপ্ত করতে পারেন।
শুধু ব্যাটিংই নয় বোলিং ও ফিল্ডিং বিভাগেও এমন টেস্ট মেজাজ ধরে রাখতে হয়। ওভারের পর ওভার বল ছুঁড়ে ব্যাটসম্যানকে উইকেট ছাড়া করার পাশাপাশি ফিল্ডিং সাইডকেও লম্বা সময় মাঠে থাকতে হয়।
দেখতে দেখতে এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে টুর্নামেন্টটির চারটি মৌসুমের খেলা। গেল চার মৌসুমের ধারাবাহিকতায় আসছে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে পঞ্চম আসরের। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিসিএল আয়োজন করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্য সাধনে বিসিবি কতটুকু সফল হয়েছে সেটি দেখার সময় বোধ হয় এখন হয়েছে।
বিসিএল আয়োজনের পর দেশটির বিগত ৩ বছরের টেস্ট পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে ২০১৩ সাল থেকে আজ অব্দি লাল-সবুজের ক্রিকেটাররা মোট টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ১৫টি। এরমধ্যে ৪টিতে জয়, ৬টিতে ড্র ও হার ৫টিতে।
এই ১৫ টেস্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্টইন্ডিজ, পাকিস্তান, ভারত ও জিম্বাবুয়ে। তবে মজার ব্যাপার হলো এই ছয় দলের ভেতরে মুশফিকদের ৪টি জয়ই ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। যেখানে বড় দল গুলোর বিপক্ষে ড্র বা হার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
কেন বিসিএল থেকে এদেশের ক্রিকেটাররা এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হতে পারেননি? জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার কাছে। উত্তরে তিনি বললেন, ‘বিগত মৌসুমগুলোতে জাতীয় দলের প্লেয়াররা নিয়মিত খেলেনি। ইচ্ছে হয়নি তাই খেলেনি বিষয়টি এমন নয়। দেখা গেছে যখন বিসিএল শুরু হয়েছে তখন তাদের সিরিজ চলছে। আবার অনেকের মধ্যে গা ছাড়া ভাবও আছে। তারা বিসিএলকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না। তারা হয়তো ভাবেন আমিতো টেস্টই খেলি বিসিএল খেলা কি দরকার?’
‘তবে তারা যদি নিয়মিত বিসিএলে অংশ নেন তাহলে বিসিএলের আকর্ষণটা আরও বাড়বে। চারটা মৌসুম শেষ হলেও দেখা গেছে ম্যাচগুলো টিভি সম্প্রচার পায়নি। যদি ম্যাচগুলো টিভিতে সম্প্রচার হতো তাহলে ক্রিকেটাররা অন্তত জানতো যে টিভিতে আমাদের ম্যাচগুলো কেউ না কেউ দেখছে। তারা সচেতন হতো। ফলে খেলার ও আম্পারিংয়ের মান দুই’ই উন্নত হতো যা বর্তমানে নেই। প্রথম পর্যায় থেকে না হলেও অন্তত কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ম্যাচ সম্প্রচারকে বাধ্যতামুলক করা উচিৎ। এক্ষেত্রে বিসিবি গাজী টিভির সাথে আলাদা একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। ’ যোগ করেন হীরা।
টিভি সম্প্রচারের পাশাপাশি ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকমন্ডলী ও বোর্ড পরিচালকদের মাঠে বসে খেলা দেখার পরামর্শ দিলেন এই বিসিবি টেকনিক্যাল উপদেষ্টা। ‘নির্বাচকমন্ডলী ও বোর্ড পরিচালকেরা যদি এক একজন এক এক ভেন্যুতে গিয়ে খেলা দেখেন তাহলে প্লেয়াররাও অন্তত এই ভেবে সচেতন থাকবে যে, আমাদের খেলা কেউ না কেউ দেখছে। তাতে করে ওরা খেলার প্রতি যত্নবান হবে যা দিনশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভাল। ’
সব কিছু ঠিক থাকলে অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্ট ও তিন ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডে। ফলে যদি বিসিবি ঘোষিত সময়ে এবারের বিসিএল শুরু হয় তাহলে এটি দিয়েই টাইগাররা তাদের টেস্ট অনুশীলনটি সেরে নিতে পারবেন অনায়াসেই।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বিসিএলের পঞ্চম আসর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ২৪ আগস্ট, ২০১৬
এইচএল/এমএমএস