পাপন বলেন, ‘রায়ের কপিটি এখনও আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। অতএব আমাদের ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘মামলা যেহেতু খারিজ হয়ে গেছে নিঃসন্দেহে এটা আমাদের জন্য ভাল একটি খবর। একটাই সমস্যা ছিল ভয় ছিল মনের মাঝে যে এর আগে ওরা যে গঠনতন্ত্রটি বদলেছিল ওইটাতে যদি আমাদের নির্বাচন করতে হতো তাহলে ঝামেলা হতো। কারণ তারা চাচ্ছিলো তাদের গঠনতন্ত্রানুযায়ী-ই আমরা নির্বাচন করি। এইটা নিয়ে একটা বৈধতার প্রশ্ন ছিল কিন্তু সেটা নিয়ে আমার চিন্তা ছিল না। আমার চিন্তা ছিল ওখানটায় কয়েকটা ব্যাপার যেমন খেলোয়াড়দের ব্যাপারটা, ক্রিকেট খেলোয়াড়দের একটা কোটা ছিল সেটাও বাদ দিয়ে দেয়া হল। কোন ক্রিকেট প্লেয়ার আসার সুযোগ ছিল না। অথচ অন্যান্য স্পোর্টস থেকে যে কোন প্লেয়ার আসতে পারবে। এটা আইসিসি কখনও মেনে নিত না। আইসিসি যদি না মানতো তাহলে আমাদের অবস্থাটা কী হত?’
এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গঠনতন্ত্রে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আনা সংশোধনী অবৈধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দুই সংস্থার আপিলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বুধবার (২৬ জুলাই) এ রায় দেন।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, বিষয়টি নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ বলেছেন- গঠনতন্ত্র সংশোধনের যে ক্ষমতা সেটি বিসিবির হাতেই থাকবে। এনএসসি সে গঠনতন্ত্র তাদের (বিসিবি) জন্য সংশোধন করে দিতে পারবে না। সুতরাং এই গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা বিসিবির হাতে থাকবে। এতে বিসিবি আরও স্বায়ত্ত্বশাসিত হবে, সংঘবদ্ধ হবে শক্তিশালী হবে। ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বোর্ড দুটিই শক্তিশালী হবে। ভবিষ্যতে ক্রিকেটের উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, আদালত আরও বলেছেন-আগামী পাঁচ বছরে ক্রিকেট বিশ্বক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। তার জন্য বিসিবি এবং বাংলাদেশকে এখনো প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। এই জন্য বিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। গঠনতন্ত্রে সংশোধন বিয়োজন করবে কেবল বিসিবি। অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
২০১২ সালের নভেম্বরে বিসিবি’র গঠনতন্ত্রের সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন বিসিবি’র সাবেক পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের হোসেন এবং বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি ইউসুফ জামিল বাবু।
এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর রুল জারিসহ সংশোধনীর ওপরে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালত সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন।
রিটকারীদের দাবি ছিলো, ‘বিসিবি’র গঠনতন্ত্রে ২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য সাধারণ পরিষদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন নিতে হবে। বিসিবি ২০১২ সালের ০১ মার্চ বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পাঠায়। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিসিবি’র সাধারণ পরিষদের সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে নিজেদের মনগড়া সংশোধনী আনে। যা গঠনতন্ত্রের স্পষ্ট লঙ্ঘন’।
‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যেভাবে অবৈধ উপায়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে তা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ১৯৭৪ এর ২০ এর (ক) ধারার পরিপন্থী। ক্রীড়া পরিষদ মডেল গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু বিসিবি’র এজিএমে অনুমোদিত গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা রাখে না। ক্রীড়া পরিষদের সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুসারে বিসিবিতে কাউন্সিলর মনোনয়নসহ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা ছিল। এ থেকে বোঝা যায়, ক্রীড়া পরিষদের অসৎ উদ্দেশ্য ছিল’।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে পরে আপিল করে এনএসসি ও বিসিবি। এরপর হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতির আদালত। একইসঙ্গে লিভ টু আপিল করতে বলেন। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই তাদের আপিলের অনুমতি দেন সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতে এনএসসি’র পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।
বিসিবি’র পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস।
রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এমএমএস/এইচএল