সেখানে বাবা-মা এবং শিক্ষকদের বার্তা দেন টিম ইন্ডিয়ার দলপতি বিরাট কোহলি, ওপেনার শিখর ধাওয়ান, রবিন উথাপ্পা, যুবরাজ সিং। লেখা-পড়ার নামে শিশুদের অতিরিক্ত শাসন পছন্দ করছেন না তারকা এই ক্রিকেটাররা।
ভিডিওতে দেখা যায় তিন থেকে চার বছর বয়সের মেয়েকে পড়াতে বসে কঠোরভাবে শাসন করছে তার মা, সেটি আবার ভিডিও করে রাখছেন তিনি। শিশুটি সংখ্যা চেনায় ভুল করলেই তাকে চড়-থাপ্পর মারা হচ্ছে। শিশুটির চোখ বেয়ে পানি গড়ালেও তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই! হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেও কোনো সাড়া নেই। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে জানালেও হজম করতে হচ্ছে থাপ্পর।
কিভাবে শিশুদের ওপর এরকম নিপীড়ন করতে পারেন কোনো অভিভাবক-সেটা মাথায় আসছে না কোহলিদের। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তারা এমন অভিভাবকদের কাছে আবেদন করেছেন, শিক্ষিত করার নামে শিশুদের সঙ্গে এরকম অমানবিক আচরণ এখনই বন্ধ করার। দেশবাসীকেও সচেতন হতে অনুরোধ করেছেন তারা।
ভারত অধিনায়ক কোহলি জানান, ‘এই ভিডিওটা সত্যিই শকিং এবং দুঃখের। আমাদের উচিত শিশুদের উপর থেকে রাগ ঝেড়ে ফেলা। শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের ইগো জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিত। বকাবকি করলে শিশুরা কখনও শিখতে পারে না। আতঙ্কিত করে তুললে শিশুরা কোনোদিনও কিছু শিখতে পারবে না। এই ছবিটা সত্যিই হৃদয়বিদারক, এটা ক্ষতির কারণ। ’
শিশু নিপীড়নের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন ধাওয়ান। জাতীয় দলের বাঁহাতি ওপেনার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘আমি অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা আপনার সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব পালন করুন। বাবা-মায়ের দায়িত্বই হলো শিশুদের বড় করে তোলা। প্রতিটি শিশুই নিজের মতো করে শিখতে চায়। আমাদের দায়িত্ব হলো ওদের দৃঢ়চেতা করে তোলা, যাতে মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। এটা আমার কাছে অবাক করার মতো ব্যাপার যে, মহিলাটি তার শিশুটিকে বকাঝকা করছে। তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার করছে। বাচ্চাটি শুধু পাঁচ পর্যন্ত গুণতে পারছে বলে! যেকোনো মানুষের ক্ষমতা বোঝা যায় যখন সে আরেকজনের উপর শক্তি প্রয়োগ করে। আমি প্রার্থনা করি একদিন এই শক্তিশালী মহিলার বিরুদ্ধে এই ফুটফুটে শিশুটি বেড়ে উঠবে। তখন এই মহিলা বুড়ো হয়ে যাবে। আর তখন যেন বেড়ে উঠা এই ফুটফুটে শিশুটির কথা মনে পড়ে। ’
ধাওয়ান আরও যোগ করেন, ‘পড়াশোনা মজার বিষয় হওয়া উচিত। আতঙ্কের নয়। লেখা-পড়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে শিশুদের মন ভেঙে দেওয়ার মূল্যে নয়। শিশুদের উপর ধৈর্য রাখার জন্য আমি প্রত্যেক বাবা-মাকে অনুরোধ করব। প্রত্যেক শিশু নিজের গতিতে শেখে। দয়া করে তাদের অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকুন। ’
যুবরাজ সিং লিখেছেন, ‘এভাবেই কি সন্তানদের বড় করা উচিত? এটা নিন্দনীয়। আপনার উচিত শিশুদের ভালোবাসা এবং তাদের থেকে সেরাটা বের করে আনা। ’ অনেকে লিখেছেন, ‘শিশুটির যন্ত্রণা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। তাকে শেখানোর জন্য কোনো একজনের আত্মসম্মান এতই বিশাল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মমতার কোনো চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটা স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো ঘটনা। অসম্ভব দুঃখজনক। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, ২০ আগস্ট ২০১৭
এমআরপি