ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ফাইনালে আবারও স্বপ্ন ভঙ্গ মাশরাফিদের

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
ফাইনালে আবারও স্বপ্ন ভঙ্গ মাশরাফিদের ফাইনালে আবারও স্বপ্ন ভঙ্গ মাশরাফিদের-ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: এশিয়া কাপের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালের শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিলো মাত্র ৬ রান। হাতে উইকেট ৩টি। ব্যাট হাতে দুই প্রান্তের একটিতে রিটায়ার্ড হয়ে ফেরা কেদার যাদব ও অন্যদিকে কুলদীপ যাদব। প্রথম তিন বলে এলো ৪ রান। উল্লাস ফিরলো গ্যালারিতে। চতুর্থ বলে কোনো রান হলো না। তখন ভারত সমর্থকদের কারো গালে হাত, কেউ বা নখ কামড়াচ্ছেন। ৫ম বলটি কুলদীপ যাদবের প্যাডে লেগে লেগ সাইডে যেতেই দুই ব্যাটসম্যান প্রান্ত বদলে ২২২ রানে স্কোর লাইন সমান করে ফেললেন। স্ট্রাইকে কেদার যাদব। টাইগার শিবির তখন অনেকটাই বিমর্ষ। শেষ বলটি কেদার যাদব কোনো রকম ব্যাটে লাগিয়েই ঠেলে দিলেন শর্ট ফাইন লেগ অঞ্চলে। ৩ উইকেটে জয়ের উল্লাসে ফেঁটে পড়লো পুরো ভারত শিবির।

২০১২ ও ২০১৬ সালের পর আবারও খুব কাছে এসেও এশিয়া কাপ শিরোপা হাত ছাড়া হলো মাশরাফিদের।

অথচ লিটন দাস ও চমকে দেয়া ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাটে ফাইনালের শুরুটা স্বপ্নের মতোই করেছিলো বাংলাদেশ।

তাদের খাপখোলা তরবারির মতো ব্যাটে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে হলো সার্বোচ্চ ১২০ রানের রেকর্ড জুটি। দাপুটে ব্যাটে লিটন তুলে নিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। কিন্তু কী দুঃখজনক! টপ ও মিডল অর্ডারের অপরিনামদর্শী ব্যাটিংয়ে এবারও স্বপ্নের জয় নিয়ে মাশরাফিদেরর মাঠ ছাড়া হলো না। আরেকবার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় নীল হলো লাল সবুজের দল।

বোঝাই যাচ্ছে রোহিতদের জয়টি মোটেও সহজ ছিলো না। টাইগারদদের দেয়া ২২৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেও হারাতে হয়েছে ৭টি উইকেট এবং অপেক্ষা করতে হয়েছে ৫০ ওভারের শেষ বলটি পর্যন্ত।

কিন্তু টাইগাররা যদি আর মাত্র ২০টি রানও করতে পারতেন তাহলে হয়তো ম্যাচের গল্প অন্যরকম হতে পারতো। কেননা কেদার যাদবের বলে ব্যক্তিগত ৩৫ রানে মিরাজ যখন আম্বাতি রাইডুর হাতে ক্যাচ হয়ে ফিরলেন তখন ওভার মোটে ২১টি। টুর্নামেন্টের মাঝপথে উড়ে গিয়ে আফগানদের বিপক্ষে অসাধারণ ইনিংস উপহার দেয়া ইমরুল কায়েস তিনে নেমে ধৈর্যশীল ব্যাটে উইকেটের অপর প্রান্ত আগলে রাখতেই পারতেন। কিন্তু পারেননি। যুজভেন্দ্র চাহালের টপ বলে মাত্র ২ রানেই এলবি’র ফাঁদে পড়লেন।

পারেননি অঘোষিত সেমিফাইনালে পাকিস্তান বোলিং লাইনআপ তছনছ করে ৯৯ সংগ্রেহ ফেরা মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমও। ৫ রানে কেদার যাদব ঘূর্ণিতে ডিপ মিড উইকেটে জসপ্রিত বুমরাহর ক্যাচ বনে ক্রিজ ছাড়া হলেন। ক্রিজ আগলে ব্যাট হাতে বুমরাহ-চাহালদের চোখ রাঙাতে ব্যর্থ হয়েছেন ওই ম্যাচের আরেক স্কোরার মোহাম্মদ মিঠুনও। ২৮তম ওভারে চাহালের শেষ বলটি এক্সট্রা কাভারে ঠেলে দিয়ে রানের জন্য দৌঁড় দিলে রবীন্দ্র জাদেজার উড়ন্ত ফিল্ডিংয়ে মাত্র ২ রানে কাটা পড়েন। বিপদে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস।

এমন ঘোরতর বিপদের মধ্যেও লিটনের ব্যাট থেমে থাকেনি। বীরদর্পে ব্যাট চালিয়ে ঠিক তার পরের ওভারেই অভিষেক ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন। শতরানের ইনিংসটি সাজাতে তিনি খেলেছেন ৮৭ বল। যেখানে চারের মার ছিল ১১টি। আর ছয়ের মার দুটি। তখনও মাশরাফিদের বড় সংগ্রহর আশা মিইয়ে যায়নি। কারণ উইকেটের অপর প্রান্তে লিটনকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন মিস্টার কুল মাহমুদউল্লাহ।

দু’জনের বোঝাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু আৎকাই সেখানে বাধ সাধলেন কুলদীপ যাদব। ৩৩ ওভারে তার দ্বিতীয় ডেলিভারিটি তুলে দিলে বাউন্ডারি সীমানা থেকে তালুবন্দি করেন জসপ্রিত বুমরাহ। ১৫১ রানে ৫ উইকেট নেই! তৈরি হয় অবর্ণনীয় চাপ।

৬ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে এলেন সৌম্য। তাকে সঙ্গী করে সেই চাপ সামলে ইনিংস মেরামতের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সংগ্রহের ঝুলি আরও সমৃদ্ধ করতে বেশ হিসেবি ব্যাটিং করছিলেন লিটন। পক্ষান্তরে সৌম্য ছিলেন তুলনামূলক মারকুটে। ৪০তম ওভারে কেদার যাদবের বলে তার ছক্কায় গলার ফাঁস কিছুটা আলগা হয়েছিলো। পরের ওভারে লিটনও কুলদীপ যাদবের প্রথম ৫ বল থেকে ১০ রান তুলে নিলেন। কিন্তু শেষ বলে ঘটলো বিপত্তি।

বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনারকে পা বাড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। ব্যাটে বলে করতে না পারায় পেছনের পা বেরিয়ে আসে। সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে বেলস ফেলে দেন ধোনি। ১১৭ বলে ১২ চার ও দুই ৬-এ ১২১ রান করে ফিরে যান লিটন। যদিও ধারাভাষ্যকার তার আউটে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। কারণটিও সঙ্গত। লিটনের পা ছিলো পপিং ক্রিজের লাইনে। ক্রিকেটের ব্যাকরণে বেনিফিট অব দ্য ডাউট ব্যাটসম্যানের পক্ষে গেলেও থার্ড আস্পায়ার রড ট্রাকার তা দেননি। তাই হয়তো ধারাভাষ্যকার এমন বিস্ময় জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ তখন ৬-১৮৮।

বস্তুত এখানেই দলটির চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহের সলিল সমাধি ঘটে। কেননা সপ্তম উইকেটে এসে মাশরাফিও উইকেটে টিকতে পারেননি। ১টি ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত ৭ রান নিয়ে কুলদীপের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন। সমান সংখ্যক রানে মানিশ পান্ডের সরাসরি থ্রোতে দলের দ্বিতীয় রানআউটের খাঁড়ায় পড়েন নাজমুল ইসলাম অপু।

পরেরটিও রান আউট! ৪৮তম ওভারের শেষ বলে ২ রান নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রাখা সৌম্য পরের ওভারে জসপ্রিত বুমরাহর একেবারের প্রথম বলটি লং অনে ঠেলে দুই রান নিতে গেলে সেখান থেকে করা থ্রোতে ধোনি স্ট্যাম্প ভেঙে দেন। ৪৫ বলে একটি করে ছক্কা-চারে ৩৩ রানের পুঁজি নিয়ে ইনিংসের ফুলস্টপ টানেন সৌম্য।

আর ৪৯.৩ ওভারে রুবেলের স্ট্যাম্পে সরাসরি আঘাত হেনে বাংলাদেশকে ২২২ রানে গুটিয়ে দেন বুমরাহ।

জবাবে জয়ের জন্য ২২৩ রানের সহজ লক্ষ্যে নেমেও মাশরাফিদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সহজ জয় তুলে নিতে পারেনি ভারত। দলীয় ৪৬ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন দুই টপ অর্ডার শিখর ধাওয়ান ও আম্বাতি রাইডু। ধাওয়ানকে ব্যক্তিগত ১৫ রানে মিড অফে সৌম্য সরকারের ক্যাচে বানিয়ে বিদায় করেন নাজমুল ইসলাম অপু। আর রাইডুকে মাত্র ২ রানে মুশফিকের গ্লাভসে পৌঁছে দেন অধিনায়ক মাশরাফি।

তৃতীয় উইকেটে দিনেশ কার্তিককে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন মারকুটে রোহিত। দলীয় ৮৩ রানে রুবেল হোসেন তাকে ব্যক্তিগত ৪৮ রানে অপুর ক্যাচে পরিণত করলে তাদের সেই প্রচেষ্ট ব্যাহত হয়। চাপে পড়ে ভারত।

চতুর্থ উইকেটে ধোনি-কার্তিক জুটি সেই চাপ প্রশমন করে দলকে সহজ জয়ের স্বপ্ন দেখালেও তা রিয়াদ আঘাতে চুরি হয়ে যায়। ব্যক্তিগত ৩৭ রানে কার্তিককে এলবি’র ফাঁদে ফেললে ভারত সমর্থকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়।

নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে আসেন কেদার যাদব। কিন্তু কিছুটা দুর্ভাগা হওয়ায় দ্রুত ১ রান নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট তাকে পেয়ে বসে। তবে চোট পেলেও তাৎক্ষণিক মাঠ ছাড়েননি। পা টেনে টেনে কষ্ট করে ধোনিকে সঙ্গী করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। ঠিক তখনই মোস্তাফিজ আঘাত। কঠিন সময় পার করে থিতু হওয়া ধোনিকে ৩৬ রানে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে তুলে দেন এই টাইগার কাটার স্পেশালিস্ট।

ধোনি ফেরার পরের ওভারেই ইনজুরিগ্রস্থ যাদবকে তুলে নেয়া হয়। মাঠ ছাড়ার সময় ২০ বলে ১৯ রানে ছিলেন কেদার। ভারতের দলীয় রান তখন ১৬২। ওভার বাকি আরও ১২টি। অনেকটাই বিপর্যস্ত ভারত।

তবে ষষ্ঠ উইকেটে ভুবনেশ্বর-রবীন্দ্র জাদেজা জুটিতে দলটি তা কাটিয়ে ওঠে । বড় দুঃসময়ে ৪৫ রানের জুটি পায়। ম্যাচের ঠিক এমনই টানটান উত্তেজনার সময় রুবেল হোসেন আঘাত হানলেন ব্যক্তিগত ২৩ রানে থাকা জাদেজাকে। মুশফিকের গ্লাভস বন্দি হন তিনি।

জাদেজার বিদায়ে রিটায়ার্ড হার্ট থেকে ফিরে ভুবেনেশ্বর কুমারকে নিয়েই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলতে চেয়েছিলেন কেদার যাদব। কিন্তু  হয়নি। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ব্যক্তিগত ২১ রানে ভুবনেশ্বর মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলে অপেক্ষা বাড়ে।

জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন তখন ৮ রান। অবশেষ কুলদীপ যাদবকে সঙ্গী করে সেই পথ পাড়ি দিয়ে ভারতকে ৭ম এশিয়া কাপ শিরোপা এনে দিয়ে মাঠ ছাড়েন কেদার যাদব। কেদার অপরাজিত ছিলেন ২৩ রানে। আর কুলদীপ ৫ রানে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৩ ঘণ্টা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।