ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

‘ট্রফিটা শেয়ার করতে খুবই খারাপ লাগছে’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
‘ট্রফিটা শেয়ার করতে খুবই খারাপ লাগছে’ পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ট্রফি ভাগ করে নিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ ও মাসাকাদজা-ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট হেরে যাওয়ার পর চারদিকে গেল গেল রব উঠে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২১৮ রানের বিশাল জয় নিয়ে সিরিজ ড্র করেছে টাইগাররা। এমন অসাধারণ জয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশ খুশি ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে সিরিজটা জিততে পারলেই বেশি খুশি হতেন তাও জানাতে ভুললেন না।

বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষে এসে সেকথাই জানালেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ভারপ্রাপ্ত দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

সবাই চাচ্ছিলো জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ জিতুক।

আমার মনে হয় জিম্বাবুয়েকেও ক্রেডিট দিতে হবে, ওরা ভালো ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগের ভালো করেছে। প্রথম টেস্টে কিছু ল্যাক অব ডিসিপ্লিন ছিল, যা টেস্ট ক্রিকেটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওই জিনিসটা আমরা করতে পারি নি, যা এই টেস্টে করতে পেরেছি। '

নিজেদের হোম কন্ডিশন হওয়ার পরও জিম্বাবুয়ের মতো ক্ষয়িষ্ণু ক্রিকেট শক্তির কাছে প্রথম টেস্টে অমন পরাজয় সিরিজের ফল বদলে দিয়েছে। আশানুরূপ হয়নি। এটা নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ ঝড়ে পড়ল মাহমুদউল্লাহ’র কণ্ঠে।

'প্রথম টেস্টে আমার মনে হয় আমরা খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছি। শুরুতে আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি ম্যাচেই জেতা। হোম কন্ডিশনে জিম্বাবুয়ে হোক, অস্ট্রেলিয়া হোক কিংবা অন্য যে কোনো দলই হোক আমরা সব সময় চাই নিজেদের কন্ডিশনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে যেন আমরা সিরিজ জিততে পারি। যে ফরম্যাটই হোক আমাদের লক্ষ্য থাকে এমনটাই। সেদিক থেকে বললে ট্রফিটা শেয়ার করতে খুবই খারাপ লাগছে। '

সিরিজের প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। ওই ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর পরের ম্যাচেই এমন দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর রহস্যটাও জানালেন তিনি।

'প্রথম টেস্ট শেষে একটা কথা বলেছিলাম, আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সবাই বেশ ডিটারমাইন্ড ছিলাম, প্রথম টেস্ট হারের পর আমরা খুব হার্ট হয়েছিলাম, আমরা চেয়েছিলাম তার বহিঃপ্রকাশ মাঠে দেখাতে। আমার মনে হয় আমরা কিছুটা হলেও করতে পেরেছি। ' 

প্রথম টেস্ট হারের পর সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে বেশ হতাশার সুরে মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, এভাবে এবাবে টেস্ট খেলার মানে হয় না। সেই কথা মনে করিয়ে দিতেই তার উত্তরে তিনি বলেন, 'যদি আমরা প্রথম টেস্টের মত খেলি, তাহলে অবশ্যই মানে হয় না। আবার যদি আপনি এই টেস্টের কথা চিন্তা করেন, যদি আমরা এমন মানসিকতা দেখাতে পারি এবং কাজে কর্মে সেটা দেখাতে পারি, তাহলে অবশ্যই মানে হয়। '

দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে লিড ৪০০ পেরিয়ে গেলেও ইনিংস ডিক্লেয়ার না করায় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। লিডটাকে ৪৪২ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় বাংলাদেশ। যদিও মিরপুরের মাঠে এই বিশাল টার্গেট বিশ্বের যেকোনো দলের জন্যই অসম্ভব কাজ। জিততে হলে বিগত ১৫ বছরের রেকর্ড ভাঙতে হতো জিম্বাবুয়েকে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পেছনেও যৌক্তিক কারণ দেখালেন মাহমুদউল্লাহ।

'আমার মনে হয় পুরো পাঁচ দিনই উইকেট খুবই ভালো ছিল। আজকের দিনটাও যদি খেয়াল করেন, ইনিশিয়ালি ৩০ মিনিটের মতন কিছুটা এদিক সেদিক টার্ন হয়েছে, এরপর মিরাজ এসে দুটি উইকেট নিয়েছে। আমরা ওই মোমেন্টামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটু রাফ ছিল, আমরা উইকেট থেকে যতটা স্পিন, বাউন্স পাওয়ার আশা করছিলাম সেটা পাই নি। উইকেট অনেক ভালো ছিল। ' 

অভিষিক্ত পেসার খালেদকে নিয়েও কথা বলেন তিনি, 'খালেদ তার প্রথম ম্যাচ হিসেবে অনেক ভালো পারফর্ম করেছে। হি অয়াজ অ্যা বিট আনলাকি, তার বোলিংয়ে কিছু সহজ ম্যাচ মিস করেছি, নয়তো তার বোলিং ফিগারটা আরও সুন্দর দেখাতো। প্রথম ওভারটা যখন সে করেছিল, আমার মনে হয় পর পর তিনটা বাউন্সার সে করেছিল। তখন তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি, শুরুতে কিছুটা নার্ভাস সে ছিল। ' 

'যদি ২-১ টা উইকেট ও পেয়ে যেত। কিংবা আরও অ্যাফোর্ট দিয়ে বোলিং করতে পারতো ,তাহলে ভালো হতো। তারপরও আমার মনে হয় তার প্রতিভা আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। মাঝে মাঝে ভাগ্যও পাশে থাকা লাগে, আমার মনে হয় মোস্তাফিজ ভালো বোলিং করেছে। আর স্পিনাররা, মিরাজ-তাইজুল স্ট্যান্ড আউট পারফর্মার। ' 

দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পরও দলে উন্নতির জায়গা দেখছেন ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক, 'ক্রিকেট খেলাটাই এমন, আপনি যদি একশ করেন কিংবা দুইশ পঞ্চাশ করেন তারপরও ব্যক্তিগতভাবে মনে হবে আমার এই জায়গাতে কাজ করা দরকার। কারো যদি সুইং, স্পিন কিংবা সুইপ শটে দূর্বলতা থাকে সেখানে উন্নতি করার সুযোগ থাকে। '  

'এই ম্যাচটা জিতে যেহেতু আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নামব, এর জন্য এটা ভালো একটা কামব্যাক। ব্যাটসম্যানদের জন্য ভালো হয়েছে, অনেকেই ভালো করেছে। সবাই একসঙ্গে ভালো করবে না। কখনো টপঅর্ডার রান করবে, কখনো মিডল অর্ডার রান করবে। যার যার পজিশন থেকে সবাই চেষ্টা করছে। '  

'সবাই ট্রেনিং সেশনগুলোতে চেষ্টা করছে। কারণ আমাদের ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা দুঃচিন্তা ছিল। এই ম্যাচে রান করাতে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস আরও ভালো হবে। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও কাজে দেবে। '

দুই টেস্টেই বেশ কিছু ক্যাচ মিসের মহড়া দেখা গেছে। এর ফলে ফের উইকেট ফেলার সুযোগ পেতে বেশ অপেক্ষা করতে হয়েছে বোলারদের। তবে ক্যাচিং নিয়ে খুব বেশি ভাবছেন না মাহমুদউল্লাহ।  

'প্রথমে একটু বলে নেই জয়টা সহজে আসেনি। প্রত্যেকে অনেক কষ্ট করেছে। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি, মুমিনুলের দেড়শ রান, মিঠুনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ের রান, তাইজুলের ৩০-৪০ ওভার বোলিং এটা সহজ কাজ নয়। কষ্ট করে আমরা ম্যাচ জিতেছি, সবার কমিটমেন্ট ছিল। '

'আর ক্যাচিংয়ের ইস্যুটা…আপনি যদি খেয়াল করেন, প্রথম টেস্টে আমাদের স্লিপ ক্যাচে বেশ কয়েকটা ফিফটি ফিফটি চান্স মিস করেছিলাম। এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তারপরও আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। অনেক সময় একটা ক্যাচ ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই জিনিসটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আশা করি ভবিষ্যতে আমরা এখানে উন্নতি করতে পারব। '

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।