তিনি অবশ্য বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কেউ নন। তবে এখনও পুরো বিশ্বেই তার ব্যাট চলছে।
গেলো বছর মার্চে শেষ করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায়। তবে থেমে যায়নি তার ব্যাট চালানো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে চলছে তার ৩৬০ ডিগ্রি কারিশমা। সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগেও (বিপিএল) খেলে গেছেন রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে। সেখানেও দেখা গেছে সেই পুরানো ডি ভিলিয়ার্সকেই। রংপুরের হয়ে ৬ ম্যাচ খেলে রান করেন ২৪৭, যার মধ্যে আছে একটি সেঞ্চুরিও।
একজন ডিভিলিয়ার্সকে চিনতে হলে অবশ্য তার কয়েকটি রেকর্ডে ও মাইলফলকে চোখ বুলালেই হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ওয়ানডে ফরম্যাটে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি (১৬ বল)‚ দ্রুততম সেঞ্চুরি (৩১ বল)‚ দ্রুততম দেড় শতাধিকের (৬৪ বল) মালিক তিনি।
ক্রিকেটে ডি ভিলিয়ার্সের বীরত্ব বুঝতে হলে আসলে ক্রিকেট খুব বেশি বোঝার প্রয়োজন নেই। তার মাঠের যেকোনো প্রান্তে বল পাঠানো নিজেই একটি দর্শনীয় বিষয়। সেখানেই মুগ্ধতা।
১৯৮৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ার্মবাদে জন্মগ্রহণ করেন রেকর্ডের এই বরপুত্র। প্রিটোরিয়ায় কাটে জীবনের অনেকটা সময়। ক্রিকেটার হবেন তেমন কোন ভাবনা ছোটবেলায় ছিলো না এবির মনে। তবে বাবার পছন্দে রাগবিটা খেলতেন নিয়মিত। আর মাঝে মধ্যে ক্রিকেট। তবে এবির খেলাধুলার পছন্দের তালিকা শুধু রাগবি বা ক্রিকেটেই শেষ নয়। সমান তালে খেলেন গলফ ও টেনিসও।
২০০৪ সালে সাদা পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। পরের বছর পেয়ে যান রঙিন পোশাকের ডাক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই দুই ফরম্যাটে অভিষেক এবির। তবে ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকটা হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। এমনকি ওপেনিংয়েও নেমেছেন দলের প্রয়োজনে। শুধু নেমেছেন বললে ভুলই বলা হবে, হয়েছেন সফলও।
শুধু একজন দারুণ ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্সের কথা বলেই শেষ করা যাবে না। বলতে হয় তার দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের কথাও। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক মার্ক বাউচারের অবসরের পর দলে নিয়মিত উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পান ডি ভিলিয়ার্স। তবে ২০১৬ সালে সেই দায়িত্ব তুলে দেন কুইন্টন ডি ককের হাতে। আর যেনো ছড়িয়ে যান পুরো মাঠে। মাঠের যেকোনো জায়গায় ফিল্ডিংয়ে তিনি দুরন্ত-দুর্দান্ত।
ক্যারিয়ারে ১১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ৫০.৬৬ গড়ে এখন পর্যন্ত টেস্টে তার মোট রানসংখ্যা ৮৭৬৫। টেস্টে এখন পর্যন্ত এক ইনিংসে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ২৭৮*। আছে ২টি শতক এবং ৪৬টি হাফসেঞ্চুরি।
অন্যান্য ফরম্যাটের তুলনায় ওয়ানডেতে আরও বেশি সফল ডি ভিলিয়ার্স। খেলেছেন ২২৮টি ওয়ানডে। যেখানে তার ব্যাটিং গড় ৫৩.৫০। এই ফরম্যাটে আছে ২৫টি সেঞ্চুরি এবং ৫৩টি হাফসেঞ্চুরি। মোট রান ৯৫৭৭। সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত স্কোর ১৭৬। এছাড়া ৭৮টি টি-২০তে ২৬.১২ গড়ে তার মোট রান ১৬৭২।
৩৫ বছরের ডি ভিলিয়ার্সের নামের পাশে যে সব রেকর্ড লেখা আছে তা দেখলে চোখ ছানাবড়া হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
* টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ডি ভিলিয়ার্সই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি অভিষেকের পর থেকে টানা ৭৮ ইনিংস শূন্যরানে আউট হয়নি। ২০০৮ সালে নভেম্বরে ৭৯তম ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বপ্রথম শূন্যরানে আউট হন।
* দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ডি ভিলিয়ার্সের ( ২৭৮)।
* দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হয়ে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করার কৃতিত্ব এখন পর্যন্ত তার দখলেই রয়েছে। দ্রুততম ১০০০ রান তোলার ক্ষেত্রে ক্রিকেট ইতিহাসে আছেন দ্বিতীয় অবস্থানে।
* প্রথম আফ্রিকান হিসেবে ডি ভিলিয়ার্সই সর্বপ্রথম টেস্টে এক ইনিংসে ২০০ করার গৌরব অর্জন করেন (২১৭)।
* ওয়ানডেতে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ছক্কা (১৬) হাঁকানোর রেকর্ডটিও তার দখলেই। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি এই রেকর্ড গড়েন তিনি।
* এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছয় মারার রেকর্ডও গড়েন তিনি (৩৭)।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এমকেএম