ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ক্রিকেটারদের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ বলছেন পাপন

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
ক্রিকেটারদের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ বলছেন পাপন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বিসিবি প্রধান/ ছবি: বাংলানিউজ

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। দাবিগুলোর বেশিরভাগ আগেই বাস্তবায়িত হয়েছে কিংবা বাস্তবায়নের পথে বলেই জানালেন তিনি। নিজের বক্তব্যে বোর্ড প্রধান দাবি করেছেন, যেসব দাবির কথা বলা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি এরই মধ্যে বোর্ডের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।

ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবির মুখে জরুরি বৈঠক শেষে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘২৪ কোটি টাকা ১৫ জনকে বোনাস দিয়েছি আমরা। শুধু পারফরম্যান্সের জন্য এটা কেউ দেয় নাকি? কী পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা ওদের বাড়ানো হচ্ছে, কল্পনা করা করা যায় না।

আর সেই টাকার জন্য তারা খেলা বন্ধ করে দিবে? এটা আমার বিশ্বাস হয় না। এটা যদি এমন হতো যে, ওরা আমাদের কাছে বলেছে আর আমরা রাজি হইনি। তাহলে বলা যায়, মতপার্থক্য আছে। কিন্তু কোনো দিন কাউকে কিছু বলল না। এটা তো আশ্চর্যজনক ব্যাপার।  

‘একটা বিষয় বলি, সাকিবের সঙ্গে সর্বশেষ যেদিন দেখা হয়, সেদিনও সে টাকার কথা বলেছে। সে বলল, বিশ্বকাপে এত ভালো খেললাম, আপনি আমাকে বোনাস দিলেন না। আমার টাকাটা দিয়ে দেন। আমি বললাম, ঠিক আছে, আপার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলে একটা অনুষ্ঠান করে দেওয়া যায় কিনা দেখি। কই কোনোদিন তো বলেনি এসব কথা। ’ 

কোয়াব নিয়ে
কোয়াব নিয়ে ক্রিকেটারদের দাবির বিষয়ে পাপন বলেন, ‘প্রথম দাবি দেখেন কোয়াবের কথা বলেছে। কিন্তু কোয়াবের সঙ্গে বিসিবি’র কোনো সম্পর্ক নেই। আগে আমরা এটাকে গুরুত্ব দিতাম না। এখন সবাই বলতে বলতে গুরুত্ব দিচ্ছি। অনুমোদন দিয়েছি। ওরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এখন কে প্রেসিডেন্ট হবে, কে সেক্রেটারি হবে তা বোর্ড কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে? এটা কেন বলল তাও জানি না।

প্রিমিয়ার লিগ
দ্বিতীয়ত, প্রিমিয়ার লিগ আগের মতো করতে হবে। প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগে কিছু সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। কিছু দাবি ছিল, অন দ্য স্পট পূরণ করা হয়েছে। এটা ইস্যুই না। এরপর বলছে, এবারের পর থেকে আগের মতো বিপিএল করতে হবে। এটা তো সিদ্ধান্ত নেওয়াই আছে। এটা এখন বলার কারণ দেখি না।

খেলোয়াড়দের পেমেন্ট
আগে অধিকাংশ ক্লাবের খেলোয়াড়রা টাকাই পেতো না। প্রথমে কিছু পেতো, এরপর থেকে সারাক্ষণ ফোন দিতো। আমরা তাদের পেমেন্ট নিশ্চিত করেছি। এবার বা তার আগের ডিপিএল বলেন বিপিএল বলেন, সকল পেমেন্ট ক্লিয়ার করেছি। শুধু একটা ক্লাবের বাকি আছে। এমনকি যারা পায়নি তাদেরকে বিসিবি থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। এবারও ৩ মাস সময় আছে। কিন্তু এটা তো বিসিবি’র দেওয়ার কথা না। অথচ আমরা দিচ্ছি। আমি বলতে চাইছি, সমস্যাটা আসলে কোথায়? আর বিপিএল তো এবারের পর এমনিতেই আগের ফরম্যাটে চলে যাবে। এটা সবাই জানে। তাহলে এটা দাবি হলো কীভাবে?’

খেলোয়াড়দের মূল্য নির্ধারণ
আর ফ্র্যাঞ্চাইজি কোন খেলোয়াড়কে কত দিয়ে কিনবে তা আমরা নির্ধারণ করব কেন? এটা আমরা করলে হতে পারে, কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজির সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। আইপিএলে যে খেলোয়াড় নিলাম হয়, এটা কি বোর্ড ঠিক করে দেয়? ফলে একটা কথা বললেই তো হবে না। আমরা যদি বলি সব ক্রিকেটারকে ১ কোটি টাকা করে দিতে হবে, এটা হয়? ফলে বিপিএল নিয়ে যে দাবি এসেছে এটার কোনো কারণই নেই।

চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়ানো ও বেতন বাড়ানো
এরপর বলছে, চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমার জানা মতে, খেলোয়াড়দের সংখ্যার দিক থেকে আমরা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। জাতীয় দলের বাইরে আমরা ৮০ জন ক্রিকেটারকে বেতন দিচ্ছি। এরকম তো কেউ করে না। আরও বাড়াবো? কেন? দুই তিনশ’ খেলোয়াড়কে বেতন দিতে হবে? খেলা না পারলেও? খারাপ দিচ্ছি তা তো নয়।  খেলা পারে না… বাজে খেলে… ওদের টাকা দেব না।  এমনভাবে এগুলো আলোচনা হচ্ছে, যেন আমরা ওদের শেষ করে দিলাম। ওদের সুবিধা বাড়ানো ছাড়া, একটা দিক দেখান তো। ওদের চিন্তার চেয়েও বেশি বাড়ানো হয়েছে।

ওরা আম্পায়ার, গ্র্যাউন্ডসম্যানদের বেতন বাড়াতে বলছে। স্টাফদের বেতনের সঙ্গে ওদের কি? এসব আম্পায়ার, গ্রাউন্ডসম্যান সবকিছু নিয়ে হচ্ছে কেন? এসব ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া আর কিছু নয়। ভুল প্রমাণ হলে তো আমি খুশি। কিন্তু সন্দেহ করার যথেষ্ট করার আছে। তাদের বেতন তো গত মাসেই বাড়ানো হয়েছে। আমরা তো এগুলো করছি। তাহলে এগুলো তো দাবি হতে পারে না।

বাইরে খেলতে যাওয়ার সুবিধা বাড়ানো
আপনারা বলছেন, বাইরে খেলতে গেলে সুবিধা বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম, সিলেটে জিমনেশিয়াম করলাম। এত মাঠ তৈরি করছি। একাডেমি তৈরি করছি। এসব যখন ছিল না, কারো কোনো আন্দোলন চোখে পড়ল না। আর এখন যখন কাজ করছি তখন প্রশ্ন তোলা হলো। এই কাজ কারা করছে তাহলে?

ওরা বলছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পারিশ্রমিক বাড়াতে হবে। হতে পারে। যারা ২৫ হাজার টাকা পেতো (প্রথম স্তরে), আমরা ৩০ হাজার টাকা করে দিয়েছি। আবার যারা ৩৫ হাজার টাকা পেতো তাদের করে দিয়েছি ৪০ হাজার টাকা (দ্বিতীয় স্তরে)। ওরা তো বাড়াতে বলেনি। আমরাই বাড়িয়ছি।  অথচ ওরা এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন আমরা কিছুই করছি না। ফলে এর পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে।

যে ক্রিকেটার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দাম পায় না, কখনও তাকে ডাকেনি, ডাকবেও না, সে বলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দুইটির বেশি লিগে খেলতে দিতে হবে। হোয়াট ননসেন্স আর ইউ টকিং? ইজ দিজ আ জোক? (খেলোয়াড়দের ১১ দাবির মধ্যে এই দাবিটি তুলে ধরেছিলেন ফরহাদ রেজা)।

খেলোয়াড়দের ট্রিটমেন্ট
খেলোয়াড়দের ট্রিটমেন্টের কথা বলছে। কি ট্রিটমেন্ট করতে হবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা দেখা করতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তারা বাচ্চাসহ খেলাধুলা করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওদের বাচ্চাদের কোলে নিয়ে হাঁটেন। আর কি চায়? একজনও বলতে পারবে ওদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে? দোষ করলে শাস্তি হবে। এত কিছু করার পরও... কার ভাইকে কে মারছে, রাত ৩টায় এসপি-ডিসিকে ফোন দিতে হবে। কাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, মেরে ফেলবে বলে... আমাকে থামাতে হয়। বিদেশ থেকে ফোন দিয়ে সমাধান করতে হয়। কার আত্মীয়ের জমি দখল হয়ে গেছে, আমি গিয়ে উদ্ধার করি। কি বলছেন এগুলো?’

একই ব্যক্তির একাধিক লাভজনক পদ
এটা আমার জানা নেই। দলের দায়িত্ব দিলাম সিনিয়র ক্রিকেটার, বিসিবি’র কর্মকর্তাদের। আমি ভাবলাম তারা খুশি হবে। কিন্তু ওদের ভেতরে যে এত সমস্যা জানতাম না। এটা নিয়ে ভাবতে হবে। আমি সব জানি তা তো না। তবে আমরা সব নিয়ম মেনেই করেছি।

কোচদের পছন্দ নয় ক্রিকেটারদের!
জাতীয় দলের নতুন কোচ এসেছেন। কিছুদিন আগে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আসছে। ২৫ তারিখে ওদের ক্যাম্প শুরু হবে, এই মুহূর্তে ওরা এসব করল। ওরা তো একবার আমাকে বলে ফেলেছিল যে কোচই দরকার নেই। কয়েক মাস দেখেছিও কি অবস্থা হয়। যাই হোক ওরা কোচদের পছন্দ করেনি। ওরা দেশি কোচ চায়। এটা অন্য ব্যাপার। খেলোয়াড়দের পছন্দ মতো কোচ নিতে হলে তো বিপদ। তারপরও যখনই কোনো কোচ নেওয়া হয়েছে, সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে। কাল কোচরা আসবেন। ওরা এসময় এসব করছে, যাতে ক্যাম্প না হয়। জাতীয় দলের ক্যাম্প? 

ভারত সফর
ভারত সফর নিয়ে সবার কতো আগ্রহ সেটা আমরা জানি। আপনারাই বলতেন ভারতে পূর্ণাঙ্গ সফর আয়োজনের জন্য। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে, প্রথম খেলাই ভারতের সঙ্গে। এটার গুরুত্ব তো বুঝতে হবে। জয়-পরাজয় বড় কথা না। আমি যখন দায়িত্ব নিলাম, আইসিসি’র প্রথম দুই বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনাই ছিল টেস্ট থেকে বাংলাদেশ বাদ। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে আমাদের নাম আসতো। সেই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন আমরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাচ্ছি। এসময় ধর্মঘট ডাকার পেছনে উদ্দেশ্য বুঝতে বাকি নেই। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই খেলা বন্ধ করে দিল।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।