চট্টগ্রাম: প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগে কোনও রকম ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বদলি করেই দায় সেরেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
রোববার (১ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদকে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।
এর আগে ২০১৩ সালের ১১ জুলাই ছবি সত্যায়িত করতে গেলে ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ করেন এক ছাত্রী।
সচরাচর কোনও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠলে ওএসডি বা সাময়িক বরখাস্ত করলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় বা ্আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু একের পর এক অভিযোগ ওঠার করার পর কোনও ধরণের শাস্তি না হওয়ায় অপরাধে প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেছেন সচেতন মহল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক হিসেবে নিজের মর্যাদা ধরে রাখতে না পারা তার ব্যর্থতা। তাকে সাময়িক বরখাস্ত বা ওএসডি করে যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা যেতো। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে স্থায়ীভাবে শাস্তির আওতায় আনলে ভবিষ্যতের জন্য সেটা দৃষ্টান্ত হতো।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা সম্পাদক অ্যাড. আখতার কবির চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বদলি করে তার পিঠ বাঁচানোর একটি পথ করে দেওয়া হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা যেতো। কিন্তু আমরা দেখে এসেছি এক্ষেত্রে একটি উদাসীনতা সবসময় কাজ করে এসব প্রতিষ্ঠানে। যার ফলে এমন অপরাধে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে অপরাধীরা।
এমন গুরুতর ঘটনা নিয়ে চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তাও কুলুপ এঁটেছেন মুখে। প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে চসিক সচিব খালেদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান। যে কমিটিতে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে প্রধান করা হতে পারে।
ওএসডি বা বরখাস্ত না করে বদলি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি মূলত মেয়র মহোদয় এবং প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা দেখছেন। দায়িত্ব থেকে না সরিয়ে কেন বদলি করা হলো এর উত্তর আমার কাছে নেই। তবে তিনি যদি প্রকৃতপক্ষে অপরাধ করে থাকেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে রোববার সকালে নগরের চকবাজারে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রোববার সকাল থেকে বিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং অভিবাবকরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় প্রধান শিক্ষক তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তাকে উপর্যপুরি বই খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ছুঁড়ে মারতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তিনি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে ওএসডি করে তদন্তের আশ্বাস দেন। এ আশ্বাসের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
আন্দোলনকারীরা জানায়, শিক্ষক আলাউদ্দীন বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের হয়রানি করে থাকেন। অনেক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজও দিতেন। কিন্তু তার বিভিন্ন অসৎ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
এমআর/পিডি/টিসি