চট্টগ্রাম: হৃদরোগ চিকিৎসায় পথ দেখাচ্ছে কলকাতার এপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল। ইতিপূর্বে সফলতার সঙ্গে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের মাধ্যমে হৃদরোগের চিকিৎসায় অবদান রাখা হাসপাতালটি এরই মধ্যে দিয়েছে সুখবর।
এবার রোবটিক পদ্ধতিতে হার্টের সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কার্ডিওলজিস্টরা। এরইমধ্যে রোবটের সাহায্যে হার্ট সার্জারি করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালটির হৃদরোগ বিভাগের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
চিকিৎসকরা বলছেন, রোবটিক পদ্ধতিতে সার্জারি করা হলে তাতে ঝুঁকি ও জটিলতা খুবই কম হবে। এ পদ্ধতিতে সার্জারি করা গেলে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে কাজ সম্পন্ন করা যাবে। ফলে রোগী অনেক ঝুঁকিমুক্ত থাকবে, সময়ও অনেক কম লাগবে। এছাড়াও অল্প সময়ের মধ্যেই রোগী বাসায় ফিরতে পারবেন। এতে সময় এবং শ্রম দুটোই সাশ্রয় হবে।
রোবটিক সার্জারি প্রসঙ্গে কলকাতার এপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. সুশান মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রতিদিনই চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে। নতুন নতুন যন্ত্রপাতিও যোগ হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
‘এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- রোবটিক পদ্ধতিতে সার্জারি সম্পন্ন করা। যদিও ইতিপূর্বেও রোবটিক পদ্ধতিতে হার্টের এনজিওপ্লাস্টি বা রিং পরানোর মতো কাজ করা হয়েছে। তবে আগামিতে হার্ট সার্জারিতেও একই পদ্ধতিতে কাজ করতে গবেষণা চলছে। একটি রোবট হাতের সঙ্গে সংযুক্ত করে খুব ছোট সরঞ্জাম ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করা হবে। হার্টের চিকিৎসায় এ নব সূচনা রোগী ও চিকিৎসকদের জন্য সহায়ক হবে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এ কার্যক্রম শুরু করা যাবে’।
এদিকে কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই ছোট একটি ছিদ্রের মাধ্যমে কলকাতার এপোলো হাসপাতালে নিয়মিত হচ্ছে হার্টের বাইপাস সার্জারি। গত একযুগ ধরে চলা এ পদ্ধতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় এমআইসিএস (মিনিম্যালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি)। শুধু বাইপাস সার্জারিই নয়, এমআইসিএস পদ্ধতিতে ভাল্ব প্রতিস্থাপন, হার্টের ছিদ্র বন্ধ করা, কার্ডিয়াক টিউমার অপসারণ, পেসমেকার ইমপ্লান্টেশনসহ ৯৫ শতাংশ হৃদরোগের সার্জারি করা হয় এই আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে। ৮০ থেকে ৯০ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের জন্যও এ পদ্ধতি নিরাপদ বলে জানিয়েছেন হৃদরোগ চিকিৎসকরা।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সুশান মুখোপাধ্যায় বলেন, ইদানিং চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে হার্ট সার্জারি আর জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া নয়। আধুনিক পদ্ধতিতে অনেক দ্রুত হৃদপিণ্ড অস্ত্রোপচার সম্ভব। এমআইসিএস পদ্ধতিতে মাত্র ২ থেকে ৩ ইঞ্চি ফুটো করে সার্জারি সম্পন্ন করা হয়। এতে সুবিধা হচ্ছে- প্রচলিত ওপেন হার্ট সার্জারিতে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চির পরিবর্তে এই পদ্ধতিতে সার্জারি করলে কোনও হাড় কাটার প্রয়োজন হয় না। ফলে রক্তক্ষরণ কম হয়। ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন রোগী। অনেক ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ পর স্বাভাবিক জীবন ফিরে যেতে পারেন। এ পদ্ধতি নিরাপদ, কার্যকরী এবং রোগীকে স্বস্তি প্রদান করে।
কলকাতার এপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালে এমআইসিএস পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি হার্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘প্রতি মাসে ৪০টিরও বেশি এমআইসিএস পদ্ধতিতে সার্জারি করা হয় হাসপাতালটিতে। ইতিমধ্যে এ সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। এই পদ্ধতিতে সার্জারিতে কোন ধরনের হাড় কাটার প্রয়োজন হয় না। সার্জারির ক্ষতও শরীরে থাকে না’।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এসি/টিসি