চট্টগ্রাম: সমীক্ষাতেই ঝুলে আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প। কয়েক দফা সমীক্ষা চালানোর পরও এখনও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি।
চলতি বছরের মাঝামাঝি টানেল চালু হলে যানবাহনের আধিক্যের ফলে সৃষ্টি যানজটের শঙ্কা থেকেই সড়ক সম্প্রসারণে কাজ শুরু করেছে সড়ক বিভাগ।
সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া ক্রসিং থেকে কেরানিহাট পর্যন্ত ১৮ ফিট প্রশস্তের সড়কটি সম্প্রসারণ করে ৩৪ ফিটে উন্নীত করা হচ্ছে। চার ধাপে চালানো এ কাজে প্রথম ধাপে ক্রসিং থেকে মনসা বাদামতল পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করণের কাজ প্রায় শেষের পথে। যা চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে পুরোপুরি সম্পন্ন হবে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে বাদামতল থেকে কমল মুন্সির হাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করণের কাজ চলমান রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের জুনেই এর কাজ শেষ হবে। অন্যদিকে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত তৃতীয় ধাপের প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু না হলেও আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করতে চায় সড়ক বিভাগ। যা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চায় সরকারি এ দফতর। এছাড়া মৌলভীর দোকান থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত প্রকল্পের চতুর্থ ধাপের দরপত্র আহ্বান করতে সময় লাগবে আরও ৪ থেকে ৫ মাস। সময় মিলিয়ে আগামী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ক্রসিং থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে সড়ক বিভাগের।
২০১৩-১৫ সালে সুইডিশ কনসালট্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের সুপারিশ করা হয়। ওই সময় ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। পরে এটি ‘কন্ট্রোলড-একসেস হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। ফলে কমে যায় মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য। পরে দৈর্ঘ্য ধরা হয় ১৩৬ কিলোমিটার। এজন্য ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়।
ওই নকশায় মহাসড়কটির প্রশস্ততা ধরা হয় ৮২ ফুট। দুই পাশে ধীর গতির যানবাহনের জন্য থাকবে পৃথক লেন। পাশাপাশি ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুটওভার ব্রিজ ও দুটি ফ্লাইওভারের কথা বলা হয়েছে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৩১৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে সরকারকে। পরে আবারও সমীক্ষা চালায় জাপানের কোম্পানি মারুবেনি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে মহাসড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে সরকার। ২০১৯ সালে প্রকল্পটির ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি।
এখানেই শেষ নয়, চার লেনের এ মহাসড়ক নির্মাণে সর্বশেষ সমীক্ষা চালায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ। এ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে করা এ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সওজের দোহাজারী সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বাংলানিউজকে জানান, মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা শেষ হলেও মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে টানেল চালু হলে যানজট তৈরি হবে পারে। তাই পটিয়া ক্রসিং থেকে কেরানিহাট পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ করা হচ্ছে। যা চার ধাপে করা হবে। এর মধ্যে দুই ধাপের কাজ প্রায় শেষ। পরের দুই ধাপের কাজও আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এসময় তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক চার লেন করার বিষয়টি মাথায় রেখে সড়কের চারটি স্থানে ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করছে সওজ। এর মধ্যে চন্দনাইশের বরুমতি খালের ওপর সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পটিয়ার ইন্দ্রপুল, দোহাজারীর শঙ্খ নদী ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর আরও তিনটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এসব ব্রিজ নির্মাণ শেষ হলে পটিয়া থেকে কেরানীহাট ও চকরিয়ায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। জাইকা এসব বাইপাস নির্মাণে অর্থায়ন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এমআর/পিডি/টিসি