চট্টগ্রাম: কাজের মজুরি থেকে কমিশন কেটে রাখা এবং গোসলে পানি বেশি ব্যবহার নিয়ে বিরোধের জেরে একই ঘরে বসবাসরত দুজন মিলে বিদ্যুৎ মিস্ত্রি মো. সালাহ উদ্দিন করেছিল। খুনের সঙ্গে জড়িত আব্দুর রহমান নামে একজনকে গ্রেফতারের পর এ সম্পর্কে জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো।
শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকেলে ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার আব্দুর রহমানের (৩২), সন্দ্বীপ উপজেলার হরিষপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে নগরের খুলশী থানার টাইগারপাস এলাকায় রেলওয়ে কলোনির পরিত্যক্ত ১১ নম্বর ভবনের সামনে ছেনোয়ারা বেগমের টিনশেড তালাবদ্ধ ঘর থেকে মুখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায়
৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে পিবিআই টিম নিহতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়েছিল। সেই ছাপ ব্যবহার করে প্রযুক্তির সহায়তায় বিস্তারিত পরিচয় মেলে। নিহতের নাম মো. সালাহউদ্দিন শেখ, বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। বাড়িতে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, সূত্রবিহীন এই ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। ঘটনাটা একেবারে ক্লুলেস ছিল। আমরা এর আংশিক রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। আরও একজন এ ঘটনায় জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে রহস্য পুরোপুরি উদঘাটন হবে।
গ্রেফতার আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান জানান, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে স্বপন ও আব্দুর রহমান মিলে সালাহউদ্দিনকে ‘উচিৎ শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করে। তারা একটি ধারাল ছোরা কিনেন। মরদেহ উদ্ধারের তিনদিন আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সালাহউদ্দিন বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। আব্দুর রহমান ও স্বপন কিছুক্ষণ লুডু খেলে শুয়ে পড়েন। রাত ১টার দিকে দু’জন ঘুম থেকে উঠে। স্বপন প্রথমে ঘুমন্ত সালাহউদ্দিনের গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আব্দুর রহমান সালাহউদ্দিনের দুই হাত চেপে ধরে। স্বপনের হাত থেকে ছুরি নিয়ে আবার গলায় আঘাত করে আব্দুর রহমান। সালাহউদ্দিন তখন সর্বশক্তি দিয়ে ছুরি কেড়ে নিতে চাইলে হালকা ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় এবং আব্দুর রহমানের হাতের কবজির ওপরে জখম হয়। তবে সালাহউদ্দিন দ্রুত নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায় এবং তার মৃত্যু হয়। তখন আব্দুর রহমান রুমে থাকা গামছা দিয়ে সালাহউদ্দিনের দুই হাত এবং স্বপন দুই পা ওড়না দিয়ে বেঁধে গামছা ও কম্বল দিয়ে লাশের মুখ ঢেকে দেয়। এরপর তারা দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, মেলায় বিদ্যুৎ কাজ সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ডিউটি করলে একজনকে ৭০০-৮০০ টাকা এবং রাত ১২টা পর্যন্ত করলে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা করে দিতেন ঠিকাদার (শ্রমিক সরবরাহকারী)। তবে ঠিকাদারের সঙ্গে শুধুমাত্র সালাহউদ্দিনের যোগাযোগ ছিল। তিনজনের টাকা একা সালাহউদ্দিন নিত এবং পরে ভাগ করে দিত। অন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে স্বপন ও আব্দুর রহমান জানতে পারে, তাদের প্রতিদিনের মজুরি থেকে সালাহউদ্দিন ৪০০ টাকা করে কেটে নিজে রেখে দিত। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়। এরপর বাসায়ও গোসলের পানি বেশি ব্যবহার করতেন সালাহউদ্দিন। তিনজনের কিনে আনা পানি বেশি ব্যবহার নিয়ে তাদের মধ্যে একদিন ঝগড়া হয়। সালাহউদ্দিন দু’জনের মা-বাবা ধরে বেশি গালিগালাজ করেন। সেই ক্ষোভ থেকে দু’জন মিলে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকার ধানমণ্ডিতে আব্দুর রহমানের স্ত্রী বাসায় গৃহকর্মীর করে। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে সালাহউদ্দিনের মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২০ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৩
এমআই/পিডি/টিসি