চট্টগ্রাম: ৬৮ মিটার লম্বা বিশ্বসেরা টার্ন টেবল ল্যাডার (টিটিএল) যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের বহরে। রয়েছে ৬ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ৮৮ দশমিক ৫ ফুট লম্বা স্নুরকেল ল্যাডার, ৫৪ মিটার লম্বা ভিমা ও স্কাই লিফট এবং হাজমত টেন্ডার।
সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের বহরে টিটিএল এবং হাজমত টেন্ডার যুক্ত হয়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, সিইপিজেড, কেইপিজেডসহ বিভিন্ন ভারী শিল্প কারখানা থাকায় সরকার ফায়ার সার্ভিসে কেমিক্যাল, গ্যাস, তেল, বিদ্যুতের আগুন নির্বাপণে সক্ষম ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন করেছে। তাৎক্ষণিক পানি সরবরাহের জন্য ২০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতার একটি ফায়ার ট্রাকও রয়েছে এ বহরে। চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব ফায়ার ট্রাক, টাগবোট এলাকার বড় অগ্নিকাণ্ডে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিদুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ঘটেছে ৩৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, বিড়ি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে ১৬ দশমিক ০৮ শতাংশ, ইলেকট্রিক, গ্যাস ও মাটির চুলা থেকে ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, গ্যাস সরবরাহ লাইনের আগুন ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা থেকে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রেকর্ড করেছে ফায়ার সার্ভিস।
২০২২ সালে চট্টগ্রামে বহুতল আবাসিক, বাণিজ্যিক, হাসপাতাল, শিল্পকারখানা ও অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত ভবন মিলে ৩১৬টি সরকারি ও ১ হাজার ৩৬০টি বেসরকারি ভবন মিলে ১ হাজার ৬৭৬টি ভবন পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে ৬৭৭টি সন্তোষজনক হলেও ৪৪৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৪৬৩টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এক বছরে চট্টগ্রামের বহুতল, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য ভবন এবং বিপণিকেন্দ্রের মধ্যে ৯৭১টি সরকারি ও ১ হাজার ৯১০টি বেসরকারি ভবন মিলে ২ হাজার ৭৪৫টি ভবনে মহড়া এবং ১০৮টি সরকারি ও ২৫৭টি বেসরকারি ভবনে সার্ভে করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক মো, আবদুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানী ঢাকার মতো চট্টগ্রামে ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক সব সরঞ্জাম রয়েছে। জনবল সংকটও শিগগির কেটে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, অগ্নিনির্বাপণের চেয়ে অগ্নিসচেতনতাই জরুরি। সব বহুতল ভবন, শিল্প কারখানা ও বিপণিকেন্দ্রের মালিকদের উচিত বিল্ডিং কোড, গাইড লাইন মেনে চলা। ফায়ার ফাইটিং ইক্যুইপমেন্ট রাখা। আগুন বা ধোঁয়া ডিটেক্টর লাগানো। কর্মীদের দক্ষ করে তোলা। মহড়া পরিচালনা। বিকল্প সিঁড়ি রাখা। তাহলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেমন কমবে তেমনি ঝুঁকিও থাকবে না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের গভর্নর আমিনুল হক বাবু বাংলানিউজকে বলেন, প্রাচীনতম নগর হিসেবে চট্টগ্রামে শতবর্ষী ভবন যেমন আছে, তেমনি ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনও কম নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কাও রয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানা, ভারী শিল্প কারখানা, গ্যাস চুল্লি, ইস্পাতের চুল্লি, কনটেইনার ডিপো, তৈলাধার, সার কারখানাসহ প্রচুর বড় বড় শিল্প কারখানা রয়েছে। বড় বড় জাহাজ রয়েছে কর্ণফুলী নদী ও সাগরের পতেঙ্গা এলাকায়। দেওয়ানহাটে বিভাগীয় যে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন আছে সেটি এখন রিলোকেটেড করার সময় এসেছে। সেটি জেলা স্টেশন হিসেবে রেখে আউটার রিং রোড, জঙ্গল সলিমপুরসহ যেকোনো বড় এলাকা নিয়ে বিভাগীয় ফায়ার স্টেশন করা সময়ের তাগিদ। কারণ বহুতল ভবনের আগুন নেভানোর উপযোগী ফায়ার সার্ভিসের বড় বড় গাড়িগুলো ফ্লাইওভারের কারণে নগরের মূল সড়কে চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে দেশের সব বহুতল ভবন, কারখানার তালিকা, ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শনের তারিখ, নির্দেশনা, ঝুঁকির সম্ভাব্যতা ইত্যাদি সিটিজেন চার্টারের মতো সব ভবনের সামনে এবং অনলাইনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে ভবন ও কারখানা মালিকের দায়বদ্ধতা ও নজরদারি বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি