চট্টগ্রাম: বাংলাদেশি রোজাদারদের প্রিয় ইফতারি ছোলা। প্রতিবছর রমজানে ছোলার দাম থাকে ঊর্ধ্বমুখী।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সরেজমিন দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে- অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মিয়ানমারের ছোলার সরবরাহ ভালো। আকার ও মানভেদে দামে তারতম্য থাকলেও বাজার নিম্নমুখী।
২০২ খাতুনগঞ্জের মেসার্স এমআই ট্রেডিংয়ের আরিফ মোহাম্মদ ফোরকান বাংলানিউজকে বলেন, এবারই প্রথম ভারতের ছোলার সরবরাহ বেশি দেখা যাচ্ছে। মানভেদে পাইকারিতে প্রতিকেজি ভারতের ছোলা ৭৬ টাকা থেকে ৮২ টাকা বিক্রি করছি। অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৭৬ টাকা থেকে ৮০ টাকা। আমাদের কাছে অস্ট্রেলিয়ার সেরা কোয়ালিটির কিছু ছোলা আছে, প্রতিকেজি ৮৬ টাকা।
মা-মণি ট্রেডার্সের মিলন সেন বলেন, খুব সম্ভবত তানজানিয়াসহ কয়েকটি দেশের ছোলা আমদানি করে ভারতের ব্যবসায়ীরা বাছাইয়ের পর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশে রপ্তানি করছে। আমরা ভারতের ছোলা পাইকারিতে প্রতিকেজি ৭৮ থেকে ৮২ টাকা বিক্রি করছি। অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৭৭ টাকা।
সবুজ স্টোরের প্রিয়তোষ চৌধুরীর কাছে বেচাকেনা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে মানুষ ছোলা তোয়াইতু, এহন ছোলায় মানুষ তোয়ার। ’ অর্থাৎ আগে রমজান এলে ক্রেতা ছোলা খুঁজতো, এখন ছোলা ক্রেতাকে খুঁজছে।
তাদের আড়তে ভারতের ছোলা ৭৯-৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার নিম্নমানের ছোলা ৬০ টাকা। ভালোমানের ছোলা ৭৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের সোলায়মান বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, ডলার সংকটে বাংলাদেশে ছোলার বাজারে প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় ভারতের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে ছোলা আমদানি করে রেখেছিল। এখন সেই ছোলা বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে। ফলে বাজারে ছোলার সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতা কম। আবার মানুষের খাদ্যাভ্যাস, ক্রয়ক্ষমতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থায়ও পরিবর্তন এসেছে। ফলে ছোলার ক্রেতা কম। তাই দামও কমছে। মিয়ানমারের ছোলা প্রথম ধাক্কায় কিছু ঢুকেছে খাতুনগঞ্জে। তবে দাম বেশি হওয়ায় সুবিধা করতে পারছে না এবার।
তিনি বলেন, একসময় খাতুনগঞ্জ থেকে সারা দেশে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ দেওয়া হতো। এখন ব্যবসা সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ছোলা সারা দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই অস্ট্রেলিয়া থেকে খাতুনগঞ্জের ছোলা আমদানিকারকরা লোকসান দিচ্ছেন। আশার কথা হচ্ছে রমজান ছাড়াও ছোলা সারা বছর চলে। অনেক পরিবারে নাশতায় ছোলা খাওয়া হয়। ছোট ছোট চা দোকানিরা ছোলা ভাজা বিক্রি করেন। মেজবানিতেও ছোলার ডাল বেশ জনপ্রিয়।
ছোলাসহ ভোগ্যপণ্যের বড় আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর বাংলানিউজকে বলেন, ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে প্রচুর ছোলা এসেছে। তানজানিয়ার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। ফলে ভারত তানজানিয়ার ছোলা, নিজেদের উৎপাদিত ছোলা বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অস্ট্রেলিয়া থেকে যে ছোলা আমদানি করেছিল তাতে লোকসান দিতে হচ্ছে। কারণ অস্ট্রেলিয়া থেকে ছোলার দাম ও জাহাজভাড়া বেশি হওয়ায় পড়তা বেশি পড়েছে।
মোমিন রোডের হক স্টোর। খুচরা ক্রেতাদের জন্য অনেক বড় দোকান। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেলে এ দোকানের বিক্রয়কর্মীরা জানান, অস্ট্রেলিয়ার ছোলা প্রতিকেজি ৯০-৯৫ টাকা এবং পাকিস্তানি সাদা কাবলি ছোলা ২৮০ টাকা বিক্রি করছেন।
বকশিরহাট-খাতুনগঞ্জের বিখ্যাত পীতাম্বর শাহ নামের দোকানটিতে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
এআর/টিসি