চট্টগ্রাম: ফরিদা বেগম। বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২২ মার্চ) বোয়ালখালীকে শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। ওইদিন চতুর্থ পর্যায়ে নির্মিত জমিসহ ঘর বিতরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
৫৩টি পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হবে ওইদিন। তাদেরই একজন ফরিদা বেগম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিয়ের পর স্বামী চলে যান। তিনি বরিশালের মানুষ ছিলেন। তখন আমি ৫ মাসে অন্তঃস্বত্ত্বা। ঘরহারা, স্বামীহারা মেয়ে মানুষকে কে ঠাঁই দেয় ? অনেক কস্ট করেছি ছেলেকে নিয়ে জীবনে। আজ ঘর পেয়েছি, জায়গা পেয়েছি। ছেলেও সংসারী। আমার নাতি-নাতনিদের নিয়েই সময় কাটে।
জাগা গেছে, বোয়ালখালীতে ৪টি পর্যায়ে ১৬০টি জমিসহ ঘর গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে প্রদান করা হয়েছে। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে ২০টি, ২য় পর্যায়ে ২০টি, ৩য় পর্যায়ে ৬০টি ঘর দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ৪র্থ পর্যায়ে ৫৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে ৭টি উপকারভোগীদের দেওয়া হয়েছে। ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ, পানি ও সেনিটারি সুবিধা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুজন কান্তি দাশ নতুন নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন।
সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য সেবা, চাষাবাদ, শিক্ষাসহ সবধরণের সহযোগিতা পাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরহারা মানুষের মুখে অনাবিল হাসি ফুটিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। আশ্রয়ণে জমিসহ পাকা ঘরের মালিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ সবধরনের সহায়তা এবং পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, চতুর্থ পর্যায়ে নির্মিত ঘর বিতরণের মাধ্যমে এই উপজেলাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনমুক্ত ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন। এইদিন ৫৩টি পরিবার জমিসহ ঘর পাবেন। এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর জীবনমান এখন বদলে গেছে ঘর পেয়ে। এক সময় যাঁদের ছিলো না কোনো নিজস্ব ঠিকানা। এ বাড়ি ও বাড়িতে ঠাঁই নিতেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারে বাসস্থানসহ সরকারি সুযোগ সুবিধার ফলে অন্ধকারে পেয়েছেন আলোর দিশা। ফিরে পেয়েছেন আর্থিক স্বচ্ছলতা। প্রতিটি ঘরসহ জায়গা মহিলা ও পুরুষের নামে রেজিষ্ট্রী করে দেওয়া হয়েছে।
জৈষ্ঠ্যপুরা ফতেয়ারখীল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাচ্ছেন জয়নাব বেগম। তিনি বলেন, নিজের বাড়ি হবে কোনোদিন ভাবিনি। বিয়ের পর ছেলে বাপ বিদেশে চলে যান। আমাদের খোঁজ খবর নেইনি। অনেক কষ্ট করে মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবন চালিয়েছি। ছেলে বড় করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে জায়গা ও বাড়ি দিয়েছেন। তাঁর জন্য দোয়া করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
বিই/পিডি/টিসি