চট্টগ্রাম: নগরে হঠাৎ করে বেড়েছে মোটরসাইকেল চুরি। গত তিন মাসে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ১৬ থানা এলাকায় ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে মোটরসাইকেল চুরির সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১৬ থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে ১২১টি। ২০২১ সালে চুরি হয়েছিল ৭২টি।
গত ১৫ মার্চ রাতে নগরের জামালখান এলাকার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার ম. শামসুল ইসলামের মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে কোতোয়ালী থানায় যোগাযোগ করেন। পরদিন এই মোটরসাইকেল চুরির মামলাও করেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও ৫ দিনেও সেটির হদিস পাওয়া যায়নি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের প্রধান গেইট সংলগ্ন মসজিদের প্রবেশ মুখে রাখা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীমের মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। তিনিও কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। এরপর উদ্ধার তৎপরতা আর এগোয়নি।
সাংবাদিক ম. শামসুল ইসলাম জানান, ‘পুলিশের যে সক্ষমতা রয়েছে, সেটা নিয়ে আমার প্রশ্ন নেই। এখানে অভাব আন্তরিকতার। আমার মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তাদের পরামর্শে মামলা করেছি। পুলিশ চাইলে মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করতে পারে’।
খোরশেদুল আলম শামীম বাংলানিউজকে বলেন, মামলা রেকর্ড হওয়ার একদিন পর তদন্ত কর্মকর্তা যোগাযোগ করেছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। স্টেডিয়ামের সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় পাশের একটি রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ক্যামেরায় চোরকে দেখা গেছে। পরে যোগাযোগ করা হলে দুইজন সাক্ষীকে নিয়ে থানায় যেতে বলা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, চোর চক্র কয়েকটি ধাপে বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে। প্রথমে তাদের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন এলাকায় রেকি করে বেড়ায়। এ সময় তারা সহজে চুরি করা যায় এমন সব বাড়িকে টার্গেট করে। প্রথম দল তথ্য সংগ্রহ করে দ্বিতীয় দলকে জানায়। পরে তারা গভীর রাতে বা ভোরে টার্গেট করা বাসা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছিলেন নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এদের হেফাজত থেকে ৭টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছিলেন।
সিএমপি উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোখলেসুর রহমান বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে- নগরের বিভিন্ন এলাকা ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে কীভাবে মোটরসাইকেল চুরি করে তার বিস্তারিত কাহিনি। মোটরসাইকেল চুরি করতে চক্রের দুইজন সদস্য স্পটে থাকে। একজনের কাজ হচ্ছে মোটরসাইকেল মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য করা, অন্যজন মোটরসাইকেলটি কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করে। ৪৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মধ্যে মাস্টার চাবি দিয়ে লক ভেঙে মোটরসাইকেল চালু করে ফেলতে পারে তারা। সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে সরাসরি মেকানিকের কাছে গিয়ে তারা বিক্রি করতো।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ কোনও স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেলে তা শনাক্ত করতে ভিডিও ফুটেজ বা প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য সংগ্রহ করার জন্য নির্ভর করতে হয় ম্যানুয়েল পদ্ধতির ওপর। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রত্যেক থানায় যাবতীয় তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয় এবং সোর্সকে জানানো হয়। এসব সোর্স কখনও কাজে আসে, কখনও আসে না। আবার পেশাদার মোটরসাইকেল চোররা চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর এবং নিবন্ধন নম্বর বদলে দেয়। ফলে হারানো মোটরসাইকেল খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
সিএমপি’র গোয়েন্দা (বন্দর ও পশ্চিম) বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আলী হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মোটরসাইকেল চোর চক্রের কয়েকটি গ্রুপ শনাক্ত করা হয়েছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে ফলাফল জানানো যাবে। মোটরসাইকেল চুরি করে তারা দূরে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়, যার কারণে মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোরকে গ্রেফতার করতে সময় লাগে।
তিনি আরও জানান, নতুন নতুন মোটরসাইকেল চোর চক্র সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে পুনরায় মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। মোটরসাইকেল রাখার সময় সতর্ক থাকতে হবে। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সম্বলিত ‘লক’ ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
এমআই/টিসি