চট্টগ্রাম: পানির সংকট একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এ সংকট।
অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এখন থেকে বিকল্প সমাধানের ব্যবস্থা করা না হলে ভবিষ্যতে নগরবাসীকে আরও ভুগতে হবে বলে আশঙ্কা তাদের।
তথ্যানুযায়ী, নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে ওয়াসা। যা গত ১০ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। একে একে ৩টি পানি শোধনাগার স্থাপন করে ওয়াসা। যার মধ্যে দুটি হালদায় ও একটি কর্ণফুলী নদী নির্ভর। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ কর্ণফুলী নির্ভর এবং শেখ রাসেল পানি শোধনাগার ও মোহরা পানি শোধনাগার হালদা নির্ভর। শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে নগরের চাহিদার ৫০ শতাংশ পানি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ এর মাধ্যমে ৩৮ শতাংশ এবং ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে বাকি ১২ শতাংশ পানির চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে কর্ণফুলী ও হালদার পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় পরিশোধন করার পরও লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে পানি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে ওয়াসা।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি কম নির্গমনের কারণে পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। তবে প্রকল্প শুরুর আগে সমীক্ষা কার্যক্রম যথাযথ না হওয়ায় ৬-৭ বছরের মাথায় নগরবাসীকে এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে মনে করেন পানি নিয়ে গবেষণা করা বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, পানি শোধনাগার নির্মাণের আগে সমীক্ষা কার্যক্রমে অবশ্যই এসব বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত ছিল। যেহেতু হালদা কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নির্ভর, সুতরাং যদি কোনো কারণে হ্রদের পানি কমে যায় স্বাভাবিকভাবেই হালদায় লবণাক্ততা বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে কি করণীয় তা সমীক্ষায় উঠে আসা দরকার ছিল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দিদারুল আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সমুদ্রের পানি নদীতে উঠে আসার কারণে পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে ওয়াসার পানিতে কিছু লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াসার পানি শোধনাগারগুলো পানি পরিশোধন করছে মাত্র। কিন্তু লবণাক্ততা কমাতে ‘রিভার্স অসমোসিস’ নামে আলাদা পদ্ধতি রয়েছে। যার মাধ্যমে খাবার পানি শতভাগ লবণমুক্ত করা যায়। এতে খরচ বেশি। প্রতি লিটার পানি রিভার্স অসমোসিস করতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা খরচ পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পানিতে অপ্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ থাকে না, তাই এই পানি পান করলে কিডনির ওপর চাপ অনেকাংশে কমে যায়। এই প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের তাপ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না এবং তাপ প্রয়োগ ব্যতীত পানি শতভাগ বিশুদ্ধ হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
হালদা থেকে বেশি পানি উত্তোলন কিংবা প্রকল্প নেওয়ার আগে সমীক্ষাগত ত্রুটি আছে কি-না জানতে চাইলে অধ্যাপক দিদারুল আলম বলেন, যেহেতু সমীক্ষা প্রতিবেদন আমি দেখিনি সেক্ষেত্রে সমীক্ষাগত ত্রুটি আছে কিনা তা বলার সুযোগ নেই। তবে এটাও সত্যি যে, প্রকল্প শেষ হওয়ার ১০-২০ বছর পরে কি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করে সমীক্ষা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে পানির লবণাক্ততা পরিশোধন করতে শোধনাগারগুলোতে ব্যবস্থা রাখা যেত।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক সামিউন বাসির বাংলানিউজকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে সুপেয় পানির পরিমাণ কমে যাওয়া কিংবা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া একটি কারণ। যা আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। আমাদের বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি হলে হয়তো এ সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু দুই-তিন মাস যে নগরবাসী পানির সমস্যায় ভুগবে তা থেকে পরিত্রাণে একটি যুগোপযোগী সমাধান দরকার।
পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বুধবারও (২২ মার্চ) পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। লুসাই পাহাড় থেকে প্রচুর বৃষ্টির পানি না নামলে লবণাক্ততা কমবে না। আমরা এমনিতেই জোয়ারের সময়ের পানি সংগ্রহ করি না। এখন ভাটার পানিতেও কয়েক গুণ বেশি লবণের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যথাসম্ভব অন্যান্য পানি শোধনাগারের পানি ব্লেন্ডিং করে লবণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে এনে সরবরাহ করার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
এমআর/টিসি