চট্টগ্রাম: একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুদ্ধাপরাধীর নামে, অন্যটি শান্তি রক্ষা কমিটির প্রধানের নামে। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের কক্ষে টাঙানো থাকতো স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিষ্ঠাতার ছবি।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী ও কলেজ পরিদর্শক মো. জাহেদুল হক কর্তৃক স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
যুদ্ধাপরাধীর নামে স্কুল, পরিবর্তন করে নতুন নাম
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার রহিমপুরের ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ফাতেমা জব্বার চৌধুরী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। নতুন নামটিও কোনও যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা তাও যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। এছাড়া নামকরণের বিধি মোতাবেক ৩০ লাখ টাকা জমাদানের রশিদ, ফাতেমা জব্বার চৌধুরীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তি পরিচয় এবং পূর্বে প্রতিষ্ঠানটি যার নামে নামকরণকৃত ছিল- তার সঙ্গে সম্পর্ক উল্লেখসহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ওয়ারিশ সনদ পাঁচদিনের মধ্যে বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে জমা দিতে বলা হয়।
শান্তি কমিটির প্রধানের নামে স্কুল, পরিবর্তন করার নির্দেশ
নগরের বন্দর এলাকার মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে যৌক্তিক নাম দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শান্তি কমিটির প্রধান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা আসে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পতেঙ্গা থানা কমান্ড ইউনিট ও চট্টগ্রাম স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের আবেদন এবং বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষে প্রাপ্ত তথ্য ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায়, মাহমুদুন্নবী চৌধুরী শান্তি কমিটির প্রধান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাই মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে বিদ্যালয়টির উক্ত নাম বাদ দিয়ে সাত দিনের মধ্যে যৌক্তিক নাম প্রস্তাব করার জন্য বলা হলো।
অধ্যক্ষের কক্ষে স্বাধীনতাবিরোধীর ছবি সরানোর নির্দেশ
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার খৈয়ারবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিষ্ঠাতার ছবি রাখা হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ছবি সরানোর জন্য চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এছাড়াও ফোন করে সে ছবি সরানোর জন্য বলেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক। কিন্তু এর পরেও এ ছবি না সরানোয় ৭ দিনের মধ্যে কেন ছবিটি সরানো হয়নি তার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তির ছবি অপসারণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
অন্যদিক চকরিয়া সরকারি কলেজে দাতা প্রতিষ্ঠাতার নামে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের ছবি টাঙানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। চকরিয়া কলেজের অধ্যক্ষকে সে ছবি সরানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীন যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে আমরা ইতিমধ্যে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নামকরণ থাকলে তা পরিবর্তন করে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুনের করা রিট পিটিশন আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং হাইকোর্টের রায়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৩
বিই/টিসি